Mahua Moitra Marriage

হাওয়া বদলের বার্তা দিচ্ছে মহুয়া মৈত্রের বিয়ে! বেশি বয়সে বিয়ে দেখতে খানিক স্বচ্ছন্দ হল কি সমাজ?

বিয়ে করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। স্বামী পিনাকী মিশ্রের বয়স ৬৫। সময়ের সঙ্গে বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের হার বেড়েছে। সেই ভিড়ে তারকাদের মতো সাধারণেরাও রয়েছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ২০:১৬
Mahua Moitra’s wedding with Pinaki Misra marks the rising trend marriage among elderly people

সাতপাকে বাঁধা পড়লেন পিনাকী মিশ্র এবং মহুয়া মৈত্র। —নিজস্ব চিত্র।

একটা সময়ে পরিবারে ‘বিবাহযোগ্য’ পাত্র বা পাত্রী থাকলে, বাড়ির বড়দের তরফে শব্দবাণ ছুটে আসত— বিয়ের বয়স পেরোতে বসল যে! কিন্তু বিয়ে কি আর বয়সের গণ্ডির মধ্যে আটকে রয়েছে? অন্তত রাজ্যে সাম্প্রতিক কয়েক জন তারকার বিয়ের উদাহরণ এই প্রশ্নকেই নতুন করে উত্থাপন করেছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। পাত্র পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্র। মহুয়ার বয়স এখন ৫১, পিনাকীর ৬৫। চলতি বছরেই এপ্রিলে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাত্রী তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু তথা বিজেপি কর্মী রিঙ্কু মজুমদার। দিলীপ বিয়ে করেন ৬১ বছর বয়সে।

উদাহরণ আরও রয়েছে। কয়েক বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক। বলিউডে মিলিন্দ সোমন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৫৩ বছর বয়সে। পাত্রী অঙ্কিতা কোনারের সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য ২৬ বছর, সেই সময়ে অনেকেরই নজর কাড়ে। দীর্ঘদিন একত্রবাসের পর আইনি মতে বিয়ে সারেন বর্ষীয়ান অভিনেতা দীপঙ্কর দে এবং দোলন রায়। ২০২৩ সালে অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী এবং রুপালি বড়ুয়ার বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর চারিদিকে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ, আশিস বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ৫৭ বছর বয়সে। বেশি বয়সে বিয়ে করায়, দম্পতিকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে একের পর এক কটাক্ষ ধেয়ে আসে। তবে লক্ষ্যণীয়, সময়ের সঙ্গে বয়স্কদের বিয়ের ক্ষেত্রে ‘কটাক্ষ’-এর প্রবণতা কমছে। রাজনীতির ময়দানে ‘রগড়ে’ দেওয়ার ভয় দেখালেও তাঁর বিয়ের খবরে ট্রোলিংয়ের তুলনায় নেটাগরিকদের ভালবাসাই বেশি পেয়েছিলেন দিলীপ। সময়ের সঙ্গে সমাজের ‘কটাক্ষ’কেও মেনে নিতে রাজি নন অনেকেই। আশিস যেমন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সেই পরস্থিতিতে ভগবান বুদ্ধের বাণী তাঁর মনোবল বৃদ্ধি করেছিল। আশিসের কথায়, ‘‘কারও যদি শেষ জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজন হয়, কেউ যদি পরিবার তৈরি করতে চায়, তাতে তো কোনও ক্ষতি নেই!’’

