মাত্র ৫৩ বছর বয়সে প্রয়াত বলি অভিনেত্রী করিশ্মা কপূরের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় কপূর। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পর থেকে করিশ্মার বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন ছবিশিকারিরা। কানাঘুষো শোনা যায়, করিশ্মাকে বিয়ে করার পরেও সঞ্জয় নাকি তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী নন্দিতা মাহতানির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। জনপ্রিয় পোশাকশিল্পী নন্দিতা নাকি একাধিক বলি নায়কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এমনকি, এক অভিনেতার সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সারার পর নাকি তাঁরা ইতি টেনেছিলেন সম্পর্কে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম নন্দিতার। বাবা-মা এবং ভাইবোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে কেরিয়ার গড়েছেন নন্দিতার ভাই। তবে নন্দিতা এবং তাঁর বোন সেই রাস্তায় হাঁটেননি। তাঁরা দু’জনেই পেশায় পোশাকশিল্পী।
মুম্বইয়ের স্কুল থেকে পড়াশোনার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন নন্দিতা। লন্ডনের একটি কলেজ থেকে ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ছোটবেলা থেকে ব্যবসা নিয়েই কেরিয়ার গড়তে চাইতেন তিনি। কিছু দিনের জন্য পারিবারিক ব্যবসায় যুক্তও হন তিনি। কিন্তু বেশি দিন সেখানে মন টেকেনি নন্দিতার।
১৯৯৮ সালে পোশাকশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন নন্দিতা। দু’বছর পর তাঁর বোন লন্ডনে একটি ফ্যাশন স্টোর খোলেন। দোকান খোলার পর নন্দিতার সে দিকে আগ্রহ জন্মায়। পরে দুই বোন একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন।
বোনের সঙ্গে কাজ করার কিছু দিন পর নন্দিতা তাঁর নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। লন্ডনের পাশাপাশি মুম্বই এবং গোয়ায় নিজের ফ্যাশন স্টোর খোলেন তিনি। ক্যাটরিনা কইফ, গৌরী খান, ডীনো মোরিয়ার মতো তাবড় তাবড় তারকাদের পোশাক নকশা করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির পোশাকশিল্পী হিসাবেও কাজ করেছেন নন্দিতা।
২০১৯ সালে জনপ্রিয় কার্টুন সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পোশাক তৈরি করা শুরু করেন নন্দিতা। নামকরা বহু পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফোটোশুটও করেছেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও একাধিক অভিনেতার সঙ্গে নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, কর্মসূত্রে বলি অভিনেতা ডীনো মোরিয়ার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল নন্দিতার। পেশাগত সূত্রে পরিচয় হলেও সেই সম্পর্ক পরে প্রেমে পরিণতি পায়। নন্দিতাকে নাকি বিয়েও করতে চেয়েছিলেন ডীনো।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সঞ্জয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর নাকি ডীনোর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে নন্দিতার। তাঁদের সম্পর্ককে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ডীনো। কিন্তু সদ্য বিবাহবিচ্ছিন্না নন্দিতা তা চাননি। ভবিষ্যৎ নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় তাঁদের সম্পর্কেও চিড় ধরে যায়। পরে ডীনো এবং নন্দিতা দু’জনেই তাঁদের সম্পর্কে ইতি টানেন।
বলিউডের জনশ্রুতি, লন্ডনে পড়াশোনার সময় সঞ্জয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল নন্দিতার। দু’বছর সম্পর্কে থাকার পর ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। চার বছর সংসার করার পর ২০০০ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের।
অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন করিশ্মা। ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে অমিতাভের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপন করার পাশাপাশি অভিষেক এবং করিশ্মার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনে বচ্চন এবং কপূর পরিবার। তাঁদের বাগ্দান পর্বও সেরে ফেলা হয়। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গেও করিশ্মার সম্পর্ক টেকেনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, করিশ্মার মা ববিতা নাকি অভিষেকের সঙ্গে মেয়ের বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কানাঘুষো শোনা যায়, অমিতাভের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন ববিতা। ববিতা চাইতেন যে, তাঁর কন্যা এমন পরিবারে বিয়ে করুক, যেখানে তাঁর কোনও রকম সমস্যা হবে না। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ববিতার আপত্তিতেই অভিষেক এবং করিশ্মার বিয়ে ভেঙে যায়।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির শিল্পপতি সঞ্জয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন করিশ্মা। নন্দিতার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ হওয়ার ১০ দিনের মাথায় করিশ্মাকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। ১৩ বছর এক ছাদের তলায় সংসার করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের বিবাহিত জীবন সুখকর ছিল না। ২০১৬ সালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন করিশ্মা এবং সঞ্জয়।
