Deep Sea Fishing

মীন রাশিতেই ‘নীল অর্থনীতির’ ভাগ্যবদল! ভারতের বিশেষ নৌকোয় পা রেখে গভীর সমুদ্র থেকে ঘরে আসবেন মা লক্ষ্মী?

ভারতের ‘নীল অর্থনীতি’ নিয়ে বিশেষ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। সেখানে এতে বিপুল সম্ভাবনার উল্লেখ করেছেন সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম। যদিও এর জন্য প্রয়োজন রয়েছে পরিকাঠামোগত উন্নতির। এর জন্য তিন পর্যায়ে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৩
০১ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

আর উপকূল সংলগ্ন এলাকায় ডিঙি নৌকো নিয়ে মাছ শিকার নয়। বড় বড় ভেসেলে চেপে যেতে হবে গভীর সমুদ্রে। ভারতের ‘নীল অর্থনীতি’কে (ব্লু ইকোনমি) সফল করতে এ বার সেই পরামর্শ দিল নীতি আয়োগ। এর জন্য তিন পর্যায়ের পরিকল্পনা গ্রহণের নীলনকশা ছকে দিয়েছে তারা। তাদের দেখানো রাস্তায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার হাঁটলে মাছশিকারিদের আর্থিক ভাগ্য যে অনেকটা বদলাবে, তা বলাই বাহুল্য।

০২ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

১৩ অক্টোবর ‘ভারতের নীল অর্থনীতি: গভীর সমুদ্র ও উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ ব্যবহার বৃদ্ধির কৌশল’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন নীতি আয়োগের চিফ এক্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম। সেখানে মৎস্য সম্পদ কী ভাবে এ দেশের অর্থনীতির রং বদলাতে পারে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রয়েছে পরিকাঠামোগত উন্নতি সংক্রান্ত একাধিক পরামর্শ।

০৩ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা মূলত নদী, খাল, ভেড়ি, পুকুর বা দিঘির মতো বড় জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে অর্থ উপার্জন করে এসেছেন। এ ছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য শিকার উপকূলভাগ থেকে মাত্র ১২ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২৩ কিলোমিটার) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম সিইওর দাবি, ‘নীল অর্থনীতি’র সুফল পেতে হলে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জ়োন বা ইইজ়েডে ঢুকতে হবে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের। কিন্তু সেই পরিকাঠামোর যে অভাব রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনি।

Advertisement
০৪ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য বিশেষ ধরনের জলযানের প্রয়োজন। এর পোশাকি নাম ‘ডিপ সি ভেসেল’। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার কাছে এই ধরনের নৌকো রয়েছে ১,৮৮৩টি। অন্য দিকে ১,২১৬টি ‘ডিপ সি ভেসেল’ ব্যবহার করেন ইরানের মৎস্যজীবীরা। সেখানে ভারতের কাছে সংশ্লিষ্ট জলযানের সংখ্যা মাত্র চার। বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইইজ়েড থেকে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় মাছ শিকারের পক্ষে এই পরিকাঠামো যে অপ্রতুল, তা বলাই বাহুল্য।

০৫ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

বিশ্লেষকদের কথায়, ‘নীল অর্থনীতি’তে ভারতের উন্নতির সুযোগের নেপথ্যে রয়েছে এ দেশের ১,১৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা। ন’টি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এটি। এই উপকূলরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা হল এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জ়োন বা ইইজ়েড। সোজা রাস্তায় দূরত্বটা প্রায় ৩৭১ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এই ইইজ়েডের যাবতীয় সম্পদ ব্যবহারের অধিকারী এ দেশের সরকার। পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে তা করতে পারছে না কেন্দ্র।

Advertisement
০৬ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

‘নীল অর্থনীতি’ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর নীতি আয়োগের সিইও বলেন, ‘‘গত ২০-৩০ বছর ধরে আমাদের মৎস্যজীবীরা শুধুমাত্র মোটরযুক্ত নৌকো বা ট্রলার ব্যবহার করছেন। উপকূলরেখা থেকে সেগুলি খুব বেশি দূর যেতে পারে, এমনটা নয়। এখানে মনে রাখার মতো বিষয় হল, প্রতি বছর প্রায় ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের মাছ আমরা বিশ্ববাজারে রফতানি করি। এই পরিসংখ্যান বৃদ্ধি করার এ বার সময় এসেছে।’’

০৭ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

নীতি আয়োগ জানিয়েছে, সম্প্রতি দ্বিগুণ হয়েছে ভারতের মাছ রফতানির অঙ্ক। কিন্তু সমস্যার বিষয় হল, রফতানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ মাছই দেশের ভিতরের ভেড়ি থেকে আসছে। মাত্র ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ এখানকার মৎস্যজীবীরা বিদেশে পাঠাতে পারেন। পরিকাঠামোগত উন্নতি করতে পারলে ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ৭১ লক্ষ ৬০ হাজার টন সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করতে পারবেন তাঁরা। এর মধ্যে প্রচলিত এবং অপ্রচলিতর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৪ এবং ২৬ শতাংশ।

Advertisement
০৮ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

সিইও সুব্রহ্মণ্যমের রিপোর্টে আরও একটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ রয়েছে। সেটা হল, মাছ শিকারের ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মৎস্যজীবীরা সাধারণত উপকূলভাগ থেকে সমুদ্রে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যাওয়ার লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। ফলে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রণ ভাবে মাছ ধরার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ আবার আইনি সুরক্ষা ছাড়াই চলে যাচ্ছেন আরও গভীর সমুদ্রে। এতে থাকছে জীবনের ঝুঁকি।’’

০৯ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

বর্তমানে ১৯৫৮ সালের মার্চেন্ট শিপিং আইন (এমএস অ্যাক্ট) অনুযায়ী মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের অনুমোদন দিয়ে থাকে সরকার। এই আইনের আওতায় প্রশাসনের কাছে জলযানের রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তাঁদের। সংশ্লিষ্ট নৌকো বা ট্রলারগুলিতে ভারতের জাতীয় পতাকা লাগানো বাধ্যতামূলক। ‘নীল অর্থনীতি’কে সফল করতে অবিলম্বে এই আইন বদলানোর পরামর্শ দিয়েছে নীতি আয়োগ।

১০ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

নতুন নিয়মে মৎস্যজীবীদের উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ শিকারের অনুমোদনের সুপারিশ করেছে সুব্রহ্মণ্যম রিপোর্ট। পাশাপাশি মোট তিনটি পর্যায়ে ‘নীল অর্থনীতি’র খোলনলচে বদলে ফেলার পরামর্শ রয়েছে তাতে। এর জন্য মোট ৮,৩৩০ কোটি টাকা কেন্দ্রকে খরচের প্রস্তাব দিয়েছে নীতি আয়োগ।

১১ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

নীতি আয়োগের সিইওর সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথম ধাপে উপকূলভাগ থেকে ১২-২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকার মধ্যে মাছ শিকারের নিয়মকানুন তৈরির উপর জোর দিতে হবে। এই পর্যায়ে পরিকাঠামো খাতে উন্নয়নের দিকে সর্বাধিক নজর রাখবে সরকার। এর মধ্যে থাকছে ‘ডিপ সি ভেসেল’-এর সংখ্যাবৃদ্ধি। এ ছাড়া ১০-১৫টি ছোট আকারের গভীর সমুদ্র অবতরণ কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।

১২ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

এই পর্যায়ে উপকূল ভাগ সংলগ্ন এবং গভীর সমুদ্রের প্রাকৃতিক এবং জলজ সম্পদ আহরণের আগে তার একটা মানচিত্র তৈরির সুপারিশ করেছে নীতি আয়োগ। ছোট আকারের অবতরণ কেন্দ্রগুলি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তৈরির পরামর্শ দিয়েছে তারা। ২০২৫-’২৮ সালের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার ‘ডেডলাইন’ দিয়েছে নীতি আয়োগ।

১৩ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

ভারতের ‘নীল অর্থনীতি’র উন্নতিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলবে ২০২৯-’৩২ সাল পর্যন্ত। এই ধাপে সমবায় মালিকানা মডেলের উপরে জোর দিতে বলেছে নীতি আয়োগ। সুব্রহ্মণ্যম রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ভাবে মৎস্যজীবীদের পক্ষে ‘ডিপ সি ভেসেল’ কিনে তা পরিচালনা করা কঠিন। সেটা একমাত্র মৎস্যজীবীদের সমবায়গুলিই করতে পারবে। এতে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে অধিক মুনাফার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন তারা।

১৪ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

এখানে উল্লেখ্য, দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে। এক্সক্লিউসিভ ইকোনমিক জ়োনে ‘ডিপ সি ভেসেল’ নিয়ে যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট জলযানটিকে ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণে মাছ শিকার মোটেই সহজ কাজ নয়। এ ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার দিকেও সরকারকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নীতি আয়োগ।

১৫ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

সুব্রহ্মণ্যম রিপোর্টে বলা হয়েছে, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। ফলে ‘ডিপ সি ভেসেল’-এ আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার সুব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি, প্রয়োজনে দ্রুত উপকূলে বা সুরক্ষিত জায়গায় সেগুলিকে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করবে সরকার। গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়া মৎস্যজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিক রাখার ব্যাপারে সুপারিশ করেছে নীতি আয়োগ।

১৬ ১৬
Blue Economy may change India’s fate through deep sea fishing, three phase plan of NITI Aayog

এই পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপ শুরু হবে ২০৩৩ সালের পর। সেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের সাফল্যগুলিকে একীভূত করে পুনর্মূল্যায়ন করবে সরকার। পাশাপাশি, এ ব্যাপারে ফাঁকফোকরগুলি বুজিয়ে ফেলার দিকেও নজর দিতে হবে। সিইও সুব্রহ্মণ্যম মনে করেন, ‘নীল অর্থনীতি’তে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। এর জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি