who is priya jhingan

এক চিঠিতেই ঘুরে যায় কেরিয়ারের অভিমুখ! ডাক পান ভারতীয় সেনায়, ‘ক্যাডেট নম্বর ১’ হয়ে অচলায়তন ভাঙেন হিমাচলি কন্যা

সেনায় যোগদান করা নিয়ে কেবল প্রচলিত ধারণাগুলিই ভেঙে দেননি প্রিয়া। পরবর্তী কালের বহু ভারতীয় নারীর কাছেই তিনি পথপ্রদর্শক। প্রিয়ার পদক্ষেপ অনেককেই ভাবাতে শুরু করেছিল যে সশস্ত্র বাহিনীতেও মহিলাদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫০
০১ ১৭
who is priya jhingan

১৯৯২ সালের আগে পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল শুধুমাত্র চিকিৎসক এবং সেবিকা হিসাবে। জলপাই সবুজ রঙের পোশাকটি গায়ে তোলার অধিকার দেওয়া হয়নি ভারতীয় মহিলাদের। সেই নিয়মটি ভাঙার কান্ডারি হিসাবে যাঁর নামটি উঠে আসে তিনি এক হিমাচলি কন্যা।

০২ ১৭
who is priya jhingan

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এক নতুন যুগের সূচনা হয় তাঁর হাত ধরে। চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি (ওটিএ) এক ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকে। ২৫ জন ভারতীয় মহিলা ভারতীয় সেনার খাকি পোশাকে অফিসার পদমর্যাদার পদক গ্রহণ করেন। এই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এক পুলিশ আধিকারিকের কন্যা।

০৩ ১৭
who is priya jhingan

তিনি মেজর প্রিয়া ঝিঙ্গান। তাঁর পরিচয় চিরকাল ‘লেডি ক্যাডেট নং ১’ হিসাবে উল্লিখিত থাকবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নথিতে। ১৯৯২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী প্রথম মহিলা ক্যাডেট তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চিকিৎসা-বহির্ভূত ভূমিকায় যোগদানকারী প্রথম মহিলা।

Advertisement
০৪ ১৭
who is priya jhingan

১৯৯২ সালের আগে ভারতের সশস্ত্র সেনাদলে মহিলারা যোগ দিতে পারতেন ঠিকই। কিন্তু এক গণ্ডি টেনে দেওয়া ছিল— শুধুমাত্র চিকিৎসক এবং সেবিকা। জলপাই সবুজ রঙের পোশাক পরে অফিসার হিসাবে নারীদের নিয়োগের কোনও নিয়ম ছিল না সেনায়।

০৫ ১৭
who is priya jhingan

সেই ছক ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রিয়া। সেনায় যোগদান করা নিয়ে কেবল প্রচলিত ধারণাগুলিই ভেঙে দেননি, বরং পরবর্তী কালে বহু ভারতীয় নারীর কাছেই তিনি পথপ্রদর্শক। প্রিয়ার পদক্ষেপ অনেককেই ভাবতে শুরু করিয়েছিল যে সশস্ত্র বাহিনীতেও মহিলাদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে।

Advertisement
০৬ ১৭
who is priya jhingan

বাবা পুলিশ আধিকারিক। তাই প্রথমে পুলিশে যোগদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন প্রিয়া। প্রিয়ার জন্য ভাগ্যের অন্য পরিকল্পনা ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর কেরিয়ারের ভাবনার মোড় ঘুরে যায়। বাড়ির পরিবেশ ছোট থেকে দেশসেবার চিন্তার বীজ বুনে দিয়েছিল প্রিয়ার মনে। স্কুলে পড়ার সময় থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আগ্রহ তাঁকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করে।

০৭ ১৭
who is priya jhingan

কিন্তু ভাবনা থাকলেও সেনাবাহিনীতে প্রবেশের পথে বাধা ছিল লাল ফিতের ফাঁস। কলেজে পড়াকালীন সংবাদপত্রে ভারতীয় সেনায় নিয়োগের একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তাঁর। সেখানে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য তরুণদের আহ্বান করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনটি দেখে তিনি হতাশ হয়েছিলেন এটা জেনে যে চিকিৎসক ও সেবিকা ছাড়া মহিলাদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ নেই।

