Pakistani Drug Lord

তিন মহাদেশে ছড়িয়ে মাদক-সাম্রাজ্য! ফিল্মি কায়দায় পাকিস্তানের ‘বিষাক্ত সাপ’কে বাক্সবন্দি করে ব্রিটিশ পুলিশ

ব্যবসায়ী-সমাজসেবী পরিচয়ের আড়ালে কোটি কোটি টাকার মাদকের ব্যবসা চালাচ্ছিলেন পাকিস্তানের আসিফ হাফিজ় ওরফে ‘সুলতান’। কী ভাবে রাতারাতি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল তাঁর গোটা সাম্রাজ্য?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১২:২০
০১ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে মূর্তিমান শয়তান! সমাজসেবী-ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কোটি কোটি টাকার মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এত পরিকল্পনা করেও শেষরক্ষা হল না। আদালতের রায়ে চরম সাজা হয়েছে তাঁর। জেলের কুঠুরির অন্ধকারে কাটবে তাঁর বাকি জীবন। নিজের পাপে ‘সুলতান’ থেকে পথের ভিখারি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত এই মাফিয়ার সঙ্গে আবার নাম জড়িয়ে আছে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া পাকিস্তানের।

০২ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রের অন্যতম বড় নাম আসিফ হাফিজ়। অন্ধকার জগতের সকলেই তাঁকে চেনে ‘সুলতান’ নামে। এ-হেন হাফিজ়ের মাদক সাম্রাজ্যের বিশালতা চমকে দেওয়ার মতো। আফগানিস্তানের আফিম খেত থেকে শুরু করে ইউরোপ এবং আফ্রিকা হয়ে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি। পরে অবশ্য আমেরিকার পুলিশই গ্রেফতার করে তাঁকে। চলতি বছরে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন’ হাফিজ়কে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শুনিয়েছে সেখানকার আদালত।

০৩ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

বর্তমানে নিউ ইয়র্কের জেলে বন্দি হাফিজ়। গত ৬ জুনের রায়ে তাঁকে ১৬ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। তবে তার এ-হেন কড়া শাস্তির কথা শুনে অবাক হয়েছেন আমেরিকাবাসীদের অনেকেই। তাঁদের কথায়, হাফিজ় অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি এবং পরোপকারী। তাকে মাদক পাচার চক্রের ‘কিং পিন’ বলে মানতে অস্বীকার করেছে আমজনতার একাংশ। তাঁদের এই ধারণা কিন্তু একেবারেই অমূলক নয়। কারণ আটলান্টিকের ওপারে দ্বীপরাষ্ট্রের অভিজাত মহলে ‘সুলতান’-এর ছিল অবাধ যাতায়াত।

Advertisement
০৪ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের লন্ডন শহরে থাকাকালীন মাদক পাচারের দুনিয়ায় পা রাখেন হাফিজ়। সেখানকার একটি পোলো ক্লাবে নিত্য যাতায়াত ছিল তাঁর। ওই ক্লাবে আসতেন ইংল্যান্ডের অভিজাত পরিবারের সদস্যেরা। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেন হাফিজ়। ফলে তাঁর সামনে খুলে যায় ব্রিটেনের উচ্চবিত্ত মহলের দরজা। এর পর তাঁদের আড়ালে থেকে ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং পাকিস্তানে মাদক পাচার শুরু করেন তিনি।

০৫ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

লন্ডন পুলিশের চোখে ধুলো দিতে নিজেকে একজন বিত্তবান ব্যবসায়ী হিসাবে তুলে ধরেন হাফিজ়। কিন্তু অন্ধকার নামলেই মাদকের চোরাচালানে নেমে পড়ত তাঁর গ্যাং। হেরোইন, কোকেনের পাশাপাশি সিন্থেটিক মাদক, মেথামফেটামিন এবং হাসিসের পাচার চলত। হাফিজ়ের পাচার করা মাদকের ক্রেতা ছিলেন কলেজপড়ুয়া, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, শ্রমিক-সহ সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ। ইউরোপের রেভ পার্টিগুলিতে তাঁর গ্যাংয়ের দেওয়া হেরোইনের চাহিদা সব সময় থাকত তুঙ্গে।

Advertisement
০৬ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

পাকিস্তানের নাগরিক হাফিজ়ের মাদক পাচারচক্রের ‘সুলতান’ হয়ে ওঠার গল্প হার মানাবে জনপ্রিয় হলিউড থ্রিলারের চিত্রনাট্যকেও। ১৯৫৮ সালে পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরে জন্ম হয় তাঁর। ছোট থেকেই টাকা রোজগার ছিল হাফিজ়ের একমাত্র নেশা। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের গোড়ায় ‘সারওয়ানি ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। মাদক পাচারের জাল দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে দিতে এই সংস্থাকে দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করতেন ‘সুলতান’।

০৭ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

সংবাদ সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক ভাবে অবশ্য ‘সারওয়ানি ইন্টারন্যাশনাল’কে আর পাঁচটা বৈধ সংস্থার মতোই মনে হয়েছিল। এর মাধ্যমে মাদক চিহ্নিতকরণের সেনা সরঞ্জাম এবং কাপড় বিক্রি করতেন হাফিজ়। লাহৌরে একটি রেস্তরাঁও ছিল তাঁর। এই ব্যবসার ফলে পাকিস্তানের উচ্চবিত্তদের মধ্যে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন তিনি। পরবর্তী কালে মাদক সাম্রাজ্য তৈরি করতে এই সম্পর্কগুলিকে দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন ‘সুলতান’।

