Bengaluru stampede

রাস্তায় ছেঁড়া পোশাক আর জুতোর পাহাড়, মাটিতে পড়ে গার্ডরেল! বেঙ্গালুরু জুড়ে হাহাকার আর কান্নার ছবি

বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সমর্থকের। আহত হয়েছেন ৩৩ জন। বিরাট কোহলিদের উল্লাসের মাঝেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ১৪:৫৮
০১ ১৯
Bengaluru stampede

১৮ বছরে প্রথম জয়। দীর্ঘ দিন ধরে দেখা স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হয়েছে বিরাট কোহলির। আইপিএল জেতার পর বুধবার বেঙ্গালুরুতে উৎসবের কথা জানিয়েছিলেন বিরাট। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএলের ট্রফি নিয়ে উল্লাসের কথা ছিল কোহলিদের। কোহলিদের চার্টার্ড বিমান বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের মাটি ছোঁয়ার আগেই সমর্থকদের ভিড় জমতে শুরু করে সেখানে।

০২ ১৯
Bengaluru stampede

চিন্নাস্বামীতে ‘বিরাট সেলিব্রেশনের’ আয়োজন করা হয়েছিল বিকেল নাগাদ। সেই সময়টুকুরও অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা। সকাল থেকেই দর্শক জমা হতে থাকেন স্টেডিয়ামে। আরসিবির জয় নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠতে লক্ষ লক্ষ দর্শক ভিড় জমান। সেই বিজয় উৎসবই বদলে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায়।

০৩ ১৯
Bengaluru stampede

উপস্থিত সকলেই বিরাট কোহলি ও আইপিএল ট্রফির এক ঝলক দেখার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকেন। বেশির ভাগই স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। যাঁরা পাস পান তাঁরাই ভিতরে ঢোকেন। বাইরে অপেক্ষমান লাখো জনতা ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকেন। আর তাতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।

Advertisement
০৪ ১৯
Bengaluru stampede

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে লোকধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। অভিযোগ, সেখানে উপস্থিত হন লাখো মানুষ। ভেঙে যায় স্টেডিয়ামে দরজা। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ের চাপ সামলাতে দিশেহারা বেঙ্গালুরু পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ শুরু করে। তাতেই গোটা ব্যাপারটি হাতের বাইরে চলে যায়। হাজার হাজার মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

০৫ ১৯
Bengaluru stampede

বিরাট কোহলিদের উল্লাসের মাঝেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে তত ক্ষণে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছেন। স্টেডিয়ামের ছোট গেট খুলতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের লাঠির ঘা পড়তেই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। হুড়োহুড়িতে রাস্তায় পড়ে যান অনেকে। পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ১১ জন। আহত হন ৩৩ জন। আরও অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

Advertisement
০৬ ১৯
Bengaluru stampede

চিন্নাস্বামীর বাইরে যখন এই বিশৃঙ্খলা তখন বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটারেরা বিধান সৌধে। কোহলিদের প্রত্যেকের গায়ে লাল টি-শার্ট। তাতে লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন্স’। সেখানে কোহলি-সহ প্রত্যেককে সম্মান জানান কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তাঁদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়। সঙ্গে ছিল পাগড়ি এবং মালাও। যদিও বৃষ্টি নামায় সেই অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ করতে হয়। বিধান সৌধ থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যান কোহলিরা। স্টেডিয়ামের বাইরে মর্মান্তিক ঘটনার পরও স্টেডিয়ামের ভিতরে চলেছে উৎসব। সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে গোটা দেশে।

০৭ ১৯
Bengaluru stampede

বেঙ্গালুরুর আইপিএল জয়ের আনন্দ এক নিমেষে বদলে যায় বিষাদে। যে সব সমর্থক রাস্তায় আহত হয়ে পড়ে ছিলেন তাঁদের প্রথমে স্টেডিয়ামের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্স চিন্নাস্বামীর ভিতরেই ছিল। কিন্তু মাত্র দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স থাকায় আহতদের তুলে নিয়ে যেতে সমস্যা তৈরি হয়। যাঁদের তোলা যায়নি তাঁদের কাঁধে বা কোলে নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

Advertisement
০৮ ১৯
Bengaluru stampede

উদ্ধারকারীদের পরিকল্পনা ছিল রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হবে। কিন্তু সেখানেও ছিল সমস্যা। স্টেডিয়ামের আশপাশের সব রাস্তাই অনুষ্ঠানের জন্য দুপুর থেকে বন্ধ ছিল। তাই কাঁধে বা কোলে করে আহতদের প্রায় ৫০০ মিটার নিয়ে যেতে হয়। সেখান থেকে গাড়ি করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

