Suchitra Mitra Memory

সুচিত্রা-স্মরণে

যোগ্য ছাত্র হিসেবে শিল্পীর শেখানো পথেই চলেন অগ্নিভ, যা সে দিনের সমবেত গানে বারবার প্রকাশ পেল।

শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪০
সমবেত পরিবেশনায় শিল্পীরা।

সমবেত পরিবেশনায় শিল্পীরা।

গত অগস্টে সুচিত্রা মিত্রর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রবিতীর্থপ্রাক্তনী নিবেদন করেছিল ‘সুচিত্রা’। ভাষ্য রচনায় অমিত দাশগুপ্ত। কিছু গান, কিছু পাঠ নিয়ে আঁকা হল সুচিত্রা মিত্রের জীবন। শ্রোতারা অনেকেই সুচিত্রা মিত্রকে চেনেন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। সে দিন তাঁরা পরিচিত হলেন— সামাজিক, রাজনৈতিক, মানবদরদি আর এক সুচিত্রা মিত্রর সঙ্গে। এই ব্যক্তি সুচিত্রা মিত্রকে সম্পূর্ণ রূপে পাওয়া এক পরম প্রাপ্তি।

কখনও ছিল কণিকা-সুচিত্রা, হেমন্ত-সুচিত্রার সম্পর্কের কথা, কখনও দ্বিজেন চৌধুরীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘রবিতীর্থ’ গঠনের কথা। কখনও সংগ্রামী সুচিত্রার কথা, যিনি আর্তের উদ্ধারে গেয়ে ওঠেন ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। সামনে আসে অসুস্থ দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে মঞ্চে গিয়ে ওঠার কথা, কখনও বা রাজেশ্বরী দত্তর সঙ্গে বিবিসি স্টুডিয়োর প্রসঙ্গ। এক জীবনে একা হাতে সংসার, ছাত্রছাত্রী তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর দায়িত্ব পালন করেন সুচিত্রা।

সে দিনের অনুষ্ঠানে সমবেত গান পরিচালনায় ছিলেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগ্য ছাত্র হিসেবে শিল্পীর শেখানো পথেই চলেন অগ্নিভ, যা সে দিনের সমবেত গানে বারবার প্রকাশ পেল। তাঁর গাওয়া ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই’ গানের লয় নির্বাচন মুগ্ধ করে। প্রমিতা মল্লিক আজও স্বমহিমায়। শিল্পীর শিক্ষা, বোধ সব মিশে যায় তাঁর গানে। আমরা উপহার পাই ‘গহন রাতে শ্রাবণধারা’।

রাজশ্রী ভট্টাচার্য সে দিনের সন্ধ্যা সম্পূর্ণ করলেন তাঁর গান দিয়ে। ‘ছায়া ঘনাইছে’ গানের মিত ব্যবহার বা ‘এ পরবাসে’ গানের অলঙ্করণ মুগ্ধ করে। বারবার প্রমাণিত হয়, তিনি প্রকৃত শিক্ষিত শিল্পী। সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র গানে মন ভরে যায়। সুচিত্রা মিত্রর গায়কি ও গানের নাটকীয়তা সুদেষ্ণার গানে ফুটে ওঠে।

গানের সঙ্গে এক ভাবে চলে পাঠ ও আবৃত্তি। প্রণতি ঠাকুর, কোরক বসু তাঁদের অনুশীলিত কণ্ঠে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। যন্ত্র-সহযোগিতায় ছিলেন সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, অম্লান হালদার, সৌরভ চক্রবর্তী। এঁদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের মাত্রা বাড়ে, সম্পূর্ণতা পায়। সুচিত্রা মিত্রের সম্পূর্ণ জীবন শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরার জন্য রবিতীর্থ প্রাক্তনীদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।

অনুষ্ঠান

শিল্পীবৃন্দ।

শিল্পীবৃন্দ।

  • সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে হয়ে গেল কবিগানের কথকতা অনুষ্ঠান। ভাবনা ও পরিচালনায় ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। অপেরাভিত্তিক ডান্স-থিয়েটারের একটি মনোগ্রাহী অনুষ্ঠান ছিল। নিধুবাবুর গান, অভিনয় থেকে শুরু করে কেয়া চক্রবর্তীর ‘ভালমানুষ’ নাটকের গান উঠে আসে অনুষ্ঠানে। অতুলপ্র‍সাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানও পরিবেশন করা হয়। অভিনয়, গান, নাচে জমজমাট একটা সন্ধ্যার সাক্ষী ছিলেন দর্শক। গান, অভিনয়ে ছিলেন ঋদ্ধি। এ ছাড়াও ছিলেন দেবদূত ঘোষ, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রিচা শর্মা, অভিরূপ সেনগুপ্ত এবং ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজ়িক অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীরা। মঞ্চ বিলু দত্তের।
  • অনেকেই মনখারাপে গান শোনেন। সুর নাকি মনের অচেনা গলিতে প্রবেশ করে ধুলোর পুরু স্তর সাফ করতে জানে। এই গান শোনা কেবলই শখ নয়, বরং একটি থেরাপি বা চিকিৎসা, যার পোশাকি নাম ‘মিউজ়িক থেরাপি’। এর সাহায্যে মনের অসুখ সারাতে কাজ করে চলেছে ‘ইন্ডিয়ান মিউজ়িক থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন’। সম্প্রতি ‘রবীন্দ্র তীর্থে’ হয়ে গেল তাদের অষ্টম বার্ষিক সম্মেলন। সেখানে যোগ দেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা টি ভি সাইরাম। ব্যবস্থাপনায় রেমন্তী মতিলাল। সম্মেলনে ‘স্ক্রিনিং টুল ফর মিউজ়িক থেরাপি’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন দুর্গেশ উপাধ্যায়। ‘এগজ়িকিউটিভ ফাংশান’-এর ব্যাখা দেন গীতশ্রী মজুমদার। অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে মিউজ়িক থেরাপি অনুশীলনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন ফাল্গুনী রাওয়াল।
  • দ্য ড্রিমার্স আয়োজন করেছিল ‘দুই বন্ধুর গল্প’। কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরী ও চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল এই অনুষ্ঠান, উইসডম ট্রি-তে। অনুষ্ঠানের ভাবনা, পরিচালনায় ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। ঋত্বিক ও সলিল দুই বন্ধুর একসঙ্গে করা কাজ এমনকি সলিল চৌধুরীর গানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় অনুষ্ঠানে। গান করেন অরিত্র দাশগুপ্ত, পরাগ বরণ পাল, সোনাক্ষী কর, তিতাস চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ দেব রায়। ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম’, ‘প্রান্তরের গান আমার’... নানা কালজয়ী গানে ভরে ওঠে ‘দুই বন্ধুর গল্প’।
আরও পড়ুন