সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা তাঁকে নিয়ে আসে অভিনয় জগতে। সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করে প্রচারে এসেছিলেন। ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। গোপন রেখেছিলেন সন্তানের কথাও। এখন কী করেন মাহি গিল?
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে চণ্ডীগড়ে জন্ম মাহির। তাঁর আসল নাম রিম্পি কউর গিল। পরে অবশ্য নাম বদলে ফেলেন তিনি। মাহির বাবা ছিলেন পঞ্জাব সরকারের অর্থ দফতরের উপদেষ্টা। কলেজে শিক্ষকতা করতেন মাহির মা। বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে চণ্ডীগড়ে থাকতেন মাহি।
চণ্ডীগড়ের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন মাহি। তার পর সেখানকার কলেজ থেকে ইংরেজি, মনোবিদ্যা এবং সমাজবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তাই সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাহি। কিন্তু তিন মাসের প্রশিক্ষণ পর্ব চলার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্যারাশুটের দড়ি ছিঁড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যায় তাঁর।
সুস্থ হওয়ার পর নাটকে স্নাতকোত্তর করতে পঞ্জাবের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মাহি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন মুলতুবি রেখে দেন। গুঞ্জন শোনা যায়, মাহির মায়ের ইচ্ছা ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু রক্ষণশীলতার চাপে তা পারেননি। তাই মেয়ের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
২০০৩ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘হাওয়ায়েঁ’র মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখেন মাহি। নাটকের পাশাপাশি একাধিক পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। চার বছর পর বলিপাড়ায় কেরিয়ার শুরু করেন তিনি।
২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’ নামের হিন্দি ছবি। সুধীর মিশ্র পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেন সাইনি আহুজা এবং সোহা আলি খান। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবিতে খুব ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন মাহি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, জন্মদিনের পার্টিতে মাহিকে নাচতে দেখে নায়িকাকে মনে ধরে যায় বলিউডের জনপ্রিয় এক পরিচালকের। তাঁর ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেন মাহিকে। সেই পরিচালক আর কেউ নন। তিনি অনুরাগ কাশ্যপ।
২০০৯ সালে অনুরাগের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘দেব.ডি’। এই ছবিতে অভয় দেওল এবং কলকি কেকলাঁর পাশাপাশি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন মাহি। এই ছবিতে একাধিক সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অভিনয়ের জন্য বহু পুরস্কারও পেয়েছিলেন মাহি।
‘দেব.ডি’ ছবিতে অভিনয়ের পরে মাহি একাধিক জায়গা থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন। কিন্তু প্রতি ছবিতেই তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকত সাহসী দৃশ্য। মাহি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁকে চিত্রনাট্যের খসড়া দেওয়া হত না। শুধু জানানো হত যে, কিছু সাহসী দৃশ্যে তাঁকে অভিনয় করতে হবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে মাহির প্রতিভা ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছিল। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দবং’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সেই ছবিতে আরবাজ় খানের বিপরীতে দেখা যায় মাহিকে। তবে সেই চরিত্রটি নাকি কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে দাবি করেছিলেন মাহি।
কেরিয়ারের পতন সম্পর্কে মাহি এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ‘‘দেব.ডির পর আমি প্রচুর প্রশংসা পাচ্ছিলাম। অনেক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলাম আমি। তবে ‘দবং’-এ অভিনয় করার পর সব বদলে গেল। তার পর থেকেই প্রযোজকেরা আমাকে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে শুরু করছিলেন। খুব খারাপ লেগেছিল আমার। সেই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না।’’