Advertisement
০৮ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

পাকিস্তান ছেড়ে হাফিজ় কবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে চলে আসেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে লন্ডনের বিখ্যাত হ্যাম পোলো ক্লাবের একজন কর্তা হয়ে ওঠেন তিনি। সেই কারণেই আটলান্টিকের দ্বীপরাষ্ট্রের অভিজাত মহলে সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি এই ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন’-এর। মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ‘সুলতান’ কখনওই সংশ্লিষ্ট ক্লাবটির প্রথম দিকের সদস্য ছিলেন না।

০৯ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানের গুপ্তঘাঁটি থেকে হেরোইন-হাসিস-মেথের মতো ভয়ঙ্কর নেশার দ্রব্য ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করতেন হাফিজ়। নিজেকে আড়াল করতে ব্রিটেন এবং পশ্চিম এশিয়ার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন ‘সুলতান’। কখনও কখনও তাঁদের পাচারের তথ্য সরবরাহ করতেন তিনি। এর ফলে কিছু মাদক উদ্ধার করতে সক্ষম হতেন গোয়েন্দারা। সেই ফাঁকে চলত আসল পাচারের কারবার। এ ভাবে নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে সক্ষম হন হাফিজ়।

১০ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

২০১৪ সালে একটি স্টিং অপারেশনের পর শুরু হয় ‘সুলতান’-এর পতন। ওই সময় মাদকের চোরাচালান বন্ধ করতে ফাঁদ পাতেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা ডিইএ-র পদস্থ অফিসারেরা। হাফিজ়ের গ্যাংয়ে এজেন্টদের ঢুকিয়ে দেন তাঁরা। ওই এজেন্টদের হাত ঘুরে একটি কথোপকথনের রেকর্ডিং হাতে পান গোয়েন্দারা। আর তাতেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল তাদের। মার্কিন ডিইএ অফিসারেরা বুঝতে পারেন ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকা হাফিজ় আসলে ‘বিষাক্ত সাপ’।

১১ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সময় আমেরিকায় মাদক পৌঁছে দিতে কলম্বিয়ার পাচারকারীদের সঙ্গে কেনিয়ার মোম্বাসায় একটি বৈঠক করেন ‘সুলতান’ গ‌্যাংয়ের দুই সদস্য। সেই কথোপকথনের রেকর্ডিং ফাঁস হতেই গোটা ব্যাপারটা বুঝে যান ডিইএ অফিসারেরা। সে বছর ৯৯ কেজি হেরোইন এবং ২ কেজি মেথ যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের ছক ছিল হাফিজ়ের। এর পর তাঁর দলের কয়েক জনকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ। উদ্ধার হয় বিপুল মাদক এবং বেশ কিছু পাচারের সরঞ্জাম।

১২ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

সুলতানের গ্যাংয়ের সদস্যদের জেরা করে পাচারচক্রের জাল যে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা স্পষ্ট বুঝতে পারেন গোয়েন্দারা। ২০১৬ সালে হাফিজ়ের পাশাপাশি বিজয়গিরি ওরফে ভিকি গোস্বামীর নাম উঠে আসে পুলিশের খাতায়। মেথামফেটামিনের ব্যাপক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। দু’জনে মিলে মোজ়াম্বিকে ১৮ টন এফিড্রিন চালান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু, ওই মাদক কেনিয়া পৌঁছোনোর আগেই তা আটকে দেন গোয়েন্দারা।

১৩ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

এর পর হাফিজ়ের পক্ষে পালিয়ে বাঁচা সম্ভব ছিল না। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে গ্রেফতার করে লন্ডন পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যর্পণের দাবি জানায় আমেরিকা। এর বিরোধিতা করে ব্রিটেনের আদালতে আবেদন করেন ‘সুলতান’। দীর্ঘ শুনানির পর তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এর পর মাদক পাচার চক্রের ‘কিং পিন’কে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয় ব্রিটিশ প্রশাসন।

১৪ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

প্রত্যর্পণ নিয়ে আদালতে শুনানি চলাকালীন হাফিজ়ের আইনজীবী যুক্তি দেন যে, এতে তাঁর মক্কেলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। শুধু তা-ই নয়, মধুমেহ এবং হাঁপানি থাকার কথা বলেও বাঁচতে চেয়েছিলেন ‘সুলতান’। ব্রিটেনের আদালতে তাঁর আবেদন খারিজ হলে মামলা যায় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে। সেখানকার বিচারপতি ২০২৩ সালে তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

১৫ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

২০২৪ সালে মাদক পাচারের জন্য হাফিজ়কে দোষী সাব্যস্ত করে নিউ ইয়র্কের আদালত। আমেরিকান আইনজীবীরা তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং মাদক পাচারের দ্বৈত সত্তার মধ্যে স্পষ্ট অসঙ্গতি তুলে ধরেন। এজলাসে তাঁদের যুক্তি ছিল, দারিদ্রের জন্য ‘সুলতান’ বিপথে যাননি। তিনি ছিলেন লোভী এবং ক্ষমতালিপ্সু।

১৬ ১৬
Pakistani Asif Hafeez alias Sultan create global drug empire, how he lost it

২০৩৩ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের জেলেই থাকবেন হাফিজ়। তাঁর গ্যাংয়ের অধিকাংশ সদস্যই ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। ‘সুলতান’-এর মাদক পাচারের টাকা সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। তবে সে বিষয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি