কেরিয়ারের ঝুলিতে ছিল অজস্র হিট হিন্দি গান। সঙ্গীত নিয়ে কেরিয়ার গড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, অথচ বিয়ের পর এই গানবাজনায় পাকাপাকি ভাবে দাঁড়ি টানার চিন্তাভাবনা করেছিলেন ‘বেবি ডল’-এর গায়িকা কণিকা কপূর। প্রবাসীকে বিয়ের ১৫ বছর পর সংসার ভাঙে তাঁর। ৪৩ বছর বয়সে আবার বিয়ে করেন তিনি।
১৯৭৮ সালের অগস্ট মাসে লখনউয়ে জন্ম কণিকার। বাবা-মা এবং দাদার সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বুটিকের ব্যবসা ছিল তাঁর মায়ের। কিন্তু পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্যবসার দিকে পা বাড়াননি কণিকা। বরং তিনি ঝুঁকে পড়েছিলেন সঙ্গীতের প্রতি।
মাত্র ১২ বছর বয়সে বারাণসীর শিল্পী পণ্ডিত গণেশপ্রসাদ মিশ্রের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা শুরু করেছিলেন কণিকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে গুরুকে মঞ্চে সহযোগিতা করতেন তিনি। লখনউয়ের এক প্রতিষ্ঠান থেকে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হন তিনি। পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন কণিকা।
জনপ্রিয় এক রেডিয়ো সংস্থার অনুষ্ঠানে গান করেছিলেন কণিকা। সঙ্গীতচর্চা করার জন্য লখনউয়ের বাড়ির গ্যারাজটি নিজের স্টুডিয়োয় পরিণত করে ফেলেছিলেন কণিকা।
সঙ্গীতশিল্পী অনুপ জলোটা ছিলেন কণিকার বাবার কাছের বন্ধু। কণিকার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অনুপ কোনও গানের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করলে সেখানে কণিকাকে নিয়ে যেতেন। এমনকি, অনুপের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভজনও গাইতেন কণিকা।
অনুপের দৌলতে সঙ্গীত নির্মাণকারী এক সংস্থার সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছিলেন কণিকা। বলিউডে সঙ্গীত নিয়ে কেরিয়ার গড়তে লখনউ ছেড়ে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন তিনি। সারা জীবন অবিবাহিতা থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কণিকা। কেরিয়ার নিয়েই মেতে থাকার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক।
শোনা যায়, এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে কণিকার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল রাজ ছন্দক নামে এক তরুণের। কণিকার সেই আত্মীয় থাকতেন লন্ডনে। তবে তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল খাজুরাহোয়।
রাজ ছিলেন প্রবাসী, থাকতেন লন্ডনে। বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় কণিকার। সেই বন্ধুত্ব পরিণতি পায় প্রেমে। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর রাজকে বিয়ে করেন কণিকা। তখন গায়িকার বয়স মাত্র ১৮ বছর।
বিয়ের পর রাজের সঙ্গে লন্ডনে চলে যান কণিকা। বিদেশে গিয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গানবাজনা থেকে তখন তিনি শতহস্ত দূরে। বিয়ের পর তিন সন্তানের জন্ম দেন কণিকা। বিদেশে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনধারায় ভেসে যান তিনি।
বিয়ের পর গান গাওয়ার অনুমতি পাননি কণিকা। বিলাসবহুল জীবনের স্বাদ পাওয়ার পর জীবিকা নিয়ে আর চিন্তাভাবনাই করতে চাননি তিনি। তবে কণিকার সাজানো-গোছানো সংসারে ফাটল ধরে যায়।
কানাঘুষো শোনা যায়, ১৫ বছর সংসার করার পর রাজের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে কণিকার। পরে কণিকা জানতে পারেন যে, রাজ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। ২০১২ সালে রাজের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় কণিকার।
বিবাহবিচ্ছেদের পর তিন সন্তানকে নিয়ে লন্ডন ছেড়ে লখনউ চলে যান কণিকা। কিন্তু ভারতে আসার পর কণিকার সন্তানেরা নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। ক্ষণে ক্ষণে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল তারা। তাই বাধ্য হয়ে আবার লন্ডনে ফিরে যান কণিকা।
মনমীত সিংহ এবং হরমীত সিংহ নামে দুই ভাই বলিউডে ‘মীত ব্রোজ়’ নামে পরিচিত। হরমীতের সঙ্গে সখ্য ছিল কণিকার দাদার। সেই সূত্রে কণিকার সঙ্গে আলাপ হয় হরমীতের। তার পরেই বলিপাড়ায় গান গাওয়ার সুযোগ পান কণিকা।
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাগিনি এমএমএস২’ ছবিতে ‘বেবি ডল’ গানটি গেয়ে প্রচারে আসেন কণিকা। তার পর ‘লাভলি’, ‘চিট্টিয়া কলাইয়া’, ‘টুকুর টুকুর’, ‘দা দা দাস্সে’র মতো একাধিক হিন্দি গান গেয়েছেন কণিকা।
২০১৫ এবং ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিটেন সফরে গেলে তাঁর সামনে গান গেয়ে অভ্যর্থনা জানানোর সুযোগ পান কণিকা। তবে, কোভিড অতিমারির সময় দেশবাসীর ক্ষোভের কোপে পড়েছিলেন গায়িকা।
২০২০ সালের মার্চ মাসে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরেছিলেন কণিকা। কিন্তু নিভৃতবাসে থাকার পরিবর্তে তিনি পার্টি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছাড়াও ভারতের বহু রাজনীতিবিদও সেই পার্টিগুলিতে নিমন্ত্রিত ছিলেন। নাগরিক হিসাবে এমন অবিবেচকের মতো আচরণ করায় বলিপাড়ার অনেকেই কণিকার প্রতি খেপে গিয়েছিলেন।
কোভিড পরীক্ষা করার পর কণিকার সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন গায়িকা।
এক প্রবাসীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর আরও এক প্রবাসীর প্রেমে পড়েন কণিকা। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০২২ সালে গৌতম হাতিরামানি নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন তিনি। ৪৩ বছর বয়সে দ্বিতীয় বার গাঁটছড়া বাঁধেন গায়িকা।
চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেরে হাজ়ব্যান্ড কি বিবি’ নামের ছবিতে শেষ গান গাইতে শোনা যায় কণিকাকে। সম্প্রতি মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন গায়িকা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, রবিবার রাতে মেঘালয়ের এক অনুষ্ঠানে গান গাইছিলেন কণিকা। পারফরম্যান্স চলাকালীন মঞ্চে এক জন শ্রোতা উঠে কণিকাকে কোলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় কণিকা কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়লেও গান গাওয়া থামাননি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেখানে ছুটে যান গায়িকার নিরাপত্তারক্ষীরা। কোনও মতে সেই শ্রোতাকে মঞ্চ থেকে নামান তাঁরা।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন কণিকা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১ কোটির গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।