South Korea’s Suicide Crisis

দৈনিক আত্মঘাতী হন ৪০ জন! ফলতে শুরু করেছে প্রতিযোগিতার অভিশাপ, কমছে জন্মহার, কে-পপের দেশের ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বের দরবারে দক্ষিণ কোরিয়ার সামগ্রিক চিত্র যে ভাবে তুলে ধরা হয় তার থেকে বেশ কিছুটা আলাদা এই দেশটির বাস্তব অবস্থা। দেশটির ভিতরে রয়েছে অন্য একটি ‘দেশ’। উন্নত প্রযুক্তি, কে-পপ এবং কে-ড্রামা দিয়ে বিশ্বকে প্রভাবিত করে এমন একটি গতিশীল, প্রাণবন্ত দেশের ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ ০৮:০২
০১ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

দক্ষিণ কোরিয়া নামটা শুনলেই সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোরিয়ান ব্যান্ড থেকে শুরু করে সিরিয়াল, সিরিজ়গুলি। ‘কোরিয়ান ড্রামা’ অথবা রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি বা ওয়েব সিরিজ়ের দিকে বরাবর দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কোরীয় ছবিনির্মাতারা। ভারত থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশটি। চিনের উপকণ্ঠে অবস্থিত এই দেশটির বিনোদন জগৎ নিয়ে ভারত-সহ সমগ্র বিশ্বের উৎসাহের অন্ত নেই।

০২ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

কোরীয় ড্রামায় দেশটির সামগ্রিক চিত্র যে ভাবে তুলে ধরা হয় তার থেকে বেশ কিছুটা আলাদা এই দেশটির বাস্তব অবস্থা। দেশটির ভিতরে রয়েছে অন্য একটি দেশ। উন্নত প্রযুক্তি, কে-পপ এবং কে-ড্রামা দিয়ে বিশ্বকে প্রভাবিত করে এমন একটি গতিশীল, প্রাণবন্ত দেশের ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আত্মহত্যা, মদ্যপান, উদ্বেগ এবং হতাশার হার সর্বোচ্চ দক্ষিণ কোরিয়ায়!

০৩ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

এই সামাজিক ব্যাধিগুলি ধীরে ধীরে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মকে। সামাজিক ব্যাধির এই সংক্রমণের জন্য কোরিয়ান শিক্ষাব্যবস্থাও বড় অংশে দায়ী বলে মনে করা হয়। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার শিক়ড়েই রয়েছে সমস্যা। কারণ প্রাথমিক পাঠেই শিশুদের মধ্যে চারিয়ে দেওয়া হয় প্রতিযোগিতার বীজ।

Advertisement
০৪ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

প্রাথমিক স্কুলগুলিতেই অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে শিশুদের শিক্ষাদান শুরু হয়। কোরীয় শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি এতটাই কঠোর যে মাত্র চার বছর বয়সে প্রাথমিক বি‌ভাগেই প্রবন্ধ লেখায় হাত পাকানো শুরু করতে হয়। মাত্র ১৫ মিনিটে বড় বড় প্রবন্ধ লেখার কৌশল আয়ত্ত করতে হয় একরত্তি পড়ুয়াদের। এই বয়সে অন্যান্য দেশে ভাল ভাবে পেন বা পেনসিল ধরতেই পারে না পড়ুয়ারা।

০৫ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

ইঁদুরদৌড়ে শামিল করার জন্য ওই বয়সেই তাদের স্কুলশিক্ষার পাশপাশি বাইরে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়তে পাঠানো হয়। অঙ্ক, ইংরেজি, সাহিত্যের পাশাপাশি খেলাধুলো, শিল্পকলাতেও দড় করে তুলতে কোরীয় বাবা-মায়েরা তাঁদের ছেলেমেয়েকে এই গ়ড্ডলিকা প্রবাহে ঠেলে দেন। তাঁদের এমন পাঠ দেওয়া হয় যাতে তাদের মনে ‘সব কিছু পেতেই হবে’ এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি হয়ে যায় শৈশবেই।

Advertisement
০৬ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

কোরীয় পড়ুয়াদের মধ্যে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়ার প্রচলন এতটাই বেশি যে প্রাথমিক বি‌ভাগের পাশাপাশি হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের নির্ধারিত সময়ের পর মধ্যরাত পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অভিভাবকেরা ‘প্রাইভেট টিউশন’কে সন্তানের জন্য বিনিয়োগ বলে ধরে নেন। তাঁরা ধরে নেন এটিই সন্তানের ভবিষ্যতের ভিত্তি।

০৭ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা তাঁদের রোজগারের ৩০ শতাংশ ব্যয় করেন তাঁদের সন্তানের গৃহশিক্ষকদের জন্য। আর এই ভাবেই দক্ষিণ কোরিয়ায় গৃহশিক্ষকতার ‘বাজার’ লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে এই দেশে ২৯ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েই।

