গুগ্ল ক্রোমের পর এ বার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সাবধান করল কেন্দ্র। সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনাল কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ বা সিইআরটি-ইন।
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চালিত অধিকাংশ স্মার্টফোনের ইন্টারফেসের দুর্বলতার কারণে বড়সড় সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী। গুগ্লের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের বেশ কয়েকটি ত্রুটি চিহ্নিত করেছে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছে কেন্দ্রের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে উপদেশনামা (অ্যাডভাইসরি) জারি করেছে সিইআরটি-ইন। তাতে বলা হয়েছে গুগ্ল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে একাধিক দুর্বলতার হদিস পাওয়া গিয়েছে। সেই ফাঁক গলে সাইবার জালিয়াতেরা হানা দিতে পারে মোবাইল ফোন, ট্যাব-সহ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় এমন সমস্ত সিস্টেমে।
গুগ্ল সিস্টেমে পাওয়া দুর্বলতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড ১৩, অ্যান্ড্রয়েড ১৪, অ্যান্ড্রয়েড ১৫, এমনকি অ্যান্ড্রয়েড ১৬ অপারেটিং সিস্টেমও সাইবার হানাদারদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে। ডিভাইসে ইচ্ছামতো কোড কার্যকর করার সুযোগ হাতের মুঠোয় রয়েছে সাইবার হানাদারদের। অর্থাৎ, বেশির ভাগ আধুনিক স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটই সম্ভাব্য হুমকির সম্মুখীন।
স্যামসাং-এর গ্যালাক্সি, ওয়ান প্লাস, শাওমি, রিয়্যালমি, মোটোরোলা, ওপ্পো, ভিভো এবং গুগ্ল পিক্সেলের মতো অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম পরিচালিত কম দামি ও দামি সব ধরনের ফোনেই বিপদের ঝুঁকির কথা শুনিয়েছে সিইআরটি-ইন। সাইবার দুর্বলতাগুলি কোয়ালকম, মিডিয়াটেক, এনভিডিয়া, ব্রডকম এবং ইউনিসোক-সহ হার্ডঅয়্যার এবং সফ্টঅয়্যার বিক্রেতাদের তৈরি পণ্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বলে দাবি নিরাপত্তা সংস্থার।
কী কী ঝুঁকি রয়েছে, তা-ও জানায় কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। যেমন ফোনের গোপন কোড নম্বর সাইবার হানাদারেরা চুরি করতে পারে। ফোনকে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গোটা ফোনের নিয়ন্ত্রণও চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে। ফোন নম্বর, কল রেকর্ড, ফোনের ক্যামেরা হ্যাক করে সহজেই চুরি হয়ে যেতে পারে যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য।
২০২৫ সালের নভেম্বরে অ্যান্ড্রয়েডের সিকিউরিটি বুলেটিনে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করা হয়েছিল। ত্রুটিগুলিকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতেরা অনায়াসে যে কোনও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর সিস্টেমে ক্ষতিকারক অ্যাপ ইনস্টল করতে পারে বা ব্যক্তিগত তথ্য সাবাড় করে দিতে পারে।
ক্ষতিকর ম্যালঅয়্যার যুক্ত অ্যাপ ব্যবহার করার ফলে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বাইরে চলে যেতে শুরু করে। এর ফলে ভবিষ্যতে ব়ড় কোনও বিপদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে গ্রাহককে।
এই ফাঁক গলে দূরে বসে থাকা হ্যাকার ক্রোম ব্যবহারকারীকে একটি বিশেষ ওয়েব পেজে ঢুকতে বাধ্য করতে পারে। এর ফলে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হবে সাইবার জালিয়াতেরা। শুধু ব্রাউজ়িং হিস্ট্রি নয়, তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে মেডিক্যাল রেকর্ড, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নিতে পারে হ্যাকারেরা।
ডিজিটাল যন্ত্রের প্রতি নির্ভরশীলতা যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে সাইবার অপরাধ। ব্যক্তিগত তথ্য, অর্থ লুট করার জন্য মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের মতো ব্যক্তিগত ডিজিটাল যন্ত্রগুলিতে হানা দিচ্ছে অপরাধীরা।
অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে অ্যান্ড্রয়েডের সুরক্ষা ব্যবস্থায় নানা সমস্যা নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে নিরাপত্তার বেড়া ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ছে সাইবার জালিয়াতেরা। সবচেয়ে বেশি হ্যাকড হয় মূলত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলগুলি। বর্তমানে সেই কারণেই প্রতিনিয়ত ফোনের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দিকে নজর দিতে বলছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাটি।
ফোনকে সুরক্ষিত বর্মে ঢাকতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সময়মতো ফোনের ‘অপারেটিং সিস্টেম’ বা ওএস নবীকরণ (আপডেট) করতে বলা হয়েছে। ফোনে বিভিন্ন অ্যাপের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে, নিত্যনতুন ফিচার যোগ করতে মাঝেমধ্যেই ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার বার্তা পাঠায় গুগ্ল। সেই বার্তা এড়িয়ে গেলেই বিপদ।
তৃতীয় পক্ষ বা যাচাই না করা উৎস থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলতে হবে। স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম এবং অ্যাপ আপডেট সক্রিয় রাখুন। নিরাপত্তা হুমকির সতর্কতা পাওয়ার জন্য গুগ্ল প্লে প্রোটেক্ট অ্যাপটি ব্যবহার করুন। তা না হলে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা থেকে ডিভাইস ক্র্যাশ সবই ঘটে যেতে পারে।
ভুয়ো ইমেল এবং এসএমএসে কোনও লিঙ্ক দেওয়া থাকলে, সেই লিঙ্ক না খোলার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আধুনিক সংস্করণের অ্যান্টি-ভাইরাসও ফোনে ইনস্টল করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির পরামর্শ, অবিশ্বস্ত এবং ভুয়ো ওয়েবসাইট ঘাঁটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের।
সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদে রাখতে ইন্টারনেটের উপর নিয়মিত নজরদারি চালায় সিইআরটি। কেন্দ্রীয় এই সংস্থাটির কাজ হল ইন্টারনেটে কোনও ত্রুটি বা ম্যালঅয়্যারের সন্ধান পেলে সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। কয়েক দিন আগেই এই সংস্থা ক্রোম ব্রাউজ়ারটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছিল।
৩০ অক্টোবর সিইআরটির সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে গুগ্ল ক্রোমের একাধিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে ভারতের লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীকে। গুগ্লের এই জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজ়ারের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একাধিক ফাঁকফোকর খুঁজে পেয়েছে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন সিইআরটি।
সব ছবি: সংগৃহীত ও এআই সহায়তায় প্রণীত।