India vs England 2025

ম্যাঞ্চেস্টারে ইনিংস হার বাঁচাতে ভারতের চাই আরও ১৩৭ রান, আশায় রাখল রাহুল-শুভমন জুটির অদম্য লড়াই

ম্যাঞ্চেস্টারে ইনিংসে হার বাঁচানোর লড়াই ভারতের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে লোকেশ রাহুল-শুভমন গিল জুটি। থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে গৌতম গম্ভীরও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৩
picture of cricket

(বাঁ দিকে) লোকেশ রাহুল এবং শুভমন গিলের (ডান দিকে) লড়াইয়ে কিছুটা স্বস্তিতে ভারত। ছবি: এক্স (টুইটার)।

ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে হার বাঁচানো কঠিন। ভীষণ কঠিন। তবু ইস্পাতকঠিন মানসিকতা নিয়ে লড়াই করছে ভারতীয় দল। তা-ও বোর্ডে কোনও রান ওঠার আগেই প্রথম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে!

Advertisement

শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে চতুর্থ দিনের শেষে ভারত ২ উইকেটে ১৭৪। লোকেশ রাহুল ৮৭ রানে এবং শুভমন গিল ৭৮ রানে ব্যাট অপরাজিত রয়েছেন। ৬২.১ ওভার ব্যাট করে তৃতীয় উইকেটের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তাঁরা ঠেকিয়ে রেখেছেন ইংল্যান্ডের সিরিজ় জয়। দিনের শেষে ওল্ড ট্রাফোর্ডের গ্যালারিতে ইংল্যান্ড সমর্থকদের গানও তাঁদের সংকল্পে চিড় ধরাতে পারেনি! ইনিংসে হার বাঁচানোর জন্য আরও ১৩৭ রান দরকার ভারতের।

শনিবার ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৬৬৯ রানে। ভারতের থেকে ৩১১ রানে এগিয়ে থামেন বেন স্টোকসেরা। দলকে ব্যাট হাতে এগিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়কই। বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার পর তাঁর ব্যাট থেকে এল ১৪১ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আর কোনও অধিনায়কের এমন কৃতিত্ব নেই। আরও কোনও অধিনায়ক এক টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি শতরান করেননি। আদতে নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেটারের কৃতিত্ব গর্বিত করল ইংরেজদের ক্রিকেটকে! ভারতের নির্বিষ বোলিং তাঁর কাজকে নিঃসন্দেহে সহজ করে দিয়েছে।

আট বছর পর টেস্ট খেলতে নামা লিয়াম ডসনকে নিয়ে সকালে ২২ গজে এসেছিলেন স্টোকস। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জানতেন, যা করার মূলত তাঁকেই করতে হবে। ম্যাঞ্চেস্টারের ২২ গজে হতাশ করেননি। ডসনকে (২৬) আউট করে জসপ্রীত বুমরাহ স্বস্তি দেন ভারতীয় শিবিরকে। ১০ নম্বরে নেমে স্টোকসের সঙ্গে দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দিলেন ব্রাইডন কার্সও। রবীন্দ্র জাডেজার বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করলেন ৪৭। ভারতীয় জোরে বোলারেরা নিশ্চই কিছু শিখলেন। ইংল্যান্ডের টেলএন্ডারেরা এই টেস্ট সিরিজ়ে যে ভাবে রান করছেন, ভারতের শেষ দিকের ব্যাটারদের জন্য শিক্ষণীয়। তাঁদের এই ‘শিক্ষা সফর’ ভারতীয় ক্রিকেটকে কতটা সমৃদ্ধ করল, তার উত্তর পাওয়া যাবে আগামী দিনে।

ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের স্কোর কার্ড।

ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের স্কোর কার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারতীয় শিবির আপাতত ইংরেজ টেলএন্ডারদের প্রশ্নপত্রের (বোলিং শক্তি) উত্তর দিতে ব্যস্ত। ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে ক্রিস ওকস পর পর আউট করে দেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং সাই সুদর্শনকে। প্রথম ইনিংসের মতো ব্যাট করতে পারলেন না কেউই। ইংল্যান্ডের গোটা ইনিংস দেখে এক বারও মনে হয়নি ম্যাঞ্চেস্টারের ২২ গজে জুজু আছে। অথচ সেই পিচেই ভারত কোনও রান করার আগেই ২ উইকেট হারিয়ে বসল! জুজুটা পিচের নয়। ৩১১ রানের পিছিয়ে পড়ার। মেঘলা আবহাওয়ায় ওকসের বল দু’টো ভাল ছিল নিঃসন্দেহে। ভীষণ বিপজ্জনক ছিল না। তবু মহান অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট।

চার নম্বর ব্যাটার শুভমনকে নতুন বল খেলতে হল। ভাগ্যিস ব্যাটারের নাম শুভমন। ওপেনার হিসাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সঙ্গে নেতৃত্বের বাড়তি দায়িত্ব। শুরুর ধাক্কাটা সামলে দিলেন অভিজ্ঞ লোকেশ রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে। রাহুল-শুভমন জুটির ম্যাচ বাঁচানোর মরিয়া ব্যাটিংয়ের সামনে চা বিরতির পর খানিকটা হতাশই লাগছিল ইংল্যান্ড শিবিরকে। জুটি না ভাঙতে পারার হতাশা। তবু প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া স্টোকস নিজেকে আক্রমণে নিয়ে এলেন না!

রাহুল-শুভমনের ব্যাটিং মনে করাল ২০০১ সালের ইডেন টেস্টের কথা। স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফলোঅন করা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলকে জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। দ্রাবিড় করেছিলেন ১৮০। লক্ষ্মণ ২৮১। পঞ্চম উইকেটে ৩৭৬ রান তুলেছিলেন তাঁরা। ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাঁচাতে তেমনই একটা জুটি প্রয়োজন। এখনকার ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা প্রায় সকলেই দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের ছাত্র। দ্রাবিড় দীর্ঘ দিন অনূর্ধ্ব-১৯ ভারত, ভারত ‘এ’ এবং ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন। লক্ষ্মণও অনূর্ধ্ব-১৯ ভারত এবং ভারত ‘এ’ দলের দায়িত্ব সামলেছেন। বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারতীয় দলেরও। লক্ষ্মণ এখনও জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান। দ্রাবিড়ও ছিলেন এই দায়িত্বে। তাই কোনও না কোনও সময় এখনকার ক্রিকেটারেরা কোচিং নিয়েছেন দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের কাছে। ব্যতিক্রম নন রাহুল-শুভমনও। ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা দু’যুগ পর আরও একটা অবিস্মরণীয় জুটি দেখতে চান। না হলে হয়তো চতুর্থ টেস্টেই ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ় হার নিশ্চিত হয়ে যাবে।

আশা আরও একটা আছে। ইংল্যান্ডের খামখেয়ালি আবহাওয়া। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারত-ইংল্যান্ড চতুর্থ টেস্টের প্রতি দিন কম-বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। যদিও প্রকৃতি ক্রিকেটের প্রতিকূল হয়নি। পুরো খেলাই হয়েছে। রবিবার বৃষ্টি হলে ভারতীয় শিবির হয়তো ওভালে সিরিজ় ড্রয়ের আশা নিয়ে পৌঁছোতে পারবে।

বৃষ্টির দয়ায় হার বাঁচানোর মধ্যে নায়কোচিত কিছু থাকবে না। কোচ গৌতম গম্ভীরের গুরুত্বও বাড়বে না। বরং ভারতীয় ক্রিকেটারদের ব্যাট হাতে লড়াই তাঁর টেস্ট কোচিং জীবনকে ‘আইসিইউ’ থেকে ‘জেনারেল বেড’এ নিয়ে আসতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন