প্রেম দিবসে গাঁটছড়া বাঁধলেন বলি অভিনেতা রাজ বব্বরের পুত্র প্রতীক বব্বর। দীর্ঘ দিনের বান্ধবী প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন তিনি। শুক্রবার সমাজমাধ্যমে নিজেদের বিয়ের নানা মুহূর্ত পোস্ট করে এই সুখবর জানান অভিনেতা।
সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রেম, বিচ্ছেদ। তার পর এক বলি প্রযোজককে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ। সংসার ভাঙার এক বছরের মধ্যেই বাঙালি কন্যার প্রেমে পড়েন প্রতীক। শুক্রবার তাঁকেই বিয়ে করলেন তিনি।
২০০৮ সালে ‘জানে তু…ইয়া জানে না’ ছবির হাত ধরে বলিপাড়ায় পা রাখেন প্রতীক। ইন্ডাস্ট্রিতে চার বছর কাটানোর মধ্যেই এক সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তত দিনে প্রতীক তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে ছ’টি ছবি ভরেছিলেন।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘এক দিওয়ানা থা’ ছবির শুটিং করার সময় সহ-অভিনেত্রী অ্যামি জ্যাকসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় প্রতীকের। সেই বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়।
২০১২ সালে ‘এক দিওয়ানা থা’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তবে অ্যামির সঙ্গে সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি প্রতীকের। বলিপাড়ার গুঞ্জন, ছবিমুক্তির এক বছরের মধ্যেই সম্পর্কে ইতি টানেন অ্যামি এবং প্রতীক।
অ্যামির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বলিপাড়ার প্রযোজক সান্যা সাগরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রতীক। সান্যার পিতা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থাকার পর সান্যাকে বিয়ে করেন প্রতীক। কিন্তু সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সান্যাকে বিয়ে করেন প্রতীক। বিয়ের পরের বছরেই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন তাঁরা। ২০২০ সাল থেকে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আইনি বিচ্ছেদ হয় প্রতীক এবং সান্যার।
বিবাহবিচ্ছেদের পর এক বছর পার হতে না হতেই আবার প্রেমে পড়েন প্রতীক। বাঙালি কন্যা প্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সম্প্রতি ‘চালচিত্র’ নামের বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে প্রিয়াকে।
প্রতীক এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, ২০২২ সাল থেকে প্রিয়াকে চেনেন তিনি। অভিনেতার এক বন্ধুর মাধ্যমেই প্রিয়ার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। এক বছর গোপনে প্রেম করার পর তাঁরা সম্পর্কের কথা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯০ সালে ১৬ এপ্রিল কলকাতার এক বাঙালি পরিবারে জন্ম প্রিয়ার। কলকাতা থেকে তাঁর পরিবার কানাডায় চলে যায়। কানাডার আলবের্তার বাসিন্দা তিনি। প্রিয়ার জন্ম সে দেশেই।
কানাডা থেকে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন প্রিয়া। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হন তিনি।
ছয় বছর ধরে কত্থকের প্রশিক্ষণ নেন প্রিয়া। কানাডার বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠানও করেছেন তিনি। নৃত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীতেও পারদর্শী প্রিয়া।
গানবাজনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রিয়ার বাবা। তিনি চাইতেন যে, প্রিয়া যেন সঙ্গীত নিয়েই নিজের কেরিয়ার তৈরি করেন। কিন্তু গায়িকা নন, অভিনেত্রী হিসাবেই পেশা বেছে নেন প্রিয়া।
২০১১ সালে কানাডার একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন প্রিয়া। দর্শকের কাছে বহুল প্রশংসা পান তিনি। তার এক বছর পর মুম্বই যান প্রিয়া।
বলি অভিনেতা অনুপম খেরের কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন প্রিয়া। প্রশিক্ষণ চলাকালীন পরিণীতি চোপড়া এবং বরুণ ধবনের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগও পান তিনি।
২০১৩ সালে বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন প্রিয়া। ‘কিস’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তার পরের বছর ‘জোরু’ এবং ‘অসুরা’ নামের আরও দু’টি তেলুগু ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
২০১৫ সালে বলিপাড়ায় পদার্পণ করেন প্রিয়া। ‘জজ়বা’ ছবিতে অভিনয় করে হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তাঁর কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবিতে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন এবং ইরফান খানের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন প্রিয়া।
তার পর ‘২০১৬ দ্য এন্ড’, ‘দিল জো না কহে সকা’, ‘সোশ্যাল’ এবং ‘রেন’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় প্রিয়াকে। কিন্তু সেই ছবিগুলি কবে মুক্তি পেয়েছিল, কবেই বা প্রেক্ষাগৃহ থেকে বিদায় নিয়েছে সে বিষয়ে দর্শক খবরই পাননি।
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বার বার দেখো’ ছবিতে কাজ করতে দেখা যায় প্রিয়াকে। কিন্তু সেই ছবিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। তেলুগু এবং হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটির পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান প্রিয়া। ‘বারিশ’, ‘হ্যালো মিনি’ এবং ‘টুইস্টেড ৩’-এর মতো একাধিক হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করেছেন তিনি।
নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রানা নাইডু’ ওয়েব সিরিজ়ে রানা দগ্গুবতী, ভেঙ্কটেশ দগ্গুবতী, সুরভিন চাওলার মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন প্রিয়া। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অধুরা’ নামের হরর ঘরানার ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
প্রিয়া এবং প্রতীক— দু’জনের নাম এবং পদবির আদ্যক্ষর যথাক্রমে পি এবং বি। ‘পিবি’ লিখেই অভিনেত্রী তাঁর কাঁধে ট্যাটু করিয়েছিলেন। সামনে লাল রং দিয়ে ভালবাসার উল্কি আঁকা রয়েছে। অন্য দিকে আঁকা ‘ইনফাইনাইট’ চিহ্ন। একই রকম ট্যাটু হাতে আঁকিয়েছিলেন প্রতীক।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থাকার পর প্রেম দিবসে গাঁটছড়া বাঁধেন প্রতীক এবং প্রিয়া। প্রতীকের মা প্রয়াত অভিনেত্রী স্মিতা পাতিলের বাড়িতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শুভ অনুষ্ঠান সারেন প্রতীক-প্রিয়া।
সব ছবি: সংগৃহীত।