Musical Village of Mali

৭৫ প্রজন্ম ধরে সবাই সঙ্গীতকার, আফ্রিকার দুঃস্থ গ্রামে পেট খালি থাকলেও সুরের খামতি নেই

কিরিনায় প্রায় ২,০০০ জন মানুষের বাস। তাঁদের বেশির ভাগই পেশায় কৃষক। তাঁরা লাঙল চালান আর গান করেন। দুঃস্থ গ্রামে রয়েছে লক্ষ কোটি, অথবা অগুন্তি সুর। কারণ ৭৫টি প্রজন্ম ধরে সে গ্রামের সকলেই সঙ্গীতচর্চা করেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ১৮:৩৫
Kirina, the Musical Village of Mali holds 75 generations of musical and cultural heritage

আট থেকে আশি, কিরিনায় সবাই সঙ্গীতশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত।

কিরিনা। রুক্ষ, শুষ্ক গ্রাম। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। বাসিন্দাদের পরনে জীর্ণ কাপড়। বিলাসিতা কাকে বলে, জানে না অধিকাংশই। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে অন্যতম পশ্চিম আফ্রিকার মালি। তারই দক্ষিণে এই গ্রামটি। বৃহত্তর বিশ্বে অপরিচিতই বলা যায়। কারও কাছে 'অপ্রয়োজনী'য়ও বটে। আর তাই হয়তো অন্তর্জালে কিরিনা সম্পর্কে তথ্যও খুবই কম। কিন্তু সেই দুঃস্থ গ্রামে রয়েছে লক্ষ কোটি, অথবা অগুন্তি সুর। কারণ, ৭৫টি প্রজন্ম ধরে সে গ্রামের সকলেই সঙ্গীতচর্চা করেন। আট থেকে আশি, সবাই সঙ্গীতশিল্পী। সে গ্রামের স্থানীয়দের অনেকেই গ্রিয়ট জাতির। পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশে মৌখিক ইতিহাসের ঐতিহ্য বজায় রাখত এক যাযাবর জাতি, যাঁদের গ্রিয়ট বলা হয়। তাঁরা কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, গল্পকার। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই গ্রামের গ্রিয়ট বাসিন্দারা আফ্রিকার গল্প মুখে মুখে বয়ে বেড়াতেন। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এই সাংস্কৃতিক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে কিরিনায়, যেখানে পেট খালি থাকলেও সুরের অভাব হয়নি কখনও।

Advertisement
Kirina, the Musical Village of Mali holds 75 generations of musical and cultural heritage

ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এই সাংস্কৃতিক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে কিরিনায়। ছবি: সংগৃহীত।

কিরিনায় প্রায় ২,০০০ জন মানুষের বাস। তাঁদের বেশির ভাগই পেশায় কৃষক। তাঁরা লাঙল চালান আর গান করেন। সঙ্গীত বলতে কেবল গান নয়, নানাবিধ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে বাজানো, নৃত্য, ইত্যাদির সংমিশ্রণে চর্চা চলে। পশ্চিম আফ্রিকায় ‘কোরা’ নামক তারের যন্ত্রের খুব গুরুত্ব। মালি দেশের গানের জগতে কোরার প্রাধান্য বিপুল। মোট ২১টি তার থাকে কোরায়। এ ছাড়াও কাঠ দিয়ে বানানো জ়াইলোফোন বাজানো হয় সেখানে, নাম বালা। রয়েছে ঢাক, ধামসার মতো তালবাদ্যও। জেম্বে, বাটা, দুনুন, ইত্যাদি আরও যে কত ধরন তাদের, তার ইয়ত্তা নেই।

Kirina, the Musical Village of Mali holds 75 generations of musical and cultural heritage

৭৫টি প্রজন্ম ধরে সে গ্রামের সকলেই সঙ্গীতচর্চা করেন। ছবি: সংগৃহীত।

২০১০ সালে এই গ্রামে ‘ইকোল দে মিউজ়িক দে কিরিনা’ নামে একটি গানের স্কুল খুলেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেটির দৌলতেই কিরিনা সম্পর্কে যৎসামান্য তথ্য পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। তাতেই এ কথা স্পষ্ট, যে সাংস্কৃতিক সম্পদ রয়েছে কিরিনায়, তা আর কোথাও মেলা ভার। সেই স্কুল থেকে তৈরি হয়েছে একাধিক গানের দল। যাঁরা দেশের বাইরে বেরিয়ে গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এই স্কুলটি তরুণ সঙ্গীতশিল্পীদের শিক্ষা এবং সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। গ্রামের সঙ্গীত ঐতিহ্য বজায় রাখতে বড়সড় ভূমিকা পালন করছে এই স্কুলটি। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ১৫টি সঙ্গীত অনুষ্ঠানের একটি কিরিনায় আয়োজিত হয়। তা ছাড়া স্কুলের প্রাঙ্গণে রেকর্ড করার স্টুডিয়ো বানানো হয়েছে। রয়েছে নাচ করার মস্ত ঘর। পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগাল দেশের সঙ্গীতশিল্পী বাবা মাল, যিনি আজ গোটা বিশ্বে সমাদৃত, তিনিও কিরিনায় গিয়ে সকলের গান রেকর্ড করেছেন। কেবল কিরিনা নয়, গোটা মালি দেশের নামোজ্জ্বল করেছেন কয়েক জন সঙ্গীতকার। যাঁদের নাম আজ বিশ্বসঙ্গীত চর্চাকারীদের মুখে মুখে শোনা যায়। আলি ফার্কে তুর, ফাতোউমাতা দিয়াওয়ারা, সালিফ কেইতা, ওউমোউ সাঙ্গারে, আমিনাতা কামিসোকো প্রমুখ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

Kirina, the Musical Village of Mali holds 75 generations of musical and cultural heritage

২০১০ সালে এই গ্রামে ‘ইকোল দে মিউজ়িক দে কিরিনা’ নামে একটি গানের স্কুল খুলেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ছবি: সংগৃহীত।

Advertisement
আরও পড়ুন