আর মাধবন, সোনু সুদ, তাপসী পন্নু এবং কৃতি শ্যাননের মতো অনেক অভিনেতা রয়েছেন, যাঁরা শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে ইঞ্জিনিয়ার। অধুনাপ্রয়াত বলিউড তারকা সুশান্ত সিংহ রাজপুতও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছিলেন।
তবে এঁদের কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা অভিনেতা অনিরুদ্ধ আগরওয়ালের মতো উঁচু নয়। একটু খটকা লাগল? কারণ, এ নামের কেউ বলিউডে রয়েছেন (বলা ভাল ছিলেন) বলে অনেকেই জানেন না।
অনিরুদ্ধ রুরকি আইআইটির ছাত্র। আইআইটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর হিন্দি ছবিতে কাজ করা শুরু করেন। জনপ্রিয় হন বলিউডের ছবিতে ভূত বা দানবের চরিত্রে অভিনয় করে।
কখনও ‘ভ্যাম্পায়ার’, কখনও বা ‘ভূত’! হিন্দি ফিল্মজগতে হরর ঘরানার ছবি মানেই বড় পর্দায় ভেসে উঠত বিশালদেহী অনিরুদ্ধের মুখ। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে ‘ভূত’ হিসাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
১৯৪৯ সালের ২০ ডিসেম্বর উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে অনিরুদ্ধের জন্ম। বাবা-মা এবং ১০ ভাইবোনের সঙ্গে দেহরাদূনেই থাকতেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল অনিরুদ্ধের। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা নিয়েও ব্যস্ত থাকতেন। স্কুলের দলের প্রতিনিধিও ছিলেন অনিরুদ্ধ।
উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অনিরুদ্ধ সেখানেও খেলাধুলার জন্য পরিচিতি পেয়েছিলেন। রুরকি আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি।
পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ে চলে যান অনিরুদ্ধ। সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু চাকরির সুখ বেশি দিন পাননি। গভীর অসুখ ধরা পড়ে তাঁর।
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার ধরা পড়ায় অনিরুদ্ধের উচ্চতার পাশাপাশি মুখের গড়নও অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিজের জীবন নিয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি।
রোজগারের জন্য বি গ্রেড ছবিতেও অভিনয় শুরু করেছিলেন অনিরুদ্ধ। হঠাৎ অনিরুদ্ধের এক বন্ধু তাঁকে খবর দেন, মুম্বইয়ে আসছেন ভারতীয় সিনেমায় ভূতের ছবি বানানোর জন্য জনপ্রিয় ‘রামসে ব্রাদার্স’। ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে রয়েছেন তাঁরা।
আশির দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রামসে ব্রাদার্স। রামসে ব্রাদার্স নির্মিত ‘হরর’ ঘরানার ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে থাকত দর্শক। বন্ধুর কথামতো রামসে ব্রাদার্সের ছবির জন্য অডিশন দিতে যান অনিরুদ্ধ।
যে অসুখ নিয়ে অনিরুদ্ধ মুষড়ে পড়েছিলেন, সেটাই আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসে অনিরুদ্ধের জীবনে। মুখের গড়ন এবং উচ্চতা দেখে ছবিনির্মাতারা পছন্দ করে ফেলেন অনিরুদ্ধকে।
অভিনয়ে নামবেন বলে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ। রামসে ব্রাদার্সের সঙ্গে ‘পুরানা মন্দির’, ‘থ্রিডি সামরি’, ‘বন্ধ দরওয়াজা’ নামে একের পর এক ছবিতে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন, তা কখনও ভাবেননি অনিরুদ্ধ। কিন্তু এক বার অভিনয় শুরু করার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। হরর ঘরানার অনেক ছবির প্রস্তাব অনিরুদ্ধের ঝুলিতে আসতে শুরু করে। এর বাইরেও নামীদামি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
কেরিয়ারের প্রয়োজনে নিজের নামও বদলে ফেলেন অনিরুদ্ধ। বলিপাড়ায় অজয় নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। হিন্দি ছবির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন। ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এবং ‘সাচ আ লং জার্নি’র মতো ইংরেজি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
বড় পর্দার পাশাপাশি ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন অনিরুদ্ধ। ‘শক্তিমান’, ‘মানো ইয়া না মানো’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। কিন্তু অভিনয়জগতেও তাঁর দিন ফুরিয়ে আসে।
পুরনো এক সাক্ষাৎকারে অনিরুদ্ধ জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তা খুবই কম ছিল। খুব বেশি রোজগার করতে পারতেন না তিনি। ২০১০ সালে বলিপাড়া থেকে অবসর নেন অনিরুদ্ধ। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একটি নির্মাণ ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তা-ও সামলাচ্ছেন।
সাক্ষাৎকারে অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘এক সময়ে আমাকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক মানুষ এত সংগ্রাম করে। আমি অনেক সিনেমা পেয়েছি। কিন্তু পারিশ্রমিক সব সময় পর্যাপ্ত হত না। আমার নিয়মিত রোজগারের প্রয়োজন ছিল। আমার কোনও অনুশোচনা নেই, কোনও রাগ নেই। আমি আরও অভিনয় করতে চাইতাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আমি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।’’
অনিরুদ্ধের কন্যা কপিলা আগরওয়াল এক জন স্থপতি। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বান্টি অউর বাবলি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে কপিলাকে। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন অনিরুদ্ধের পুত্র অসীম আগরওয়াল। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফাইট ক্লাব: মেম্বার্স ওনলি’ ছবিতে কাজ করেছেন অসীম। তবে কপিলা এবং অসীম— দু’জনেই বর্তমানে বিদেশে থাকেন।
ছবি: সংগৃহীত।