আইপিএলের নিলামের ইতিহাসে বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে রেকর্ড দাম। ক্যামেরন গ্রিনকে ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে রেকর্ড করল কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। নিলামে অসি অলরাউন্ডারকে নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে দুই শিবিরে। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কেকেআর হারিয়ে দেয় চেন্নাই সুপার কিংসকে।
আন্দ্রে রাসেলকে ছেড়ে দেওয়ার পর কেকেআরের বিদেশি অলরাউন্ডারের প্রয়োজন ছিল। স্থানপূরণের জন্য গ্রিনকে তুলে নিতে কলকাতা যে ঝাঁপাবে তা মোটামুটি জানাই ছিল। যে সব অলরাউন্ডার নিলামে ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত ছিলেন গ্রিনই।
আইপিএলের নিলামে গ্রিনের জন্য ঝাঁপিয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস, চেন্নাই সুপার কিংসও। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করে কলকাতা। মূলত রাসেলের পরিবর্ত হিসাবেই ডানহাতি অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল শাহরুখ খানের কেকেআর।
২০২৩ সালের নিলামে ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় গ্রিনকে কিনেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সমপরিমাণ টাকাতেই পরের বছর ২০২৪ সালে গ্রিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। সেই অঙ্ক বার এ বার ছাপিয়ে গেল কলকাতা। ২০ কোটি পেরিয়ে যাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছিল, রেকর্ড অঙ্ক পেতে পারেন গ্রিন। অবশেষে কেকেআর ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দর হাঁকার পর চেন্নাই ক্ষান্ত দেয়।
পিঠে অস্ত্রোপচারের জন্য গত আইপিএলে খেলতে পারেননি গ্রিন। জুনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটার হিসাবে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল তাঁর। তার পর বল করার অনুমতি পেয়েছেন। অ্যাশেজ়ে অলরাউন্ডার হিসাবেই খেলছেন গ্রিন।
স্কুলছাত্র হিসাবে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার পর ১৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় গ্রিনের। সালটা ছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি। তাসমানিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনি ২৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।
গ্রিনের দ্রুত আউটসুইং করার ক্ষমতা নির্বাচকদের চোখে পড়ে। তাঁকে প্রাথমিক ভাবে বোলিংয়ের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। গাব্বায় কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি ১২১ (অপরাজিত) করেন গ্রিন। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। ২০২০ সালের অক্টোবরে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ৪৩৮ বলে ১৯৭ রান করেন গ্রিন।
জন্ম থেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগতেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। ছোটবেলায় কোনও উপসর্গ ছিল না। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সমস্যা ধরা পড়েছিল। জানা যায়, যত দিন যাবে, তত অবনতি হবে গ্রিনের কিডনির। গ্রিনের রক্ত পুরোপুরি শোধন হয় না। সমস্যা এখন দ্বিতীয় স্টেজে রয়েছে। তাঁর কিডনি ৬০ শতাংশ কাজ করে। এই অসুখ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব নয় জানিয়েছেন ক্রিকেটার।
২০২৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং ২০২৪ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে দু’টি মরসুমে ১৫৩.৬৯ স্ট্রাইক রেটে ৭০৭ রান করেছেন এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। ১৬ উইকেটও নিয়েছেন। পিঠে চোট ও অস্ত্রোপচারের কারণে ২০২৫ সালে খেলতে পারেননি গ্রিন। চলতি বছরেই নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজ় খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন গ্রিন।
আইপিএলের নিলামের ইতিহাসে বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে রেকর্ড দাম পেলেন গ্রিন। এর আগে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় মিচেল স্টার্ককে কিনেছিল কেকেআর। স্বদেশি স্টার্ককেও ছাপিয়ে গেলেন গ্রিন।
নিলামের আগে আইপিএলের ব্যাটারদের তালিকায় ছিল তাঁর নাম। দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর অলরাউন্ডার ভূমিকা নিয়ে। নিলামের দু’দিন আগে সকলকে আশ্বস্ত করে গ্রিন জানিয়েছিলেন তিনি বল করার জন্য প্রস্তুত। জুনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটার হিসাবেই প্রত্যাবর্তন হয়েছিল তাঁর। তার পর বল করার অনুমতি পেয়েছেন। অ্যাশেজ়ে অলরাউন্ডার হিসাবেই খেলছেন গ্রিন।
১৯৯৯ সালের ৩ জুন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে জন্ম গ্রিনের। ১৭ ডিসেম্বর ২০২০তে টেস্ট অভিষেক হয় অ্যাডিলেডে। ওই বছরই ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারতের খেলায় প্রথম এক দিনের ম্যাচে হাতেখড়ি গ্রিনের। ২৮টি টেস্টে ১৩৭৭ রান করেছেন গ্রিন। গড় ৩৬.২৩। দু’টি শতরান করেছেন তিনি। বল হাতে ৩৫টি উইকেটও নিয়েছেন।
২০২৩-এ মুম্বইয়ের হয়ে ৪৫২ রান করেছিলেন গ্রিন। তার মধ্যে ৪৭ বলে ১০০ রানের একটি ইনিংসও ছিল। পরের বছর তাঁকে বেঙ্গালুরুতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরের দিকে ফর্মে কিছুটা ঘাটতিও দেখা দেয়। ২৫৫ রানের পাশাপাশি ১০টি উইকেটও নিয়েছিলেন গ্রিন।
২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকার রেকর্ড দামে ক্যামেরনকে কিনলেও সেই টাকার পুরোটা হাতে পাবেন না অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার। বোর্ডের নিয়ম অনুসারে বেশ কিছুটা কম টাকা পাবেন তিনি। গ্রিনের ন্যুনতম মূল্য রাখা হয়েছিল ২ কোটি টাকা।
সব ছবি: সংগৃহীত।