বলিউডের ‘ভাইজান’ বলে কথা! শোনা যায়, তিনি নাকি নবাগতদের অভিনয় করার সুযোগ দিতে পিছপা হন না। সোনাক্ষী সিংহ থেকে ক্যাটরিনা কইফের মতো নায়িকারা সলমন খানের নায়িকা হিসাবেই বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন। বর্তমানে দু’জনেই বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী। কিন্তু হাতের পাঁচ আঙুল যে সমান নয়। সলমনের নায়িকা হিসাবে হাতেখড়ি হলেও এখন বলিপা়ড়া থেকে প্রায় ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন বহু তারকা।
১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবির মাধ্যমে অভিনেতা হিসাবে বলিপাড়ায় পদার্পণ সলমনের। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ভাগ্যশ্রী। নবাগত জুটির রসায়ন বেশ মনে ধরেছিল দর্শকের। কিন্তু বলিউডে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সলমনের প্রথম ছবির নায়িকার কেরিয়ার।
কেরিয়ারের প্রথম ছবি মুক্তির পরের বছরেই হিমালয় দাসানিকে বিয়ে করেন ভাগ্যশ্রী। বিয়ের পর তিনি শুধুমাত্র স্বামীর সঙ্গেই অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষিণী ভাষার ছবিতে টুকটাক অভিনয় করলেও বলিপাড়া থেকে যেন ‘উধাও’ হয়ে যান তিনি।
১৯৯১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘সনম বেওয়াফা’। ছবিতে সলমনের নায়িকা ছিলেন চাঁদনি। তার পর ‘আ জা সনম’, ‘মিস্টার আজাদ’, ‘জয় কিষণ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করলেও কোনও ছবি সাফল্যের মুখ দেখেনি। ‘ব্যর্থ নায়িকা’ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে যান চাঁদনি। বলিপাড়া থেকে বিদায় নিয়ে বিদেশে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে নৃত্য প্রশিক্ষক হিসাবে কেরিয়ার গড়ে তোলেন।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে ‘বাগী, দ্য রেবেল’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন নাগমা। এই ছবিতে সলমনের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। পরে দক্ষিণী ছবিতেই বরং বেশি অভিনয় করতে দেখা যায় নাগমাকে। অভিনয়ের জগৎ ছেড়ে পরে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েন তিনি।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লভ’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় কেরিয়ার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রেবতী মেনন। সলমনের বিপরীতে সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু বলিউডে কেরিয়ারের সিঁড়িতে উঠতে পারেননি নায়িকা।
বলিপাড়া ছেড়ে দক্ষিণী চলচ্চিত্রজগতের দিকে পা বাড়ান রেবতী। সেখানেই পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি। বহু বছর পর ২০১৪ সালে ‘টু স্টেট্স’ ছবির মাধ্যমে আবার বলিউডে ফিরে আসেন রেবতী।
টেলিভিশনের পরিচিত নায়িকা ছিলেন শিবা। ‘সূর্যবংশী’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে কেরিয়ার শুরুর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সলমনের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও লাভ হয়নি তাঁর। পরে অবশ্য কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি এবং ছোটপর্দায় অভিনয় করলেও বড়পর্দায় আর ফিরে আসতে পারেননি তিনি।
২০০৫ সালে সোহেল খানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘লাকি: নো টাইম ফর লাভ’ ছবিটি। সলমনের বিপরীতে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন স্নেহা উল্লাল। স্নেহাকে একঝলক দেখলে মনে হয় যে, তিনি যেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের যমজ বোন।
স্নেহার মুখের আদল হুবহু ঐশ্বর্যার মতোই। বলিপাড়ার অনেকে বলাবলি করতে শুরু করেছিলেন যে, স্নেহাকে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকার মতো দেখতে বলেই সলমন তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। ছবিমুক্তির পর ঐশ্বর্যার ‘ফোটোকপি’ হিসাবেই বেশি পরিচিতি পেলেও তা ছিল সাময়িক।
বলিউডে কেরিয়ার নিশ্চিত করতে না পেরে দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন স্নেহা। কিন্তু তাঁর কোনও ছবিই বক্সঅফিসে ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। বেশি দিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজও করতে পারেননি স্নেহা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, সিনেমার শুটিং করার সময় স্নেহা হঠাৎ লক্ষ করতে শুরু করেন যে, একটানা ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। প্রথমে এই রোগকে পাত্তা না দিয়ে অনবরত কাজ করে গিয়েছিলেন তিনি।
পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন স্নেহা। দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার চেষ্টা করলেও আর সুযোগ পাননি তিনি। বর্তমানে আলোর রোশনাই থেকে দূরেই রয়েছেন স্নেহা।
নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় ডাকসাইটে সুন্দরী এবং ব্যস্ততম অভিনেত্রীদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছিলেন আয়েশা জুলকা। ১৯৯১ সালে ‘কুরবান’ ছবিতে সলমনের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। পরে আমির খান, অক্ষয় কুমার, নানা পটেকরের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
আয়েশা যখন তাঁর কেরিয়ারের মধ্যগগনে, তখন একটি ছবিতে নগ্ন দৃশ্যের ব্যবহার আয়েশার কেরিয়ারে কালো ছাপ ফেলে দেয়। এক বলি পরিচালক জানিয়েছিলেন যে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে নগ্ন অথবা অর্ধনগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে আয়েশাকে। কিন্তু আপত্তি জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
আয়েশার দাবি, তিনি খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করলে দর্শক তাঁকে ‘বি গ্রেড’ ছবির নায়িকাদের মতো ভাবতে শুরু করবেন। পরে ‘বডি ডাবল’-এর সাহায্যে সেই নগ্ন দৃশ্য শুট করানো হয়। কিন্তু আয়েশা সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ছবিমুক্তির পর পরিচালকের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন নায়িকা।
বিয়ের পর বলিপাড়া থেকে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আয়েশা। ১২ বছরের বিরতির পর ২০২২ সালে ‘হাশ হাশ’ ওয়েব সিরিজ়ের মাধ্যমে ফের ক্যামেরার সামনে দেখতে পাওয়া যায় তাঁকে।
দক্ষিণী ছবির হাত ধরে কেরিয়ার শুরু করলেও ২০০৩ সালে ‘তেরে নাম’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন ভূমিকা চাওলা। সলমন-ভূমিকা অভিনীত এই ছবিটি বক্সঅফিসে দারুণ ব্যবসাও করে। কিন্তু বলিপাড়ায় নিজের কেরিয়ার তেমন গড়তে পারেননি ভূমিকা।
বিয়ের পর অভিনয়জগতের সঙ্গে যোগাযোগও কমে যায় ভূমিকার। দক্ষিণী ছবিতে অধিকাংশ সময় অভিনয় করতেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবার হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন ভূমিকা।
২০২৩ সালে আবার সলমনের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ভূমিকাকে। চলতি বছরে ‘স্কুল’ নামের তামিল ভাষার একটি ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১০ সালে ‘বীর’ ছবিতে সলমনের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন জ়ারিন খান। তার পর একাধিক হিন্দি ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে অতিথিশিল্পী হিসাবে। ‘হেট স্টোরি ৩’, ‘অকসর ২’, ‘১৯২১’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করলেও তা দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি। সলমনের নায়িকা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেও বর্তমানে রোশনাইয়ের আড়ালে রয়েছেন জ়ারিন।
সলমনের হাত ধরে বড়পর্দায় কাজ শুরু করেছেন ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শো খ্যাত শেহনাজ় গিল। ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কেরিয়ারের প্রথম ছবি মুক্তির পর অবশ্য একটি হিন্দি ছবির গানের দৃশ্যে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন শাহনাজ়। তাঁর কেরিয়ার কোন খাতে বয়ে যায়, তা-ই দেখার।
সব ছবি: সংগৃহীত।