চাকরির জীবন একসময় ফুরোবেই। সরকারি চাকুরিজীবীদের পেনশনের টাকা প্রতি মাসে ব্যাঙ্কে নিয়মমতো ঢুকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরিরতদের ভরসা সঞ্চয়ের আমানত। বর্তমানে ভাল ভাবে বাঁচতে গিয়ে ভবিষ্যতে চোখ রাখা হয় না। আর তার ফাঁক দিয়ে গলে যায় সঞ্চয়ের সুযোগও।
প্রয়োজন আর তার সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পারা সঞ্চয়ের অভাবে অবসরের পর আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্য জাঁকিয়ে বসে। ৬০-এ পা দিলেই সাধারণত কর্মস্থল থেকে অবসর নিতে হয়। তার পর কী ভাবে চলবে সংসার? এই চিন্তা অনেক সময়েই কুরে কুরে খায় চাকরিজীবীদের। অবসরজীবনের জন্য টাকা জমানোর কথা ভাবলেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
যত দিন যাচ্ছে, কমছে টাকার মূল্য। এ নিয়ে নানা রকমের পরিকল্পনা মাথায় ভিড় করে। অবসরের জন্য সঞ্চয় মানেই সুরক্ষিত ও কম ঝুঁকির প্রকল্প বেছে নেওয়া। পেনশনের অনিশ্চয়তা, সুদের হারের ওঠানামা এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় কর্মজীবনের অবসরের পরবর্তী আয় নিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তোলে আমাদের।
পরিকল্পনামাফিক নিজস্ব পেনশন তহবিল তৈরি করতে হবে নিজের মতো করে। বেতন যতই কম হোক, প্রথম থেকেই নিয়মিত সঞ্চয় শুরুর অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পের সাহায্যে নিয়ে সম্পদ বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, অবসরজীবন ভাল কাটাতে হলে অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করতে হবে। পাশাপাশি, সামঞ্জস্যপূর্ণ অবসরকালীন পরিকল্পনাও থাকা চাই।
পেনশন প্রকল্পে লগ্নির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর জন্য পেনশন প্ল্যান ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতের মুদ্রাস্ফীতিকে মাথায় রেখে এটি সঠিক প্ল্যান বেছে নিতে সাহায্য করবে।
টালমাটাল অর্থনীতি ও চড়া মূল্যের বাজারেও প্রতি মাসে ২০ হাজার ৫০০ টাকা করে মাসিক আয়ের সুযোগ রয়েছে অবসরকালীন সময়ে। সেই সুযোগ করে দিচ্ছে সরকারের একটি প্রকল্প। ওই বিশেষ প্রকল্পে টাকা রাখলেই অবসরপ্রাপ্তদের একটি নির্দিষ্ট মাসিক আয়ের সুযোগ রয়েছে।
স্বল্প সঞ্চয়ের মধ্যে বিনিয়োগ করতে চাইলে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য এই প্রকল্পটি সবচেয়ে ভাল। যেমন নিয়মিত ভাল আয় করবেন, তেমনই বছরে ৮.২ শতাংশ সুদও পাবেন।
পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে খুব সহজে বিনিয়োগ করা যায় এই প্রকল্পে। সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনি অনায়াসে জমাতে পারবেন ৫ বছরের ‘লক ইন’ প্রকল্পে। অবসরকালীন সময়ে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই ২০০৪ সালে এই প্রকল্পের নকশা তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
এককালীন বিনিয়োগের মাধ্যমে অবসর গ্রহণের পর এই প্রকল্পটি থেকে মাসিক ২০ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যাবে।এটি নিরাপদ। পাওয়া যায় করছাড়ের সুবিধাও।
বর্তমানে এই প্রকল্পে বার্ষিক সুদের হার ৮.২ শতাংশ। প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি বছর ২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা সুদ পাওয়া যায়। যেহেতু সুদ ত্রৈমাসিক অনুযায়ী জমা হয়, বিনিয়োগকারীরা প্রতি তিন মাসে ৬১,৫০০ টাকা পাবেন। বার্ষিক সুদকে ১২ মাসে ভাগ করলে আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৫০০ টাকা।
কেউ যদি ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন তা হলে তাঁর বার্ষিক সুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮২ হাজার টাকা। তিন মাস অন্তর আয় হবে ২০,৫০০ টাকা। এক মাসে ৬ হাজার ৮৩৩ টাকা সুদ পাওয়া যাবে।
২০ লক্ষ টাকা আমানত থাকলে বছরে সুদ হিসাবে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। ৪১ হাজার টাকা তিন মাসে ও এক মাসে ১৩ হাজার ৬৬৭ টাকা নিশ্চিত আয়ের সুযোগ রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের।
এই প্রকল্পে আগে এক জন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা জমা রাখতে পারতেন। পরে তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা জমা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বয়স্ক ব্যক্তিরা আনুপাতিক হারে তাঁদের আমানত বৃদ্ধি করতে পারবেন। আধার এবং প্যান কার্ড-সহ যে কোনও পোস্ট অফিস বা অনুমোদিত ব্যাঙ্কে এই প্রকল্পের অ্যাকাউন্টটি খোলা যেতে পারে।
প্রাথমিক ভাবে পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত তিন বছর বৃদ্ধির বিকল্প রয়েছে প্রকল্পে। চাইলে কেউ মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই টাকা তুলে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে জরিমানা দিতে হবে। আধার এবং প্যান কার্ড-সহ যে কোনও পোস্ট অফিস বা অনুমোদিত ব্যাঙ্কে এই প্রকল্পের অ্যাকাউন্টটি খোলা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, একজন ব্যক্তির অবসর পূর্ববর্তী বার্ষিক আয়ের ৮০ শতাংশের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা উচিত। আরামদায়ক অবসর চাইলে প্রাক্-অবসরের বার্ষিক বেতনের অন্তত ১০ গুণ সঞ্চয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
অবসর পরবর্তী জীবনের রোজগারের আশঙ্কা বেশ ভাবাচ্ছে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের। সাধারণত এই সময়ে সাহায্য করে ফিক্সড ডিপোজ়িট। কিন্তু যে ভাবে সুদের হার তলানিতে ঠেকেছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে বই কমছে না। এই পরিস্থিতিতে বয়স্কদের ভবিষ্যৎ তথা অবসরকালীন জীবনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটি।
সব ছবি: সংগৃহীত।