Math

সংখ্যা আবিষ্কারের আগেও ছিল অঙ্ক! প্রায় আট হাজার বছরের পুরনো মাটির পাত্রে সেই দলিলই পেলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানীদের মতে, হাজার হাজার বছর আগে তৈরি ওই পাত্র দেখলে বোঝা যায়, আধুনিক মানুষ লিখতে শেখার আগে অঙ্ক কষতে শিখে গিয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০২

— প্রতীকী চিত্র।

পৃথিবীতে সংখ্যাতত্ত্ব যখন আবিষ্কার হয়নি, তার আগেও ছিল অঙ্ক। আর সেই অঙ্ক কষেই করা হত শিল্পচর্চা। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি খ্রিস্ট জন্মেরও প্রায় ছ’হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার একটি নিদর্শন পরীক্ষা করে এই ধারণা হয়েছে তাঁদের। সে সময়ে তৈরি একটি মাটির পাত্র দেখে বিজ্ঞানীরা একপ্রকার নিশ্চিত, অঙ্ক কষেই তার উপরে আঁকা হয়েছিল।

Advertisement

জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সেই মাটির পাত্র নিয়ে গবেষণা করেন। ‘জার্নাল অফ ওয়ার্ল্ড প্রিহিস্টরি’-তে তাঁদের সেই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হালাফিয়ান সভ্যতার নিদর্শন ছিল সেই মাটির পাত্র। উত্তর মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্ট জন্মের ৬,২০০ থেকে ৫,৫০০ বছর আগে ছিল সেই সভ্যতা। সেই মানুষজনই একটি মাটির পাত্রের উপরে এঁকেছিলেন কিছু ফুল। একটা-আধটা নয়, প্রায় ৭০০টি।

গবেষক ইয়োসেফ গারফিঙ্কেল এবং সারা ক্রুলউইচ দেখেন, ফুলগুলির পাপড়ি জ্যামিতিক ভাবে সাজানো হয়েছে। বিন্যাসক্রম হল— ৪,৮, ১৬, ৩২, ৬৪। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অঙ্ক কষার এর থেকে পুরনো কোনও প্রামাণ্য দলিল মেলেনি। আর সেই প্রামাণ্য দলিল হল ওই মাটির পাত্র। বিজ্ঞানীদের যুক্তি, সংখ্যা আবিষ্কারের আগে অ্যালগরিদমের প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই পাত্রে।

ঐতিহাসিকেরা বলেন, সংখ্যাতত্ত্ব এক দিনে আবিষ্কার হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন, এক জায়গাতেও আবিষ্কার হয়নি। মনে করা হয়, এক থেকে নয়— সংখ্যার আবিষ্কার মেসোপটেমিয়াতেই। আজ থেকে ৫০০০-৬০০০ বছর আগে। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সংখ্যা আবিষ্কারেরও আগে ছিল অঙ্ক। আর তা ছিল মেসোপটেমিয়াতেই। তাঁদের বক্তব্য, মাটির পাত্রে যে ভাবে ফুল আঁকা হয়েছে, তা জ্যামিতির মাপ না জানলে করা সম্ভব নয়।

এর আগে প্রাচীন কালের যে সব পাত্র ইতিহাসবিদেরা পেয়েছেন, তার গায়ে আঁকা ছিল পশু কিংবা মানুষের ছবি। প্রাচীন কালের পাত্রের গায়ে ফুলের ছবি এর আগে তেমন মেলেনি বলেই জানিয়েছেন হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। যদিও সে সময় ফুল, পাতার ব্যবহার মানুষ জানত। বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে সেই ফুল, পাতা ব্যবহার করা হত। তবে সেই ফুল বা পাতার ছবি তারা আঁকত না। মেসোপটেমিয়ার সেই মাটির পাত্র সে দিক থেকে ব্যতিক্রম। বিজ্ঞানী ক্রুলউইচ জানিয়েছেন, ওই পাত্র দেখলে বোঝা যায়, যখন আধুনিক মানুষ লিখতে শেখেনি, তার আগে অঙ্ক কষতে শিখে গিয়েছিল। তাদের শিল্পকীর্তির মাধ্যমে ভাগ, অ্যালগরিদম প্রত্যক্ষ করতে পারছেন আজকের মানুষ। বিজ্ঞানী গারফিঙ্কেলের মতে, ওই মাটির পাত্রে যে ভাবে গোটা জায়গাটিকে নির্দিষ্ট মাপে ভাগ করা হয়েছে, তা অঙ্কের জ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, এই অঙ্কের জ্ঞান দৈনন্দিন জীবনেও প্রয়োগ করত হালাফিয়ান সভ্যতার মানুষজন।

Advertisement
আরও পড়ুন