দিলীপ বেঙ্গসরকর। —ফাইল চিত্র।
ইংল্যান্ড সফরের ভারতীয় দল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সব চেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অংশুল কম্বোজ। ১২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় তাঁর বোলিং দেখে অবাক প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। তবে অংশুলকে তাঁরা দোষ দিচ্ছেন না। প্রশ্ন তুলছেন তাঁদের নিয়ে যাঁরা দলগঠন করেছেন।
প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক দিলীপ বেঙ্গসরকর থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার অরুণ লাল, যতীন পরাঞ্জপেদের একটাই প্রশ্ন, শুধুমাত্র কি আইপিএলের ভিত্তিতে টেস্ট দল নির্বাচন হচ্ছে? নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? যদি ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েই থাকে, তা হলে অভিমন্যু ঈশ্বরনকে দলের সঙ্গে শুধু সফর করানো হচ্ছে কেন? প্রথম একাদশে কেন সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি? পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা ভাল খেলে যাওয়া মুকেশ কুমার কেন বাংলায় বসে রয়েছেন? তাঁকে ছাপিয়ে কী ভাবে খেলছেন অংশুল?
ঈশ্বরন শেষ ১০ বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ভারতীয় দলের সঙ্গে সফর করছেন তিনি। ভারতীয় ‘এ’ দলেরও অধিনায়ক। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ঈশ্বরনকে পেছনে ফেলে তাঁর আগে অন্তত ১৫ জনের অভিষেক ঘটেছে ভারতীয় টেস্ট দলে। স্কোয়াডে থাকলেও বাংলার ওপেনারের জায়গা হয়নি প্রথম একাদশে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ১০৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ঈশ্বরন। তাঁর রানসংখ্যা ৭৮৪১। ইংল্যান্ড সফরে ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়ক। দু’টি বেসরকারি টেস্টেই অর্ধশতরান (৮০ ও ৬৮) করেছেন। তাঁর আগে ৩০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা সাই সুদর্শন সুযোগ পেয়েছেন। যাঁকে একটিও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হয়নি। আইপিএলে ৪০টি ম্যাচে ১৭৯৩ রান করেছেন তিনি। সেই ভিত্তিতেই কি টেস্ট দলে সুযোগ দেওয়া হল?
অবহেলিত মুকেশ কুমারও। ২১০টি প্রথম শ্রেণির উইকেট আছে তাঁর। ভারতের হয়ে টেস্টে সাতটি উইকেট আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রীতিমতো নজর কেড়েছিলেন। গতিও ১৩২ কিমি প্রতি ঘণ্টার বেশি। তা হলে দেশ থেকে অংশুলকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল কেন? গত মরসুমে কেরলের বিরুদ্ধে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন বলে?
প্রাক্তন নির্বাচক বেঙ্গসরকর ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচকেরা শুধুমাত্র আইপিএল নিশ্চয়ই দেখেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটও দেখেন। কিন্তু দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁরা কোন দিকটা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা সত্যি বোঝা কঠিন।’’ যোগ করেন, ‘‘ঈশ্বরন দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রমাণ করছে। এত দিনে একটি সুযোগ দেওয়া যেতেই পারত।’’
ভারতীয় একাদশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক। ভারতীয় ক্রিকেটের কর্নেল বলছিলেন, ‘‘টেস্ট ম্যাচ জিততে গেলে পাঁচ জন বোলার খেলাতেই হবে। এমন বোলার নয় যে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করবে। উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে। পাঁচ জন বোলার খেললে তবেই বিপক্ষের ২০টি উইকেট ফেলা সম্ভব।’’ যোগ করেন, ‘‘কুলদীপ যাদব কী পরিস্থিতিতে আছে জানি না। ও যদি ফিট থাকে, তা হলে প্রথম একাদশে সুযোগ দেওয়া হোক। কেন ওর মতো স্পিনারকে দিনের পর দিন বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে?’’
বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল ক্ষুব্ধ। বলছিলেন, ‘‘দলের সঙ্গে সফর করিয়ে একটিও ম্যাচ না খেলানো খুবই খারাপ বিষয়। সেই ক্রিকেটারের উপরে প্রচণ্ড মানসিক চাপ পড়ে। সে নিজেকে অযোগ্য ভাবতে শুরু করে। আত্মবিশ্বাস হারায়।’’ যোগ করেন, ‘‘ওকে যদি না খেলানোরই থাকে তা হলে সফর করানো হচ্ছে কেন? মুকেশ কুমারকেও তো অবহেলা করা হচ্ছে। ওর আগে কী ভাবে অংশুল কম্বোজ সুযোগ পায়?’’
সমালোচনার মধ্যে যেতে চাইলেন না প্রাক্তন নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচকেরা নিশ্চয়ই কিছু ভেবে দল গড়েছেন। এমনিতে সাই সুদর্শন খারাপ ক্রিকেটার নয়। ইংল্যান্ডের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন। ও ধীরে ধীরে চেষ্টা করছে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি নিশ্চিত শুধুমাত্র আইপিএলের ভিত্তিতে দল গড়া হচ্ছে না।’’
প্রাক্তন নির্বাচক যতীন পরাঞ্জপে যদিও বলছিলেন, ‘‘ঘরোয়া ক্রিকেট দেখেই টেস্ট দল গড়া উচিত। লাল বলের ক্রিকেট যারা খেলল, তাদের বসিয়ে কী ভাবে সাদা বলের ক্রিকেটারেরা বেশি সুযোগ পাচ্ছে? ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্ব না দিলে ক্রিকেটারেরা কি ভবিষ্যতে রঞ্জি ট্রফি খেলতে চাইবে?’’
অর্থাৎ দল নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গেল ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ের মাঝেই।