বলিউডের জনশ্রুতি, বিয়ের পর সঞ্জয় নন্দিতার সঙ্গে শুধু সম্পর্ক বজায়ই রাখেননি, তাঁদের মধ্যে নাকি নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কও ছিল। এই সম্পর্কের বিরুদ্ধাচরণ করলে করিশ্মাকে সঞ্জয় নানা ভাবে অত্যাচার করতেন।
এক সাক্ষাৎকারে করিশ্মা জানিয়েছিলেন, বিয়ের পরের দিন থেকেই সঞ্জয় এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন অভিনেত্রীর উপর মানসিক অত্যাচার করতে শুরু করেন। করিশ্মার দাবি, মধুচন্দ্রিমার রাতে তাঁর স্বামী তাঁর বন্ধুর শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার প্রস্তাবও দেন। এমনকি, সঞ্জয় তাঁর বন্ধুর কাছে করিশ্মার মূল্য পর্যন্ত নির্ধারণ করেন। করিশ্মা এই প্রস্তাবে রাজি না হলে সঞ্জয় তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচার আরম্ভ করেন।
২০০৫ সালে যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘নীল অ্যান্ড নিকি’ ছবিতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল প্রিয়া সচদেওকে। করিশ্মাকে বিয়ে করার পর নাকি প্রিয়ার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সঞ্জয়। এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আর চুপ করে থাকেননি করিশ্মা। ২০১৬ সালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০০৫ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন করিশ্মা। তার ছ’বছর পর ২০১১ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন নায়িকা। বর্তমানে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন করিশ্মা। কানাঘুষো শোনা যায়, বলি তারকাদের মধ্যে করিশ্মার বিবাহবিচ্ছেদ নাকি সবচেয়ে ‘দামি’। আসলে, বিচ্ছেদের পর করিশ্মা খোরপোশ হিসাবে কোটি কোটি টাকা-সহ প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০২১ সালে অভিনেতা বিদ্যুৎ জামওয়ালের সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেন নন্দিতা। আগরার তাজমহলে আংটিবদল সারার পর সমাজমাধ্যমে তা জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত সেই সম্পর্ক এগোয়নি। দু’বছর পর বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় নন্দিতার।
প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয়ের প্রাক্তন স্ত্রী করিশ্মার তুতো ভাইয়ের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নন্দিতা। বলিউডের গুঞ্জন, বলি অভিনেতা রণবীর কপূরকে ডেট করতেন নন্দিতা। নন্দিতা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুখও খুলেছিলেন রণবীর।
সাক্ষাৎকারে রণবীর বলেছিলেন, ‘‘আমার তখন সদ্য তারুণ্যের ছোঁয়া লেগেছে। নন্দিতাকে আমার খুব ভাল লাগত তখন। সুন্দরী এবং নম্র স্বভাবের মেয়ে ও। আমরা বেশ কয়েক বার নৈশভোজ সারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা ক্ষণিকের ভাল লাগা ছিল। আমার মা-ও জানত যে, ওকে আমার ভাল লাগে।’’
করিশ্মার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১৭ সালে মডেল-অভিনেত্রী প্রিয়াকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। বিয়ের পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন প্রিয়া। সঞ্জয়ের অন্য দুই সন্তানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন প্রিয়া। মাঝেমধ্যে একসঙ্গে দেখাও করেন তাঁরা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, লন্ডনে পোলো খেলার সময় আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জয়। হঠাৎ একটা মৌমাছি গলায় ঢুকে যায় তাঁর। চেষ্টা করে তা বার করতে পারেননি তিনি। মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সঞ্জয়।
চিকিৎসা করার কোনও সুযোগ দেননি সঞ্জয়। মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা আগে অহমদাবাদে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন তিনি। তার কিছু ক্ষণ বাদেই মারা যান করিশ্মার প্রাক্তন স্বামী।
সব ছবি: সংগৃহীত।