মাহির কেরিয়ার যখন থমকে যাওয়ার পথে, তখন পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া তাঁকে ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’-এর ফ্র্যাঞ্চাইজ়িতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। মাহির দাবি, ‘‘ওই ফ্র্যাঞ্চাইজ়িতে কাজ করে আমি গর্বিত। প্রথমে আমরা ভাবতেই পারিনি ছবিটি এত জনপ্রিয় হবে।’’ তার পর মাহির কেরিয়ারের রেখচিত্র ফের বদলাতে শুরু করে।
পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়ার সঙ্গে মাহির সম্পর্ক নিয়ে বহু গুঞ্জন শোনা যায় বলিপাড়ায়। এক সময় ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠেছিল তাঁদের প্রেম। মাহির অভিনয়ে মুগ্ধ তিগমাংশু তাঁর ‘পান সিংহ তোমর’ এবং ‘সাহেব বিবি গ্যাংস্টার রিটার্নস’ ছবিতেও অভিনয়ের সুযোগ দেন মাহিকে।
‘বুলেট রাজা’ ছবিতে মাহির জন্য বিশেষ একটি গানের দৃশ্য রাখেন তিগমাংশু। কানাঘুষো শোনা যায়, শুধু মাহির কথা ভেবেই নাকি তিগমাংশু পরিচালনা করেন ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার থ্রি’ ছবিটি। কিন্তু বক্স অফিসে ছবিটি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়। যদিও তাঁদের সম্পর্ক শুধুমাত্র পেশার খাতিরেই বলে দাবি করেছিলেন দুই তারকা।
তিগমাংশু ছাড়াও মাহির সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল বলি অভিনেতা রণদীপ হুডার। তা নিয়েও মাহি কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
এক সময় মাহির সঙ্গে অভিনেতা জিমি শেরগিলের সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। যদিও এ ক্ষেত্রেও অভিনেত্রী কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, অভিনয় শুরুর আগে থেকেই মাহি বিবাহিত ছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সম্পর্কের আয়ু বেশি দিন ছিল না। বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
প্রথম বিয়ে সম্পর্কে মাহি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রথম বিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তখন ছোট ছিলাম। সব কিছু বোঝার মতো বয়স ছিল না।’’ মতের অমিল হওয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মাহি।
২০১৯ সালে মাহি ঘোষণা করেছিলেন যে, এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে একত্রবাস করেন তিনি। তাঁদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে। মাহি জানিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রেমিক গোয়ায় থাকেন। তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়েছে ২০১৬ সালে। গোয়ায় হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁর প্রেমিক। সে সময় অবশ্য মনের মানুষের নাম প্রকাশ্যে আনেননি অভিনেত্রী।
২০২৩ সালে জানা যায় যে, মাহি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছেন। তাঁর স্বামীর নাম রবি কেশর। ২০১৯ সালে ‘ফিক্সার’ ওয়েব সিরিজ়ে মাহির সঙ্গে অভিনয় করেন রবি। তার পর অবশ্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
‘কাস্টিং কাউচ’-এর শিকারও হয়েছিলেন মাহি। এক সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছিলেন নিজেই। মাহির কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে বেশ কয়েক বার এই ঘটনা ঘটেছে। আমার তো সব পরিচালকদের নামও মনে নেই। এক বার এক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে হয়েছিল। আমি সালোয়ার স্যুট পরে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, সালোয়ার পরে এলে কেউ অভিনয়ের সুযোগ দেবেন না। আবার অন্য এক পরিচালক আমায় রাতপোশাক পরে দেখতে চেয়েছিলেন।’’
কানাঘুষো শোনা যায় যে, প্রায় দেড় বছর মানসিক অবসাদে ডুবেছিলেন মাহি। তাঁর প্রিয় বন্ধু নাকি আর্থিক ভাবে ঠকিয়েছিলেন তাঁকে। বন্ধুর এমন বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে পারেননি মাহি।
নিজেকে প্রচার থেকে সরিয়ে রাখেন মাহি। ২০২৪ সালে অজয় দেবগন অভিনীত ‘নাম’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন মাহি। ইনস্টাগ্রামের পাতায় দু’লক্ষের বেশি অনুগামী রয়েছে অভিনেত্রীর।
সব ছবি: সংগৃহীত।