Advertisement
০৮ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

অত্যধিক প্রতিযোগিতার অভিশাপ ফলতে শুরু করে দিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে। দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা মানসিক অসুস্থতার রূপ নিচ্ছে। ফলস্বরূপ বাড়ছে আত্মহত্যার পরিমাণ। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার সংখ্যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

০৯ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

‘কোরিয়া ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড’-এর প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে মোট ১৪ হাজার ৪৩৯টি আত্মহত্যার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। দৈনিক গড়ের হিসাবে যা ৩৯.৫টি। তথ্য আরও বলছে, ২০২৪ সালে প্রতি ১ লক্ষ কোরীয় অধিবাসীদের মধ্যে ২৮.৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।

১০ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

যে হারে তরুণ প্রজন্ম অসুস্থ প্রতিযোগিতা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তাতে ২০৬০ সালে দেশটিতে শুধু বৃদ্ধরাই বেঁচে থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার খুবই কম। জীবনযাত্রার জটিল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সন্তান জন্ম না দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গড় জন্মহারে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে সে দেশে।

১১ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

যে সব দেশে কয়েক দশক ধরে নবজাতকের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে তাদের মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বব্যাপী সমস্ত উন্নত দেশগুলিতে জন্মের হার কমতে দেখা গিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো চরম সঙ্কটের মুখোমুখি নয় কোনও দেশই।

১২ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশটির জন্মহার এতটাই নেমে গিয়েছে যে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শতাব্দীর শেষ নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট প্রজননের হার (এক জন মহিলার প্রজনন বয়সে গড় সন্তানের সংখ্যা) দাঁড়িয়েছে ০.৭২।

১৩ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

২০২২ সালে এই গড় ছিল ০.৮১। একটি দেশের সুস্থ ও স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য এই গড়ের প্রয়োজনীয় মান হল ২.১। অর্থাৎ, এক জন দক্ষিণ কোরীয় তরুণীকে কমপক্ষে দু’জন শিশুর জন্ম দিতে হবে। কমতে কমতে এখন জন্মহার এসে দাঁড়িয়েছে ০.৭ শতাংশে, যা সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তরুণ প্রজন্মের দম্পতিরা এক জন শিশুরও জন্ম দিতে নারাজ।

১৪ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

দক্ষিণ কোরিয়া আসলে আদ্যন্ত বর্ণবাদী দেশ। চামড়ার রং থেকে শুরু করে মুখের গড়ন, বাহ্যিক সৌন্দর্যই কোরীয় সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাহ্যিক সৌন্দর্যকে এতটাই প্রাধান্য দেওয়া হয় যে, কলেজ পাশ করার পর ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসাবে পান প্লাস্টিক সার্জারির খরচ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজেদের আরও ‘সুন্দর’ করে তোলেন তাঁরা। সে দেশে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন তরুণী প্লাস্টিক সার্জারি করান।

১৫ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

দেশের বিভিন্ন সংস্থায় চাকরির ইন্টারভিউতেও সৌন্দর্যকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কে কত সুন্দর দেখতে, কার গায়ের রং কতটা উজ্জ্বল এবং ফর্সা, তার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়। সৌন্দর্য এবং বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য কোরিয়ার চাকরির বাজারে এক সময় এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, নিয়োগ নিশ্চিত করার আগে কোনও কর্মচারীর মুখ না দেখার নিয়ম চালু হয়েছিল বেশ কিছু সংস্থায়।

১৬ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পরও ইঁদুরদৌড় থামে না কোরীয়দের। দেশের তিন নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে ভর্তি হতে না পারলে জীবনটাই বৃথা মনে করেন কোরীয়রা। অন্য দিকে, কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর কোরীয় চাকরীজীবীদের জীবন থেকে অবসর সময় বা ব্যক্তিগত সময় নামক বস্তুটি উধাও হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মজীবনের ভারসাম্য সবচেয়ে খারাপ। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করার কারণে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন তলানিতে ঠেকেছে।

১৭ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশটি উন্নত দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করার জন্য পরিচিত। ২০২১ সালে, দক্ষিণ কোরীয়রা বছরে গড়ে ১,৯১৫ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন। নির্দিষ্ট মাপকাঠির চেয়ে প্রায় ২০০ ঘণ্টা বেশি। অতিরিক্ত কাজের চাপ প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তিগত জীবনেও।

১৮ ১৮
South Korea’s Suicide Crisis

ন্যাশনাল হেল্‌থ ইনশিয়োর্যা ন্স সার্ভিসের গবেষণা বলছে, শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের কারণে অকালে বুড়িয়ে যাচ্ছেন সেখানকার তরুণ-তরুণীরাও। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সিদের মধ্যে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গাউট এবং আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি