Indian-Russia Trade in Yuan

চিনা মুদ্রায় রুশ তেল কিনে ‘শত্রু’র হাত শক্ত করছে দিল্লি? মস্কোর সঙ্গে রফতানি ঘাটতিতে রুপি-রুবল বাণিজ্যের অপমৃত্যু?

সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’-এর দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে চিনা মুদ্রা ইউয়ানে রুশ খনিজ তেল আমদানি শুরু করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন’। তবে কি রুপি-রুবল বাণিজ্যের অকালমৃত্যু আসন্ন? উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:২৭
০১ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

ভারতীয় টাকা নয়। চৈনিক মুদ্রায় রুশ তেলের দাম মেটাচ্ছে নয়াদিল্লি। আর সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। রুপি-রুবল বাণিজ্যের তবে কি অকালমৃত্যু? নাকি মস্কোর এ-হেন অবদারের নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও উদ্দেশ্য? এই ইস্যুতে আর্থিক বিশ্লেষক মহলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। পাশাপাশি ঘুরে ফিরে এসেছে ডলারবিহীন লেনদেনের প্রসঙ্গটিও।

০২ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

সম্প্রতি রেকর্ড ছা়ড়ে রাশিয়ার থেকে ভারতের গ্যালন গ্যালন অপরিশোধিত খনিজ তেলের আমদানি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন’ শেষ দুই বা তিনটি চালানের ক্ষেত্রে ‘তরল সোনা’র দাম মেটাতে চিনা মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করেছে। উল্লেখ্য, মস্কোর তেল সরবরাহকারী সংস্থাগুলি বেজিঙের মুদ্রা আরও বেশি পরিমাণে চাইছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৩ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

রুপি-রুবল বাণিজ্য নিয়ে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনেক দূর এগোলেও মস্কোর থেকে খনিজ তেল বা উরাল ক্রুড কখনওই স্থানীয় মুদ্রায় আমদানি করতে পারেনি নয়াদিল্লি। এত দিন পর্যন্ত এ দেশের তেল সংস্থাগুলি ডলার বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মুদ্রা দিরহামে দাম মেটাচ্ছিল। কিন্তু, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়তে থাকায় এতে সমস্যার মুখে পড়ে ক্রেমলিন। ফলে বাধ্য হয়ে ডলারে ‘তরল সোনা’র রফতানি প্রায় বন্ধ করে দেয় তারা।

Advertisement
০৪ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

‘রয়টার্স’-এর দাবি, এর পরেও ‘বন্ধু’ ভারতকে কিছুটা ছাড় দিয়েছিল রাশিয়া। নয়াদিল্লির সংস্থাগুলিকেই একমাত্র উরাল ক্রুড পাঠিয়ে ডলার নিচ্ছিল মস্কো। এ ছাড়া আমিরশাহির দিরহাম তাদের দ্বিতীয় পছন্দ বললে অত্যুক্তি হবে না। দিনের শেষে অবশ্য এই দুই মুদ্রাকে ইউয়ানে বদলাতে হচ্ছিল ক্রেমলিনের তেল সংস্থাগুলিকে। কারণ পূর্ব ইউরোপের দেশটির পক্ষে চিনা মুদ্রার সঙ্গে রুবলে বাণিজ্য করা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই সহজ।

০৫ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বেঁধে দেওয়া দামের মূল্যসীমায় উরাল ক্রুড বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। তবে ‘তরল সোনা’র দাম ডলারে ধার্য করার ক্ষেত্রে মস্কোর কোনও বাধা নেই। পাশাপাশি চৈনিক মুদ্রা ইউয়ানেও নির্ধারণ করতে পারবে তারা। ফলে বার বার দ্বিতীয় বিকল্পটিকে বেছে নিতে দেখা যাচ্ছে ক্রেমলিনকে।

Advertisement
০৬ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

উরাল ক্রুড আমদানিতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ইউয়ান ব্যবহার কোনও নতুন ঘটনা নয়। ২০২৩ সালে রাশিয়ার ‘তরল সোনা’র দাম মেটাতে বহুল পরিমাণে চিনা মুদ্রা ব্যবহার করছিল তারা। কিন্তু, ওই সময়ে সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লি ও বেজিঙের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জটিলতা দেখা দিলে সেখান থেকে সরে আসে ওই সমস্ত সংস্থা।

০৭ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

সরকারি তেল কোম্পানিগুলি এ ব্যাপারে পিছিয়ে গেলেও বেসরকারি সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত বদল করেনি। গত দু’বছর ধরে ইউয়ান বিনিময় করেই রুশ উরাল ক্রুড আমদানি করে গিয়েছে তারা। চলতি বছরের অগস্ট-সেপ্টেম্বরে ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিওর (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন) বৈঠকে যোগ দিতে চিন সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পরেই কিছুটা অন্য দিকে বাঁক নেয় নয়াদিল্লি ও বেজিঙের সম্পর্ক।