০৯ ১৯
Bengaluru stampede

বেঙ্গালুরুর এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, তাঁরা অনবরত মাইকে ঘোষণা চালিয়ে গিয়েছেন। স্টেডিয়ামের বাইরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কেউ কোনও কথা শোনেননি। বরং কে আগে স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে পারেন, সেই নিয়ে লড়াই চলছিল।

১০ ১৯
Bengaluru stampede

প্রচুর সমর্থক ছিলেন যাঁরা রাস্তা আটকে নাচছিলেন, গাইছিলেন। স্টেডিয়ামে ঢোকার পথও ছিল সরু। ফলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। পাস বা টিকিট ছাড়া ঢোকার অনুমতি ছিল না। কিন্তু একটা বড় অংশের কাছে কোনও পাস বা টিকিট ছিল না। তাঁরা এসেছিলেন স্রেফ উৎসবে শামিল হতে।

১১ ১৯
Bengaluru stampede

নিহতদের মধ্যে ফুচকা বিক্রেতার ছেলে, বছর চোদ্দোর স্কুলছাত্রী, সদ্য ভিন্‌রাজ্যে চাকরিতে যোগ দেওয়া তরুণী রয়েছেন। কেউ আবার হারিয়েছেন একমাত্র ছেলেকে। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বুধবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন এক তরুণ। কিন্তু ঘরে ফেরা হল না তাঁর। বুধবার সন্ধ্যায় একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছোতেই ভেঙে পড়ে তরুণের পরিবার। বেঙ্গালুরুর ভিত্তল মাল্য রোডের বৈদেহী হাসপাতালে ছেলের দেহ নিতে যান বাবা-মা। তখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, ছেলে আর নেই।

১২ ১৯
Bengaluru stampede

২১ বছরের মৃত কলেজপড়ুয়ার এক বন্ধুর কথায়, ‘‘জানি না কখন, কী ভাবে এমন ঘটে গেল! যখন ওকে খুঁজে পেলাম, তখন ও অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিল। জামাকাপড় ছিঁড়ে গিয়েছিল। পুলিশকে সাহায্য করতে বললে প্রথমে তারা বিশেষ পাত্তা দেয়নি। পরে পুলিশের গাড়িতে চড়িয়ে তারা আমাদের হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।’’ তরুণের পরিবার মনে করছে, সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন তিনি।

১৩ ১৯
Bengaluru stampede

প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল বিধান সৌধ থেকে চিন্নাস্বামী পর্যন্ত হুডখোলা বাসে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। সেই বাসে ট্রফি হাতে থাকবেন ক্রিকেটারেরা। তবে পুলিশের পরামর্শে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। তার পরেও যে এত মানুষের সমাগম হবে এটা প্রত্যাশা করা যায়নি।

১৪ ১৯
Bengaluru stampede

বুধবার দুপুর ৩.১৪ নাগাদ আরসিবি একটি টুইট করে জানায়, বিকেল ৫টা থেকে শোভাযাত্রা হবে। সেই শোভাযাত্রা কোথা থেকে, কী ভাবে হবে তার কোনও ঘোষণা ছিল না। এর ফলে অনুষ্ঠানের সূচি নিয়ে দর্শকের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। কখন কোথায় অনুষ্ঠানটি শুরু হবে কারও কাছে স্পষ্ট ছিল না। ফলে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যায় স্টেডিয়ামে।

১৫ ১৯
Bengaluru stampede

এতগুলি মানুষের প্রাণহানির পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম হওয়া উচিত ছিল না। আমরা আশা করিনি যে, এত ভিড় হবে। স্টেডিয়ামে ৩৫ হাজার লোক বসতে পারেন। তিন লক্ষের বেশি মানুষ সেখানে পৌঁছে যান। গেট ভেঙে যায়। আমরা ক্ষমা চাইছি। সব কিছু জানার পরে বার্তা দেব।’’

১৬ ১৯
Bengaluru stampede

মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তাঁর সরকার আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে বলেও জানিয়েছেন। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

১৭ ১৯
Bengaluru stampede

বিজয়োৎসবে ঘটা মর্মান্তিক এই ঘটনার ৬ ঘণ্টা পর বিবৃতি দেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ। সেই বিবৃতি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়ে কোহলি লিখেছেন, ‘‘ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’’ মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনও (কেএসসিএ)।

১৮ ১৯
Bengaluru stampede

আরসিবির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বিকালে দলের ফেরা উপলক্ষে বিশাল জনসমাগম হয়েছিল বেঙ্গালুরু জুড়ে। আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছি, সেই জমায়েতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমরা গভীর ভাবে মর্মাহত। সকলের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

১৯ ১৯
Bengaluru stampede

বেঙ্গালুরুতে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে কর্নাটক হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলাটির শুনানি শুরু হবে আদালতে। বুধবারের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু থানায় এফআইআরও দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে মোট কতগুলি এফআইআর দায়ের হয়েছে, সেই সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।

সব ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি