Family Meal Time

নৈশভোজের সময় পরিবারের সকলের উপস্থিতি কেন কাম্য? উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বচ্চনেরা

কল্পনা করুন, এক টেবিলে বসে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, শ্বেতা বচ্চন এবং তাঁদের সন্তানেরা। খেতে খেতে কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেখানে? ফাঁস করলেন অমিতাভের নাতনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:০৫
খাবার টেবিলে বচ্চন পরিবারের প্রথা।

খাবার টেবিলে বচ্চন পরিবারের প্রথা। ছবি: সংগৃহীত।

আপনি কি একা খেতে বসেন? টেবিল থেকে খাবার ঘরে নিয়ে যান? না কি দিনের একটি বেলা পরিবারের সঙ্গে বসে খাবার খান? খেতে খেতে কি গল্প করেন? গল্প করতে করতে কি হাত ধুতেও ভুলে যান? কী বিষয়ে আলোচনা করেন? ঝগড়া হয়, না কি সমাজ-রাজনীতি নিয়ে তর্ক হয়? এক এক পরিবারের এক একটি দৃশ্য। কিন্তু দেশের প্রভাবশালী, নামজাদা পরিবারে কী ঘটে? তারকাদের নিয়ে সাধারণের মনে এমন প্রশ্ন হামেশাই জাগে। তারই উত্তর দিলেন বচ্চন পরিবারের কন্যা নব্যা নভেলী নন্দা।

Advertisement

কল্পনা করুন, এক টেবিলে বসে আছেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, শ্বেতা বচ্চন এবং তাঁদের সন্তানেরা। খেতে খেতে কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেখানে? ফাঁস করলেন অমিতাভের নাতনি। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে রাতের খাওয়ার টেবিলের চরিত্র বেশ প্রাণবন্ত। সেখানে রাজনীতি থেকে সিনেমা— সব বিষয়েই কথা হয়। সবাই নিজেদের মতামত খোলাখুলি ভাবে জানান।’’ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই নিয়মিত ভাবে একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করেন, যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন। সকলেই হয়তো ভাবেন, বচ্চন পরিবার একসঙ্গে খেতে বসে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে না বলেই জানালেন নব্যা। তবে বাড়ির সকলেই যেহেতু সমাজ-রাজনীতি নিয়ে সচেতন, সকলেরই যেহেতু দৃঢ় মতামত রয়েছে, তাই স্বাস্থ্যকর আলোচনায় স্বাস্থ্যকর তর্কাতর্কি হয়েই থাকে।

পরিবারের সকলে একসঙ্গে খাবার খাওয়ার গুরুত্ব কী?

পরিবারের সকলে একসঙ্গে খাবার খাওয়ার গুরুত্ব কী? ছবি: সংগৃহীত।

এই ঘটনাই মনে করায়, একসঙ্গে বসে খাওয়ার অভ্যাস মানসিক সুস্থতা বাড়ায়, সম্পর্ক ভাল রাখে এবং পারস্পরিক সংযোগ আরও দৃঢ় করে। আজকের ব্যস্ত জীবনে এই এক বেলা একসঙ্গে খাওয়া খুব দরকার। কিন্তু কী ধরনের আলোচনা করা উচিত, সে বিষয়ে কি সতর্কতা প্রয়োজন? মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘দুপুরে যদি সম্ভব না-ও হয়, রাতের বেলা অন্তত পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে খেতে বসা উচিত। এই দৃশ্যটা আজকের দিনে খানিক বিরল বটে। কিন্তু আমরা যৌথ ভাবে একটি সমাজে বাস করি। সেখানে এমন ঘটনাই কিন্তু স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমরা ছোটবেলায় নিজেরা করেছি, সিনেমায় দেখেছি, সকলে মিলে একসঙ্গে খেতে বসেন পরিবারের সদস্যেরা। সত্যজিৎ রায়ের 'শাখাপ্রশাখা' থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ছবি— খাওয়ার টেবিলেই তো গল্প তৈরি হতে দেখেছি আমরা। তবে হ্যাঁ, মহিলাদের অপেক্ষা করতে এবং পরিবেশন করতে দেখে হয়তো সব সময়ে ভাল লাগত না। কিন্তু এখন অনেক বাড়িতেই পুরুষ-নারী একই সময়ে বসে খাওয়াদাওয়া করেন। বচ্চন পরিবারেও তেমনই উদাহরণ দেখা যাচ্ছে। এই যে যৌথ যাপন, এটা বড়ই প্রয়োজনীয়।’’

একসঙ্গে খেতে বসা এবং খেতে বসে গল্প করা— দু’টি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ। বচ্চনের পরিবারের উদাহরণ টেনেই তিনি জানাচ্ছেন, খাবারের স্বাদ-গন্ধ নিয়েও যেমন আলোচনা করা যায়, তেমনই সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির মতো গুরুগম্ভীর বিষয়েও কথা বলা যায়। পারস্পরিক আলোচনার যে পরিসর তৈরি হচ্ছে, এর ফলে জমে থাকা কথা বেরিয়ে আসতে পারে, রাগ-অভিমান ভেঙে যেতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, খাওয়ার টেবিলে কোন বিষয়ে আলোচনা করা উচিত, কোন বিষয় এড়িয়ে যাওয়া উচিত? পরিবারের চরিত্র বুঝে কি বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত? আত্রেয়ীর মতে, পরিবারের সদস্যেরা কোন বিষয়ের সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন, তার উপর আলোচনা নির্ধারিত হয়ে থাকে সাধারণত। যদি একটি পরিবারের কোনও সদস্যেরই রাজনীতি বিষয়ে দৃঢ় মতামত নেই, ধারণা নেই, তা হলে হয়তো বচ্চন পরিবারের মতো এমন আলোচনা হবে না। কিন্তু যদি খাওয়ার টেবিলে রাজনৈতিক, সামাজিক আলোচনা শুরু করা যায়, তা হলে নতুন প্রজন্ম দেশ ও দশ নিয়ে ভাবতে শিখবে। খাবার টেবিলেই নতুন আদর্শের জন্ম হতে পারে। আবার যদি বিষয়ভিত্তিক আলোচনার বদলে হালকা চালে কথাবার্তা হয়, তা হলেও সমস্যা নেই। সব সময়ে অর্থবহ আলোচনা করার চাপও যেন না থাকে। একসঙ্গে যাপনই আসল।

যদিও মনোবিদ এখানে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’-এর প্রসঙ্গকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষিতে দেখলে বলতে হবে, এই সমাজবদ্ধতা আমাদের শিকড়ে রয়েছে। খেতে খেতে গল্প করা, বসে বসে এঁটো হাত শুকিয়ে ফেলা— ভারতীয়দের কাছে খাওয়ার সময়টা নিয়ে আবেগ কাজ করে।’’ তাই খাবারের দিকে মনোযোগ দিয়েও বৌদ্ধিক চর্চা, যৌথতার অনুশীলন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন মনোবিদ।

Advertisement
আরও পড়ুন