Big Bang

শূন্যের ভিতর শূন্য! সেখানেই ভাসছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ? প্রাচীন মহাজাগতিক রহস্যের সমাধান বাতলাল নতুন গবেষণা

আকাশগঙ্গা ছায়াপথ যে পৃথক মহাশূন্যে অবস্থিত, নতুন গবেষণা বলছে, তার ঘনত্ব বাকি মহাশূন্যের চেয়ে কম। একে বলা হয় স্থানীয় মহাশূন্য বা হাব্‌ল বুদবুদ (হাব্‌ল বাব্‌ল)। ১৯৯৮ সালে এর সপক্ষে প্রথম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৬
Sound of the Big Bang suggests that our Milky Way Galaxy floats inside a cosmic void 2 billion light years wide

মহাশূন্যের ভিতর আর এক ‘শূন্যে’ ভাসছে আমাদের ছায়াপথ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মহাবিশ্ব জুড়ে ছায়াপথে ছায়াপথে ভেসে বেড়াচ্ছে কতশত শব্দতরঙ্গ। এ বার সে সব শব্দতরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেলেন, আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ সত্যিই ভেসে বেড়াচ্ছে মহাজগতের অভ্যন্তরে এক স্বতন্ত্র শূন্যস্থানে। এ যেন অনন্ত মহাবিশ্বের ভিতর আর এক খুদে মহাবিশ্ব! আর তা-ই যদি হয়, তা হলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার পরিমাপের অমীমাংসিত রহস্যেরও অচিরেই সুরাহা হতে চলেছে, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘হাব্‌ল টেনশন’।

Advertisement

আকাশগঙ্গা ছায়াপথ যে পৃথক মহাশূন্যে অবস্থিত, নতুন গবেষণা বলছে, তার ঘনত্ব বাকি মহাশূন্যের চেয়ে কম। একে বলা হয় স্থানীয় মহাশূন্য বা হাব্‌ল বুদবুদ (হাব্‌ল বাব্‌ল)। ১৯৯৮ সালে এর সপক্ষে প্রথম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। যদিও তখনও এই ‘শূন্যের ভিতর শূন্য’-র অস্তিত্ব নিয়ে ধন্দে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে, মহাবিশ্বের সূচনাকালের ব্যারিয়ন অ্যাকোস্টিক দোলন (বিএও), যাকে সহজ কথায় ‘বিগ ব্যাংয়ের শব্দ’ বলা যায়, তা-ও হাব্‌ল বুদবুদের তত্ত্বকে সমর্থন করে।

আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।

আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। —প্রতীকী চিত্র।

এই ‘বিগ ব্যাংয়ের শব্দ’ থেকেই এত দিনের হাব্‌ল রহস্যের উৎপত্তি! কী ভাবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার মাপা হয় হাব্‌ল ধ্রুবকের সাহায্যে। সেই হার সর্বত্র সমসত্ত্ব হওয়ার কথা। অথচ আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা যায়, প্রতি ক্ষেত্রে হাব্‌ল ধ্রুবকের মান আসছে আলাদা আলাদা! অদ্ভুত এই অসামঞ্জস্য দেখে তাজ্জব হয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। গণনায় কোনও ভুল থাকার কথা নয়। তবে কি গোড়াতেই কোথাও গন্ডগোল থেকে গিয়েছে? মূলত দু’টি পদ্ধতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার মাপা হয়। একটিতে মহাশূন্যের একটি নির্দিষ্ট এলাকার টাইপ ১এ সুপারনোভা কিংবা সেফিড ভেরিয়েবল নক্ষত্রের মতো মহাজাগতিক বস্তুগুলির উপর ভিত্তি করে হাব্‌ল ধ্রুবকের মান পরিমাপ করা হয়। অন্য পদ্ধতিটিতে ‘বিএও’ কিংবা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি)-র মতো মহাবিশ্বের সূচনাকালের শব্দতরঙ্গগুলি বিশ্লেষণ করে সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে হাব্‌ল ধ্রুবকের গড় মান পাওয়া যায়। দুই পদ্ধতিতে মান আলাদা হওয়ারই কথা, তবে আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকার কথা নয়। অথচ হিসাব কষে দেখা যাচ্ছে, গড় এবং স্থানীয় মানের মধ্যে ফারাক বিস্তর! প্রথম পদ্ধতিতে হাব্‌ল ধ্রুবকের মান প্রতি মেগাপারসেক প্রতি সেকেন্ডে ৭৩ কিলোমিটার। আর দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী, সেই ধ্রুবকের মান প্রতি মেগাপারসেক প্রতি সেকেন্ডে ৬৭ কিলোমিটার!

 হাবল বুদবুদের ঘনত্ব কম হওয়ায় মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বেশি ঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের দিকে সম্প্রসারণও দ্রুত হয়।

হাবল বুদবুদের ঘনত্ব কম হওয়ায় মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বেশি ঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের দিকে সম্প্রসারণও দ্রুত হয়। —প্রতীকী চিত্র।

বিজ্ঞানীদের মতে, যদি আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ একটি অপেক্ষাকৃত কম-ঘনত্বের বুদবুদের ভিতর অবস্থিত হয়, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব। কারণ, ঘনত্ব কম হওয়ায় হাব্‌ল বাব্‌ল বেশি ঘনত্ব-যুক্ত বহির্মহাবিশ্বের চেয়ে তাড়াতাড়ি সম্প্রসারিত হবে। সে ক্ষেত্রে হাব্‌ল ধ্রুবকের মানও হবে বেশি। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইন্দ্রনীল বণিকের কথায়, ‘‘হাব্‌ল ধ্রুবকের মানে এই অসঙ্গতির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, আমাদের ছায়াপথটি একটি বড়সড় শূন্যস্থানের কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। তা হলে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে আশপাশের সব কিছুই শূন্যস্থানের বাইরের বেশি ঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের দিকে এগোতে থাকবে। ফলে বুদবুদটিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।’’

হাব্‌ল টেনশন রহস্যের ব্যাখ্যা হিসেবে জ্যোতির্পদার্থবিদরা নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন, আকাশগঙ্গা ছায়াপথটি প্রায় ২০০ কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত একটি হাব্‌ল বুদবুদের কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। এই বুদবুদ আয়তনে বিশাল হলেও বাকি মহাবিশ্বের তুলনায় তা নিতান্তই নগণ্য। মহাবিশ্বের বাকি অংশের চেয়ে এর ঘনত্বও ২০ শতাংশ কম। একমাত্র সে ক্ষেত্রেই হাব্‌ল ধ্রুবকের ভিন্ন ভিন্ন মানের সপক্ষে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব। ইন্দ্রনীলদের গবেষণা সম্প্রতি উপস্থাপিত হয়েছে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি মিটিং ২০২৫-এ। তবে, এই তত্ত্ব এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত নয়। আপাতত ইন্দ্রনীল আর তাঁর সহকর্মীদের কাজ ‘ভয়েড মডেল’-এর সঙ্গে অন্যান্য মডেলের তুল্যমূল্য বিচার করে দেখা। তা হলেই জানা যাবে সেই আদিম বিগ ব্যাংয়ের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মহাবিশ্বের ক্রমসম্প্রসারণের ইতিহাস!

Advertisement
আরও পড়ুন