Rivers in Mars

নদীতে নদীতে ছেয়ে ছিল মঙ্গল? ভরে থাকত বরফ-বৃষ্টিতে? ১৬ হাজার কিমির অববাহিকা খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

গত কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বহু সফল অভিযান চালানো হয়েছে মঙ্গলের মাটিতে। এখনও মানুষ সেখানে পৌঁছোতে পারেনি বটে, তবে পৃথিবীর ল্যান্ডার, রোভার লালগ্রহের লাল মাটি ছুঁয়ে দেখেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৫
Ancient riverbed discovered in the Mars

প্রাচীন নদী উপত্যকার খোঁজ মিলেছে মঙ্গলে। ছবি সহায়তা: এআই।

সৌরজগতে পৃথিবীর পড়শিদের নিয়ে মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। ক্রমানুযায়ী শুক্র এবং মঙ্গল আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ। কখনও কখনও বুধও আমাদের অনেক কাছে চলে আসে। সন্ধ্যা বা ভোরের আকাশে চোখ রাখলে শুক্রকে খালি চোখেই দেখা যায় নিয়মিত। যাঁরা তারা দেখেন, তাঁরা জানেন, বুধ বা মঙ্গলও একেবারে বিরল নয়। শুধু দেখার মতো ‘চোখ’ লাগে। হাজার তারার ভিড় থেকে স্থির আলোর বিন্দুটিকে খুঁজে নিতে হয় মাত্র। মঙ্গল রাতের আকাশে ধরা দেয় লালচে আলোর নক্ষত্র রূপে। এই মঙ্গল নিয়ে গবেষণাতেই সম্প্রতি মিলেছে আরও এক রোমাঞ্চকর সাফল্য। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, মঙ্গলে একসময় ছিল হাজার হাজার ছোটবড় নদী। সেগুলি ভরে থাকত কখনও বরফে, কখনও বৃষ্টিতে!

Advertisement

মঙ্গলে যে জল রয়েছে, তাঁর প্রমাণ আগেই পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। নদী অববাহিকার অস্তিত্বও জানা ছিল। গত কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বহু সফল অভিযান চালানো হয়েছে মঙ্গলের মাটিতে। এখনও মানুষ সেখানে পৌঁছোতে পারেনি বটে। তবে পৃথিবীর ল্যান্ডার, রোভার লালগ্রহের লাল মাটি ছুঁয়ে দেখেছে। সেখান থেকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। সে সব ছবি ঘেঁটেই প্রাচীন মঙ্গলে জলের হদিস পান বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য খানিক ভিন্ন। কারণ এ বার মঙ্গলের এমন এক অংশে নদী অববাহিকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে এত দিন জলের চিহ্ন পর্যন্ত মেলেনি। সেই কারণেই বিজ্ঞানীরা এত রোমাঞ্চিত!

নতুন গবেষণা বলছে, মঙ্গলের দক্ষিণাংশের উচ্চভূমিতে হাজার হাজার মাইল জুড়ে প্রাচীন নদী উপত্যকার খোঁজ মিলেছে। আনুমানিক ১৬ হাজার কিলোমিটার অংশে এর প্রমাণ রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ৩০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের এই অংশ নদীতে নদীতে ছেয়ে গিয়েছিল। ছোটবড় নানা দৈর্ঘ্যের নদী ছিল সেখানে। কোনও কোনও নদীর নদীগর্ভ ১০০ মাইল পর্যন্তও বিস্তৃত। বিজ্ঞানীদের অনুমান, কখনও বৃষ্টির জল, কখনও বরফে ভরে থাকত এই সমস্ত নদীগর্ভ।

ইংল্যান্ডের ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডাম লুজ়কুট বলেন, ‘‘এর আগে বহু বার মঙ্গলে জল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কৌতূহলের বিষয় হল, এটা এমন এক জায়গায় পাওয়া গিয়েছে, যেখানে এত দিন আমরা ভাবতাম কোনও জল নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম, মঙ্গলের ওই ‘জলহীন’ অংশে আসলে প্রাচীন কালে জল ছিল এবং সেই জল অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। সম্ভবত ওই অংশে নিয়মিত বৃষ্টি হত। আঞ্চলিক বৃষ্টির কোনও উৎস না থাকলে নদীর এত বিস্তৃতি সম্ভব ছিল না।’’

মঙ্গলের দক্ষিণের এই অংশটিতে বহু গিরিখাতও পাওয়া গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নদীর জলের ঘর্ষণেই এগুলির সৃষ্টি। মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীর যে সমস্ত কৃত্রিম উপগ্রহ, তাদের থেকে পাওয়া তথ্য ঘেঁটেই দক্ষিণের উচ্চভূমি সম্পর্কে এই নতুন এবং অভূতপূর্ব তত্ত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তথ্য নেওয়া হয়েছে নাসার মঙ্গল পরিদর্শনকারী অরবিটার (এমআরও) এবং মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারের থেকে। এই যন্ত্রগুলির ক্যামেরা অস্ট্রেলিয়ার দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান ভূখণ্ডের ছবি তুলে এনেছে। তাতে ফ্লুভিয়াল সাইনাস রিজ নামের একপ্রকার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এগুলিকে ইনভার্টেড চ্যানেলও বলা হয়। প্রাচীন নদীবাহিত পলির রেখা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে গেলে এই ফ্লুভিয়াল সাইনাস রিজ তৈরি হয়। পরে নরম মাটি ক্ষয়ে গেলে রিজ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। মঙ্গলের দক্ষিণভূমিতে নদীর অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই রেখাগুলিই।

শুধু তো নদী নয়। তার উপনদী, শাখানদী মিলে আস্ত একটা নদী-নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব ছিল লালগ্রহে। বিচিত্র তার রেখাচিত্র। এক জায়গায় দেখা গিয়েছে, দু’টি নদীর রেখা গিয়ে মিশেছে বড়সড় এক গর্তে। সেখান থেকে আবার পরে অন্য নদী শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মঙ্গলে বিশাল জলরাশি ছিল একসময়ে। ক্রমে গ্রহটির চৌম্বকক্ষেত্র শক্তি হারিয়েছে। তার ফলে সৌরবাতাস ঢুকে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ক্ষয় করেছে দিনের পর দিন। মহাশূন্যে শুকিয়ে দিয়েছে জল। তবে বিজ্ঞানীদের এক অংশের বিশ্বাস, এখনও মঙ্গল গ্রহের কোনও না কোনও কোণে জল রয়ে গিয়েছে। মঙ্গলপৃষ্ঠের উপরে না-থাকলেও তা থাকতে পারে মঙ্গলপৃষ্ঠের নীচে। মঙ্গলের গর্ভে হয়তো এখনও বয়ে চলেছে প্রাচীন সে সব নদীর টলটলে উত্তরাধিকার। এখনও প্রমাণ মেলেনি। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী।

Advertisement
আরও পড়ুন