Mahua Moitra’s wedding with Pinaki Misra marks the rising trend marriage among elderly people

বিয়ের পর (বাঁ দিকে) রুপালি বড়ুয়া এবং আশিস বিদ্যার্থী। ছবি: সংগৃহীত।

বেশি বয়সে বিয়ের ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে, বিয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের ধরনও। দিলীপ যেমন তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে ঘরোয়া পরিসরে বিয়ে করেছিলেন। পাত্র নয়, বরং পাত্রী রিঙ্কু এসেছিলেন বিয়ে করতে। মহুয়া সেখানে হেঁটেছেন ভিন্‌ দেশে বিয়ের পথে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুদূর জার্মানির বার্লিন শহরের এক রাজপ্রাসাদে তাঁর সঙ্গে পিনাকীর চার হাত এক হয়েছে। বিয়ে যেমন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, তেমন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই এখন আর পরিবারের উপর নির্ভর করছেন না। বয়স বেশি হলে তাই পরিবারের পরিবর্তে নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন সঙ্গীটির উপরে।

সমীক্ষা বলছে, ভারতে গত ১০ বছরে বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের হার বেড়েছে। নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। সমাজে এখন বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়েছে। বিষয়টিকে এখন আর সে ভাবে ‘ছোট’ নজরে দেখা হয় না। একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই কেরিয়ার তৈরিতে মন দিচ্ছেন। তার পর চলার পথে সঙ্গীর প্রয়োজন হলে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্পর্ক এবং সেখান থেকে বিয়ের সিদ্ধান্তে সিলমোহর।

জেনারেশন আলফাদের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতে এখন যুবক যুবতীদের বিয়ের গড় বয়স পিছিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। এক দিকে আছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে কেরিয়ার তৈরির স্বপ্ন। উচ্চশিক্ষার পরে চাকরি বা ব্যবসায় পায়ের নীচের জমি শক্ত না হলে বিয়ের মতো ‘গুরু দায়িত্ব’ কাঁধে নিতে চাইছেন না অনেকেই। অন্য দিকে, নারী ক্ষমতায়ন সমাজের মহিলাদের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে। অনেকেই এখন বিয়ে না করে বরং একত্রবাসের পথে হাঁটছেন। জল মেপে সমীকরণ সমতা এলে বিয়ে, অন্যথায় বিচ্ছেদ। সব মিলিয়ে বিয়ের সময় এবং সিদ্ধান্ত নিতেও অনেকটাই সময় কেটে যাচ্ছে।

Mahua Moitra’s wedding with Pinaki Misra marks the rising trend marriage among elderly people

বিয়ের পর দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।

একটা সময় ছিল, পরিবার এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু এখন সমাজ ‘সিঙ্গল মাদার’-এর প্রতি সহনশীল। বেশি বয়সে বিয়ে করলে প্রয়োজনে অনেকেই সন্তান দত্তকের পথে হাঁটছেন। আবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তার পর নতুন দাম্পত্যে প্রথম পক্ষের সন্তানকেও অন্যজন সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন, এ রকম উদাহরণ তো আশেপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

অনেকের মতে, বয়স্কদের একাংশের ক্ষেত্রেই জীবনের অর্ধেক কেটে যায় অন্যের চিন্তা এবং দায়িত্ব পালনে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কর্তব্য শেষে নিজের কথা ভাবতে শুরু করেন তাঁরা। দীর্ঘদিন লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশে দৌড়ে তাঁরা যখন ক্লান্ত, তখন প্রয়োজন হয় কারও এগিয়ে এসে হাত ধরার। বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিও হয়তো একই প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে আসেন। ফলে মধুরেণ সমাপয়েত।

কয়েক বছর আগেও সংবাদপত্রে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে বয়স্কদের বিয়ের ‘ইচ্ছাপ্রকাশ’কে ঘিরে ঠাট্টা মশকরা চলতেই থাকত। সমাজমাধ্যমে এখনও সে রকম কিছু বিজ্ঞাপনের ছবি ঘুরতে থাকে, যেখানে বর্ষীয়ান ব্যক্তিটি বিয়ের ক্ষেত্রে দাবি দাওয়াহীন, বরং সেখানে কারও সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলি আনন্দে কাটানোর সরল ইচ্ছাপ্রকাশ গুরুত্ব পায়। সেই ইচ্ছাকে সময়ের সঙ্গে সমাজ যেমন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তেমন তারকাদের দেখে, সে সব উদাহরণ থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অন্যেরা। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে না।

Advertisement
আরও পড়ুন