Advertisement
০৮ ১৭
who is priya jhingan

নিয়মের চক্রব্যূহে আটকে পড়ে থাকতে রাজি ছিলেন না প্রিয়া। কোনও কিছু না ভেবেই তৎক্ষণাৎ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএফ রডরিগেজ়কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে একটি চিঠি লিখে ফেলেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী। যথাসময়ে উত্তরও আসে তাঁর কাছে। সেনাপ্রধান রডরিগেজ় প্রিয়াকে লিখেছিলেন, সেনাবাহিনীতে তাঁদের মতো তরুণ এবং উৎসাহী মহিলাদের প্রয়োজন। তাঁর এই প্রস্তাব ভেবে দেখবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০৯ ১৭
who is priya jhingan

সেনাপ্রধানের চিঠিটি আসার পর প্রিয়াকে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৯২ সালে তাঁর স্বপ্নের কেরিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ মেলে। জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল শাখায় অফিসারদের জন্য দু’টি শূন্যপদ ছিল। প্রিয়া সেই পদের জন্য আবেদন করেন। সশস্ত্র সীমা বলের পক্ষ থেকে একটি সাক্ষাৎকারের বিজ্ঞপ্তি আসে তাঁর কাছে। সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন প্রিয়া।

১০ ১৭
who is priya jhingan

পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আধিকারিক হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৯২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ২৪ জন মহিলা ক্যাডেটের সঙ্গে প্রিয়া প্রশিক্ষণ শুরু করেন। অফিসার প্রশিক্ষণ চলেছিল এক বছর ধরে। ১৯৯৩ সালে ‘ক্যা়ডেট নম্বর ১’ তকমা সেঁটে জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল শাখায় যোগ দেন তিনি। সেনাবাহিনীর আইনি বিষয়গুলি নিয়ে দেখভাল করে এই শাখাটি।

১১ ১৭
who is priya jhingan

প্রিয়ার যাত্রা সহজ ছিল না। সামরিক পরিবেশ মূলত পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রিয়া ও বাকি ২৪ জনকে। কঠোর পরিশ্রম এবং তাঁর স্বপ্নের প্রতি নিষ্ঠা সেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। প্রশিক্ষণের সময় তাঁর সাফল্য আলোচনার বিষয় হয়েছিল বাহিনীতে। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সেনাবাহিনীতে প্রথম বারের মতো রৌপ্য পদক পেয়ে স্নাতক হন তিনি।

১২ ১৭
who is priya jhingan

প্রিয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ‘‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি এই অচলায়তন ভাঙছি। আমার কেবল মনে হয়েছিল যে আমি অন্য যে কোনও ব্যক্তির মতোই সক্ষম। স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় আমি এতটাই মুগ্ধ ছিলাম যে এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে মাথা ঘামাইনি। পুরুষ ক্যাডেটরা আমাদের সঙ্গে ঠিক তাঁদের সতীর্থদের মতোই আচরণ করতেন। তাঁরা প্রয়োজনে তিরস্কার করতেন। আবার প্রশংসা করতেন, পরামর্শ দিতেন।’’

১৩ ১৭
who is priya jhingan

ভারতীয় সেনাবাহিনী মহিলাদের যুদ্ধক্ষেত্রে অনুমতি নেই বলে প্রিয়াকে আইন স্নাতক হিসাবে বিবেচনা করে বিচারক অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। পদোন্নতির জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁকে ১০ বছর ধরে ওই বি‌ভাগেই চাকরি করে যেতে হয়। মেজর পদে উন্নীত হওয়ার পর ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন প্রিয়া।

১৪ ১৭
who is priya jhingan

অবসর গ্রহণের পর প্রিয়া হরিয়ানা জুডিশিয়াল সার্ভিসেসের পরীক্ষায় পাশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে যোগদান করেননি। এর পর তিনি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্যাংটকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নেন তিনি।

১৫ ১৭
who is priya jhingan

পরবর্তী কালে শিক্ষকতার প্রতি তাঁর আগ্রহ থেকে সানওয়ারের লরেন্স স্কুলে ইংরেজি শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। এ ছাড়া নেতৃত্ব কী ভাবে দিতে হয় সেই সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করেন ভারতীয় সেনার এই অবসরপ্রাপ্ত মেজর।

১৬ ১৭
who is priya jhingan

প্রিয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনোজ মলহোত্রের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন। এই দম্পতির এক পুত্রসন্তান রয়েছে। বর্তমানে চণ্ডীগড়ে থাকেন প্রিয়া।

১৭ ১৭
who is priya jhingan

প্রিয়া জানিয়েছেন, কাউকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য জোর করা যায় না। সেই আগ্রহ ভিতর থেকে আসতে হয়। কারও মধ্যে যদি সত্যিই পরিবর্তন আনার এবং হৃদয়ের কথা শোনার আবেগ থাকে, তবেই সেনাবাহিনীতে যোগদানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সব ছবি:সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি