Drone wall

রুশ হানাদার ড্রোন রুখতে বাল্টিকের ধারে ‘পাঁচিল’ তুলবে ইউরোপ! মস্কোকে মাত দিতে এককাট্টা নেটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন?

সম্প্রতি পোল্যান্ডের আকাশসীমায় একঝাঁক রুশ ড্রোন ও এস্টোনিয়ায় যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করার ফলে বিপদের আশঙ্কা করছে ছোট ছোট ইউরোপীয় দেশগুলি। বার বার ইউরোপীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠেছে মস্কোর দিকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৯
০১ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর মহড়া হিসাবে ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আমেরিকা। আর সেই ভিয়েতনামের যুদ্ধেই প্রথম ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল ড্রোন। কাজ ছিল, আকাশে উড়তে উড়তে ভিয়েতনামের যোদ্ধাদের খবর সংগ্রহ। সমরসজ্জা ও কৌশল যত আধুনিক হয়েছে ততই উন্নত হয়েছে ড্রোন। আধুনিক যুদ্ধকৌশলের রূপরেখাই পাল্টে দিয়েছে ড্রোনের ব্যবহার।

০২ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

এ যাবৎ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, রাশিয়া, ইউক্রেন, চিন, ইজ়রায়েল, ইরান, ভারত ও পাকিস্তান-সহ পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ড্রোন ব্যবহার করেছে। ড্রোন সাধারণত দু’ধরনের। একটি ‘আনম্যানড এয়ার ভেহিক‌ল’ বা ইউএভি। এগুলি আকারে বড়। আর অন্যটি ‘মাইক্রো এয়ার ভেহিকল’ বা এমএভি। এগুলি আকারে ছোট। আধুনিক লড়াইয়ে ‘গেম চেঞ্জার’-এর ভূমিকা নিচ্ছে মানববিহীন এই উড়ুক্কু যান।

০৩ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে গোটা বিশ্ব দেখেছে ড্রোনের বহুল ব্যবহার। দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। প্রতি মুহূর্তে পাল্টাচ্ছে যুদ্ধের পরিস্থিতি। ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে নয়, বরং ড্রোন পাঠিয়ে শত্রুশিবিরকে ছিন্নভিন্ন করছে দুই যুযুধান। আত্মঘাতী ড্রোনের সাহায্যে পর পর হামলা চালাচ্ছে মস্কো ও কিভ।

Advertisement
০৪ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

রাশিয়া-ইউক্রেনের এই সংঘাতকে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ‘ড্রোন যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন সমরকুশলীরা। চলতি বছরের ১ জুন রুশ ভূখণ্ডের ভিতরে পাঁচটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে নিখুঁত ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। কিভের ওই সামরিক অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন স্পাইডার ওয়েব’।

০৫ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

সেই হামলার পর হাত গুটিয়ে বসে ছিল না রুশ সেনাবাহিনী। পাল্টা আঘাত করার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে হানাদার ড্রোনকে সীমান্ত এলাকায় পাঠিয়ে পেশিশক্তি প্রদর্শন করে মস্কো। গত মাসের শেষের দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অবস্থান বদল করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে খোঁচা দেন ট্রাম্প।

Advertisement
০৬ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

নেটোর (আমেরিকা এবং তার সামরিক সহযোগী দেশগুলির জোট) সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ করে ইউক্রেন তার হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সেই ঘোষণার পর নেটোভুক্ত রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আটঘাট বাঁধতে চলেছে। মস্কো-কিভের দ্বৈরথে সীমান্তবর্তী দেশগুলি নিজেদের ভূখণ্ডের সুরক্ষা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

০৭ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

সম্প্রতি পোল্যান্ডের আকাশসীমায় একঝাঁক রুশ ড্রোন ও এস্টোনিয়ায় যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করার ফলে বিপদসঙ্কেত অনুভব করছে ছোট ছোট ইউরোপীয় দেশগুলি। বার বার ইউরোপীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠেছে মস্কোর দিকে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিয়েছে পুতিনের দেশ। রাশিয়ার ড্রোন হানা আটকাতে ও প্রতিরক্ষা জোরদার করার উদ্দেশ্যে বুধবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা।

Advertisement
০৮ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

সেই বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েন একটি সুবিশাল ড্রোন-প্রাচীর তৈরির প্রস্তাব দেন। মূলত বাল্টিক সাগরের ধারের দেশগুলি, যারা যে কোনও দিন রাশিয়ার আক্রমণের আশঙ্কায় ভুগছে, তারাই এ বিষয়ে বিশেষ তদ্বির করছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। লাটভিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, এস্টোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার মতো দেশগুলি থেকে ড্রোন-বিরোধী প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য চাপ আসছে ইউনিয়নের উপর।

০৯ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

ইইউ-এর শীর্ষ সম্মেলনের পর আয়োজক দেশে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন জানিয়েছেন, এ বার ইউরোপকে আত্মরক্ষার পথে এগিয়ে আসতে হবে। হুমকির মুখে থাকা দেশগুলিকে ড্রোন-বিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তার জন্য একটি ‘ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক’ তৈরি করা দরকার। যে সুরক্ষা ব্যবস্থা গলে ড্রোন অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। সেই সুরক্ষা জালে পড়লে শত্রুর ড্রোনগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।

১০ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

প্রস্তাব অনুযায়ী ইউরোপীয় দেশের সীমান্ত জুড়ে বসবে ডিটেকশন ও ট্র্যাকিং সিস্টেম। সেগুলি নিচু দিয়ে হঠাৎ উড়ে আসা ড্রোনের গতিবিধিকে চিহ্নিত করবে। শত্রুপক্ষের হানা আটকাতে সীমান্তে ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থাও মোতায়েন করা হবে।

১১ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

উরসুলা জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছাকাছি হওয়ার কারণে ইউরোপের পূর্ব প্রান্তের দেশগুলিকে এই সুরক্ষাবলয়ের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে এই ‘ড্রোন-প্রাচীর’কে সমগ্র মহাদেশের সুরক্ষা ঢাল হিসাবে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে ইউনিয়নের। নেটোর সচিব মার্কো রুটও ইউনিয়নের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। ড্রোন-প্রাচীরের ধারণাটিকে সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

১২ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ১০টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর, ইইউ-এর প্রতিরক্ষা কমিশনার আন্দ্রে কুবিলিয়া বলেন, ‘‘আকাশসীমা লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশ আটকাতে ড্রোন-প্রাচীর তৈরি অগ্রাধিকার পাবে। রাডার এবং অ্যাকোস্টিক সেন্সর-সহ একটি কার্যকরী শনাক্তকরণ ব্যবস্থা থাকা জরুরি।’’ সেই সঙ্গে ড্রোনগুলিকে আটকানো এবং ধ্বংস করার ক্ষমতাও থাকা আবশ্যিক বলে মত তাঁর।

১৩ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

রাশিয়াকে রুখতে একজোট নেটো-ভুক্ত দেশগুলি। এই অভিযানে তারা পাশে চাইছে ইউক্রেনকেও। ইইউ জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে চায়। কারণ চার বছরের যুদ্ধের পর রুশ ড্রোন মোকাবিলায় যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এই প্রস্তাবে সম্মতিসূচক মনোভাব দেখিয়েছে কিভও।

১৪ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ইউক্রেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। রুশ হানা আটকাতে নিজেদের সামরিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জ়েলেনস্কি। কম খরচে সেন্সরের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি ও মস্কোর পাঠানো ড্রোন ধ্বংস করার উপায় তৈরি করেছে বলেও দাবি করেছে ইউক্রেন।

১৫ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

ড্রোনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ইউক্রেন হল ইউরোপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দেশ। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বহু দেশের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা নেটোর সাহায্য ছাড়া এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। উরসুলা জানিয়েছেন, শক্তিশালী সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইউক্রেন এবং নেটোর কাঁধে ভর না দিলে এই প্রকল্প বাস্তবে ডানা মেলবে না বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

১৬ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

তবে এই প্রকল্পটি সম্পর্কে বিশদে তেমন কিছু জানায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে, সে সম্পর্কেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন ইউরোপীয় নেতারা। যা তথ্য দিয়েছেন তাও ভাসা ভাসা এবং পরস্পরবিরোধী। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, ড্রোন-প্রাচীর তৈরিতে কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।

১৭ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

আবার লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী এভিকা সিলিনা বুধবার কোপেনহেগেনে সাংবাদিকদের জানান, তিন বছর নয়, বাস্তবে অনেক কম সময়ে তৈরি হয়ে যাবে ড্রোন-প্রাচীর। তবে কবে থেকে এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে তা স্পষ্ট ভাবে জানায়নি ইউনিয়নের কোনও দেশই।

১৮ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

প্রকল্পের কথা উঠলেই আসে খরচের কথা। সেখানেও টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মানির মতো আর্থিক শক্তিধর দেশগুলি বর্তমানে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলতে চাইছে। ফলে তারা অন্যদের নিরাপত্তার আর্থিক বোঝা বহন করতে অনিচ্ছুক। ইউনিয়নের আর এক শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধান ইমানুয়েল মাকরঁ ‘ড্রোন-প্রাচীর’ শব্দবন্ধটি নেয়েই দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি মনে করছেন, বাস্তবে এই পরিকল্পনাটির প্রয়োগ অনেক বেশি জটিল।

১৯ ১৯
Europe Plans to set up a drone wall

ইইউ সম্প্রতি ১৫ হাজার কোটি ইউরোর একটি ঋণ প্রকল্পও প্রকাশ্যে এনেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি সেই প্রস্তাব লুফে নিয়েছে। আবার কিছু কিছু দেশ মনে করছে, যেহেতু তারা মূলত রাশিয়ার হাত থেকে বাকি ইউরোপকে রক্ষা করছে, তাই এই প্রচেষ্টাটি একটি সাধারণ প্রচেষ্টা হওয়া উচিত। প্রকল্পটির ব্যয় কত হবে তার কোনও সুনির্দিষ্ট হিসাব এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ইইউর প্রতিরক্ষা কমিশনার কুবিলিয়াস জানিয়েছেন এটির খরচ কয়েক হাজার কোটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি