বেশি আঁচে
সতে করা মাছের পদের সঙ্গে রোস্টেড বা এয়ার ফ্রায়ারে ভাজা মাছ আর ভাপা মাছের স্বাদে
যে তফাত হবে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু শরীরের জন্য
কোনটা ভাল? পুষ্টিবিদ ডা. অনন্যা ভৌমিক বলছেন, “মাছ, মাংস বা আনাজপাতি ঠিক কী ভাবে রান্না
করলে তার পুষ্টিগুণ বজায় থাকে, সেটাই বিবেচ্য।”
-
কাঁচা বা জলে ভিজিয়ে: এ ভাবে খেলে
ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের
মাত্রা ঠিক থাকে। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, “লেবুর মতো
ভিটামিন-সি যুক্ত ফল ও আনাজ কাঁচা খাওয়া ভাল।” এতে খাবারে
অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টসের কার্যকারিতা কমে, হজমের সমস্যাও কমে। জলে ভিজিয়ে চিঁড়ে, ওটস, বিভিন্ন শস্য, ডাল, বিনস, বাদাম ইত্যাদি
খেতে পারেন।
-
সিদ্ধ বা ভাপা: ব্রকোলি, পালং শাকের মতো
আনাজপাতি, মাছ
ও সি-ফুড ভাপিয়ে খেলে তাতে থাকা ফাইবার, মিনারেলস, ভিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স
নষ্ট হয় না। যে ভিটামিন জলে দ্রবীভূত হয়, তা-ও স্টু, সুপ বা ঝোল
হিসেবে খাওয়া সম্ভব। ডুবো তেলে মাছ ভেজে খাওয়ার চেয়ে তা ভাপিয়ে নেওয়া ভাল।
চাল, আলু, ডিমের মতো খাবার
পুরো সিদ্ধ করতে হবে। আবার শাক-পাতা, মাশরুম, লেবু-টোম্যাটো জাতীয় খাবার স্টিম করলে
ভিটামিন নষ্ট হয়।
-
ফারমেন্টেড: প্রোবায়োটিকস
বজায় থাকে খাবারে যা হজম শক্তি, ইমিউন সিস্টেম ভাল করে। তবে এ ক্ষেত্রে
ব্যবহৃত আনাজ অর্গ্যানিক না হলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
-
রোস্ট, বেক
বা গ্রিল: এতে খাবারে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিনস ও খনিজ বজায়
থাকলেও উচ্চ তাপে রাঁধায় কিছু ভিটামিনস ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস নষ্ট হয়। রেড মিট বা
অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার রোস্ট, বেক বা গ্রিল করলে তাপের সংস্পর্শে তাতে
ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হতে পারে। পনির, টোফু, চিকেন এ ভাবে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
-
এয়ার ফ্রাই: তেল কম লাগে, খাবারে ক্যালোরি
কম থাকে। তবে এয়ার ফ্রায়ারে ভুল নিয়মে রান্না করলে খাবারে ক্ষতিকর ফ্যাটের
মাত্রা বেড়ে যায়। তা ছাড়া, এতে খাবার সব দিক থেকে সমান মাত্রায় তাপ
না পাওয়ায়, পুষ্টিগুণ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত খাবার এয়ার ফ্রায়ারে
রান্না না করাই ভাল।
-
মাইক্রোওয়েভ: এই পদ্ধতিতে
রাঁধলে সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস বেশি বজায় থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে বাসন
নিয়ে সতর্ক না হলে তা থেকে খাবারে রাসায়নিক মিশতে পারে। ডিম ও শাকজাতীয়
খাবারের পুষ্টিগুণ মাইক্রোওয়েভে নষ্ট হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত নুন ও
ফ্যাট থাকায়, এই
মোডে তা রান্না বা গরম করা উচিত না।
-
স্লো-কুক: কম
তাপে সময় নিয়ে রান্না করলে খাবারে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস এবং
ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যথাযথ মাত্রায় বজায় থাকে। অস্থিসন্ধি এবং অন্ত্রের
স্বাস্থ্যের জন্য তা ভাল। রেড মিট, ডাল, ভাত এ ভাবে রাঁধা যায়। দুধ জাতীয় খাবার, মাশরুম ও
পাতাযুক্ত সবজি, মাছ
ইত্যাদি স্লো-কুক না করাই ভাল।
-
সতে: মাঝারি আঁচে অল্প তেলে স্টার ফ্রাই করলে
স্নেহে দ্রাব্য ভিটামিন (এ, ডি, ই, কে) এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ভাল ভাবে
শোষিত হয়। টোফু, চিকেন, চিংড়ি, রংবেরঙের আনাজ
(সবুজ শাকসবজি বাদে) সতে করতে পারেন। তবে সস মেশানোর পরে সতে করা ক্ষতিকর।
সতে-র রান্নায় বাদাম, বীজ
এ সব ব্যবহার করবেন না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)