Advertisement
০৮ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

গত সাত বছরে একবারের জন্যেও চিন সফরে যাননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। এসসিওর বৈঠকের ফাঁকে আলাদা করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর পরেই সীমান্ত সংঘাত মিটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দেয় বেজিং। ফলে ইউয়ান না ব্যবহার করার কঠোর নীতি থেকে পিছু হঠে ভারতও।

০৯ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

বিশ্লেষকদের দাবি, এ দেশের তেল সংস্থাগুলির ইউয়ানে রুশ উরাল ক্রুডের দাম মেটানোর ফল হতে চলেছে সুদূরপ্রসারী। এতে কম খরচে বেশি পরিমাণে মস্কোর থেকে ‘তরল সোনা’ আমদানি করতে পারছে ভারত। কারণ ডলারের নিরিখে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে রেখেছে চিন। পাশাপাশি, এই সিদ্ধান্তের জেরে পূর্ব ইউরোপের দেশটির সঙ্গে লেনদেন অনেক সহজ হয়েছে।

১০ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

রাশিয়ার দিক থেকে রুপি-রুবল লেনদেনে উৎসাহ হারানোর মূল কারণ হল বাণিজ্যিক ঘাটতি। ২০২৪-’২৫ আর্থিক বছরে নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬,৯০০ কোটি ডলার। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪৮০ কোটি ডলারের পণ্য ক্রেমলিনকে রফতানি করতে পেরেছে ভারত। অন্য দিকে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬,৪০০ কোটি ডলার।

১১ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

কিন্তু রুশ-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে এই সমস্যা নেই। গত অর্থবর্ষে (২০২৪-’২৫) এই দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে মস্কোর থেকে ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বেজিং। আর ড্রাগনভূমি থেকে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সামগ্রী গিয়েছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে।

১২ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

বর্তমানে রাশিয়ার থেকে মূলত দু’টি জিনিস কিনছে ভারত। একটি হল খনিজ তেল এবং দ্বিতীয়টি সমরাস্ত্র। এর মধ্যে প্রথমটিকে বাদ দিলে দিল্লি-মস্কো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ হাজার কোটি ডলারও ছাড়াবে না। চিনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। বেজিঙের থেকে বিরল খনিজ, বৈদ্যুতিন সারঞ্জাম এবং সেমিকন্ডাক্টর বিপুল মাত্রায় কিনে থাকে ক্রেমলিন। বিনিময়ে খনিজ তেল, হাতিয়ার এবং মহাকাশ গবেষণার বিভিন্ন সামগ্রী ড্রাগনভূমিতে পাঠায় তারা।

১৩ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

আর তাই ভারতীয় টাকার চেয়ে চিনা ইউয়ানের কদর রুশ ব্যবসায়ীদের কাছে অনেক বেশি। সেই কারণেই খনিজ তেলের দাম মেটানোর ক্ষেত্রে বেজিঙের মুদ্রাটি নয়াদিল্লি ব্যবহার করুক, চাইছেন তাঁরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ দেশে আসবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে দু’তরফে বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে রুপি-রুবল দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে সমাধানসূত্র বের হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

১৪ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাশিয়ার থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা ছাড়া তাঁর নতুন এইচ১-বি ভিসা নীতির জেরে বিপুল টাকা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের। ফলে মরিয়া হয়ে বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।

১৫ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের ঢালাও চাকরি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া। তা ছাড়া মহাকাশ গবেষণা, পর্যটন-সহ অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাইছে মস্কো। ক্রেমলিনের সিলিকন ভ্যালি এ দেশের টেক জায়ান্টগুলি পা জমাতে পারলে রুপি-রুবল লেনদেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৬ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

তবে ভারতীয় সংস্থাগুলি ইউয়ানে রুশ উরাল ক্রুড কিনতে শুরু করায় চৈনিক মুদ্রাটি যে শক্তিশালী হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। উল্টো দিকে এর জেরে কমেছে ডলারের চাহিদা। সম্প্রতি এই ইস্যুতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে মার্কিন সংস্থা ‘জেপি মর্গ্যান’। তাদের দাবি, আগামী দিনে ডলারের আন্তর্জাতিক মুদ্রার তকমা হারানোর প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

১৭ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

সেই কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে বিদেশি মুদ্রাভান্ডারে সোনার পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও। বিদেশি মুদ্রাভান্ডারের প্রায় ১০ শতাংশ ইতিমধ্যেই ‘হলুদ ধাতু’তে ভরে ফেলেছে ‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’ বা আরবিআই। এই পরিমাণ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে মোদী সরকার।

১৮ ১৮
India importing Russian crude oil by Chinese currency, know the consequences

রুশ তেল কেনার ক্ষেত্রে ইউয়ান ব্যবহারের একটি অসুবিধার দিকও রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় টাকাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা রয়েছে আরবিআইয়ের। এই পদক্ষেপে সেই প্রক্রিয়ায় ধাক্কা লাগতে পারে। তা ছাড়া এতে ভারতীয় মুদ্রা দুর্বল হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। পুতিনের সফরে এই সমস্যার সমাধানে এ দেশের ব্যাঙ্কে আটকে থাকা রুবল বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে, খবর সূত্রের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি