স্মৃতি (বাঁ দিকে) এবং শেফালির ব্যাটে জিতল ভারত। ছবি: সমাজমাধ্যম।
অবশেষে রানে ফিরলেন স্মৃতি মন্ধানা। শনিবার তিরুঅনন্তপুরমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮০ রানের ইনিংস পাওয়া গেল ভারতীয় ওপেনারের ব্যাট থেকে। বিশ্বরেকর্ডও গড়লেন তিনি। আর এক ওপেনার শেফালি বর্মা ৭৯ রানে আউট হলেন। এটি তাঁর চলতি সিরিজ়ে টানা তৃতীয় অর্ধশতরান। দুই ওপেনারের নজিরে ভর করে চতুর্থ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩০ রানে হারাল ভারত। আগে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ২২১/২। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তাদের সর্বোচ্চ স্কোর। শ্রীলঙ্কা থেমে গেল ১৯১/৬ রানে।
প্রথম তিনটি ম্যাচে পরে ব্যাট করতে হয়েছিল হরমনপ্রীত কৌরের দলকে। এ দিন শ্রীলঙ্কা টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ভাবতেও পারেনি রানে ফেরার জন্য স্মৃতি এই দিনটিকেই বেছে নেবেন। এ দিন অসুস্থতার কারণে খেলতে পারেননি জেমাইমা রদ্রিগেজ়। বোর্ড জানায়, তাঁর জ্বর হয়েছে।
শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন শেফালি। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই রবিবার ইনিংস শুরু করেন। শুরুতে একটু ধরে খেললেও পরের দিকে আগ্রাসী খেলেন স্মৃতিও। শেফালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন।
ওপেনিং জুটিতে ১৫.২ ওভারে ১৬২ রান তুলে ফেলেন স্মৃতি-শেফালি। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে যে কোনও উইকেটে এটিই সবচেয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগের নজিরও ছিল স্মৃতি-শেফালির। ২০১৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ১৪৩ রান তুলেছিলেন তাঁরা। টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে চার বার ১০০ বা তার বেশি রানের জুটি গড়লেন স্মৃতি-শেফালি। মহিলাদের টি-টোয়েন্টিতে যে কোনও উইকেটের জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান তোলার নজিরও রয়েছে স্মৃতি এবং শেফালির।
বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন স্মৃতি। মিতালিকে টপকে দ্রুততম হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান হল তাঁর। বিশ্বের চতুর্থ মহিলা ব্যাটার হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করলেন স্মৃতি। আগে রয়েছেন মিতালি রাজ (১০৮৬৮), নিউ জ়িল্যান্ডের সুজ়ি বেটস (১০৬৫২) এবং ইংল্যান্ডের শার্লট এডওয়ার্ডস (১০২৭৩)।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার নজির গড়েছেন স্মৃতি (৮০)। ভেঙে দিয়েছেন হরমনপ্রীতের (৭৮) নজির।
শেফালি আগের দু’টি ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন। এ দিন অর্ধশতরানের হ্যাটট্রিক করলেন। বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই অন্যরকম ফর্মে পাওয়া যাচ্ছে তাঁকে। শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে দ্রুত রান করতে থাকেন ভারতের দুই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে কাবিয়া কাবিন্দির মাথার উপর শেফালির মারা একটি শট নজর কেড়েছে।
আগ্রাসী খেলতে গিয়েই উইকেট হারান শেফালি। মনে হচ্ছিল স্মৃতি শতরান করবেন। তিনিও পাঁচ বল পরেই ফিরে যান। তবে ভারতের রানের গতি কমতে দেননি রিচা। তিনে নেমেছিলেন চালিয়ে খেলার জন্য। নিজের কাজ ভাল ভাবেই করে যান বাঙালি উইকেটকিপার। ১৬ বলে রিচার অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংসে রয়েছে চারটি চার এবং তিনটি ছয়। হরমনপ্রীত অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৬ রানে।
ভারতের ইনিংস চলাকালীনই শিশির পড়তে শুরু করেছিল। তার ফায়দা তোলে শ্রীলঙ্কা। রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে তারাও শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকে। বেশি আগ্রাসী ছিলেন হাসিনি পেরেরা। প্রথম ওভারে রেণুকা সিংহ দেন ১২ রান। পরের ওভারে অরুন্ধতী রেড্ডি দেন ১৭। তৃতীয় ওভারে দীপ্তি শর্মা দেন ১৪। ৩.২ ওভারেই শ্রীলঙ্কার রান ৫০ পেরিয়ে যায়।
পঞ্চম ওভার শেষ হওয়ার পর আঙুলের চোটে মাঠেই শুশ্রূষা করার রিচা। কিছু ক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। সম্ভবত তাতেই ছন্দ নষ্ট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলেই ফেরেন হাসিনি (৩৩)। উল্টো দিকে অধিনায়ক চামারি আটাপাট্টু (৫২) অবশ্য নিজের মতোই চালিয়ে খেলতে থাকেন। তবে অর্ধশতরান করে ফিরে যান তিনিও।
শ্রীলঙ্কার রানের গতি তার আগেই কিছুটা কমেছিল। তবে ১৪তম ওভারে শ্রী চরণী ১৫ রান দেওয়ায় রানের গতি কিছুটা বাড়ে। তবে ভারতের রান তাড়া করার জন্য তা কখনওই যথেষ্ট ছিল না। ১৯তম ওভারে জি কমলিনী প্রায় একটি ক্যাচ ফেলেই দিচ্ছিলেন। চতুর্থ প্রয়াসে তিনি ক্যাচ ধরে ফেরান কাবিশা দিলহারিকে। পরের বলেই রশ্মিকা সেওয়ান্ডির ক্যাচ ফেলেন দীপ্তি। শেষ দিকে নীলাক্ষিকা সিলভা একটা চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
বিরতিতে স্মৃতি জানান, ব্যাটিংয়ে একটি পরিবর্তন এনেই সাফল্য পেয়েছেন। বলেন, “কিছু কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আসলে দুটো ম্যাচের আগে খুব বেশি সময় পাই না। তাই ম্যাচের দিন একটু আগে আগে আসার চেষ্টা করি। আজ একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে বদল আনতে চেয়েছিলাম। তাই তাড়াতাড়ি মাঠে এসে সেটা নিয়ে পরিশ্রম করেছি। ফলও পেয়েছি।”
সতীর্থ শেফালির প্রশংসা করে স্মৃতি বলেন, “অসাধারণ লেগেছে ও ভাবে স্মৃতিকে ব্যাট করতে দেখে। আমার মনে হয় শেফালি সব বলে ছয় মারতে চায়। কী ভাবে নিজেকে উন্নত করতে চায় সেটা নিয়ে সব সময় কথা বলে। উঠতি প্রতিভা হিসাবে দলে এসেছিল। এখন নিজের খেলাটা ভাল করে বুঝতে পারছে।”