India Vs West Indies Test Series 2025

ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের সঙ্গে তফাত প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিল ভারত, সিরাজ, বুমরাহ, রাহুলের দাপটে ভাল জায়গায় শুভমনেরা

ভারতের মাটিতে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ কতটা লড়াই করতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। অহমদাবাদে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে সেটাই আরও গাঢ় হল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৪
cricket

ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের উইকেট পড়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের উল্লাস। ছবি: পিটিআই।

শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই মাঠে গিয়ে সিরিজ় ড্র করে এসেছিলেন শুভমন গিলেরা। ফলে ভারতের মাটিতে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ যে বিশেষ লড়াই করতে পারবে না তা আগেই অনুমান করা গিয়েছে। অহমদাবাদে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে সেটাই আরও পরিষ্কার হল। ভারতের বোলিংয়ের সামনে দু’টি সেশনও টিকতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌। প্রথম দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের রান টপকে যাওয়ার মুখে ভারত। বড় রান তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ১৬২ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। মহম্মদ সিরাজ চারটি এবং জসপ্রীত বুমরাহ তিনটি উইকেট নেন। জবাবে প্রথম দিনের শেষে ভারতের রান ১২১/২। পিছিয়ে ৪১ রানে।

অহমদাবাদের লাল মাটির পিচ এবং মেঘলা আকাশের নীচে পেসারদের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। তবু টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের অধিনায়ক রস্টন চেজ়। সেই সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল না, তা বোঝা গেল ম্যাচ শুরু হতেই। আগের দিনই সাংবাদিক বৈঠকে বাড়তি এক জন পেসার খেলানোর কথা বলেছিলেন শুভমন গিল। সেই মতোই অক্ষর পটেলের জায়গা হয়নি প্রথম একাদশে। জসপ্রীত বুমরাহকেই নেওয়া হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ় প্রথম উইকেট হারায় চতুর্থ ওভারেই। মহম্মদ সিরাজকে খোঁচা দিয়ে ফেরেন ত্যাগনারায়ণ চন্দ্রপল, যিনি সম্পর্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের ছেলে। কোনও রান করতে পারেননি। এর পর গোটা ইনিংসে কোনও সময়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে দেখে মনে হয়নি তারা বড় জুটি গড়তে পারে। শে হোপ-রস্টন চেজ় এবং জাস্টিন গ্রিভস-খারি পিয়েরের জুটি কিছুটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বাকিরা কিছুই করতে পারেননি।

ইংল্যান্ড সফরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছিলেন সিরাজ। যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন সেখান থেকেই শুরু করলেন তিনি। মোটামুটি স্টাম্প লক্ষ্য করে বোলিং, সুযোগ পেলে বল ঘোরানো, এক টানা একই লেংথে বল করে যাওয়া— সব অস্ত্রই দেখা গিয়েছে তাঁর হাত থেকে।

ব্রেন্ডন কিংয়ের কথাই ধরা যাক। সিরাজের বল পড়েছিল অফস্টাম্পের ইঞ্চিদুয়েক বাইরে। ব্যাট তুলে দিয়ে সেই বল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন কিং। বল আচমকাই ঘুরে গিয়ে তাঁর মিডল স্টাম্প ভেঙে দেয়। দেখার মতো আর একটি বল বেরোল জসপ্রীত বুমরাহের হাত থেকে। এশিয়া কাপ ফাইনালে হ্যারিস রউফকে যে ইয়র্কারে আউট করেছিলেন, ঠিক একই ইয়র্কার দেখা গেল এ দিন। জাস্টিন গ্রিভসের অফস্টাম্প ছিটকে গেল সেই বলে, ঠিক যেমন গিয়েছিল রউফেরও।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের বাকি ইনিংসে শুধুই খোঁচা দেওয়ার খেলা। অফস্টাম্পের বাইরে অথবা উইকেট লক্ষ্য করে টানা বল করে গেলেন ভারতের পেসারেরা। চার জন উইকেটকিপার ধ্রুব জুরেলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। তিন স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব এবং ওয়াশিংটন সুন্দর মিলে মোট ১২.১ ওভার বল করলেন। সেখানে বুমরাহ এবং সিরাজ ১৪টি করে ওভার করেছেন।

ব্যাটিংয়ের মতো ওয়েস্ট ইন্ডি‌জ়‌ের বোলিংয়েও ভগ্নদশা। শামার জোসেফ এবং আলজারি জোসেফ ছিটকে যাওয়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। তা গোটা সিরিজ়‌ে ভোগাতে পারে তাদের। জেডেন সিলেস বাদে বলার মতো কোনও পেসারই নেই। দুই ওপেনার কেএল রাহুল এবং যশস্বী জয়সওয়াল খুবই ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। কোনও রকম তাড়াহুড়ো দেখানোর রাস্তায় যাননি। অনেকটা সময় নিয়ে খেলছিলেন।

মাঝে বৃষ্টি নেমে খেলা ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে। তার পরে দুই ওপেনারের খেলাও পাল্টে যায়। আগের চেয়ে একটু আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলা শুরু করেন তাঁরা। রাহুল বেশ কয়েকটি চার মারেন। যশস্বীও চাপে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বোলারদের ছন্দ নষ্ট করে দিতে চাইছেন দু’জনেই।

সেই করতে গিয়েই উইকেট হারান যশস্বী। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই। অফস্টাম্পের বাইরের বলে তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপারের হাতে। ক্রিজ়ে জমে গেলে তার কাছে একটি শতরান আশা করা যেতেই পারত।

হতাশ করলেন সাই সুদর্শন। আইপিএলে গুজরাতের হয়ে খেলার সুবাদে অহমদাবাদের মাঠ হাতের তালুর মতো চেনা তাঁর। সেই মাঠেও সাফল্য পেলেন না তিনি। ইংল্যান্ড সফরে করুণ নায়ার ব্যর্থ হওয়ায় ছেঁটে ফেলেছেন নির্বাচকেরা। করুণের মতো সুদর্শনেরও একটি অর্ধশতরান বাদে আর সাফল্য নেই। দেশের মাটিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচকদের খাড়া নেমে আসবে তাঁর উপরেও।

ভাল খেলছেন রাহুল। নিজের ইনিংসে এক বারও সুযোগ দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের বোলারদের। মারার পর মারছেন, ধরার বল ধরে খেলছেন। ইংল্যান্ড সফরের পর এ বার দেশের মাটিতেও সাফল্য পেতে যে মরিয়া, সেটা তাঁর খেলা দেখে বোঝাই যাচ্ছে। ওপেনার হিসাবে নিজের জায়গা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি।

নজর থাকবে শুভমনের উপর। ইংল্যান্ড সফরে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে আসার পর দেশের মাটিতেও তাঁর ব্যাট কতটা চলে সেটাই দেখার। অহমদাবাদ তো তাঁরও ‘ঘরের’ মাঠ।

Advertisement
আরও পড়ুন