IPL 2025

আইপিএলের মঞ্চ কি বেশি চাপের, প্রশ্ন তুলে দিল তিলকের ‘রিটায়ার্ড আউট’

কোনও দেশপ্রেম নেই, কোনও ব্যক্তিপুজো নেই। আছে শুধু জেতার লক্ষ্য। আর সেই কারণেই কখনও মাঠেই ভর্ৎসনা করা হয় অধিনায়ককে, আবার কখনও আউট না হলেও তুলে নেওয়া হয় মন্থর ব্যাটিং করা ব্যাটারকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০০
Tilak Varma

তিলক বর্মা। ছবি: পিটিআই।

খেলতে পারলে খেলো, না পারলে জায়গা ছাড়ো!

Advertisement

ক্রিকেট যত বাণিজ্যিক হচ্ছে, তত এই বার্তা প্রকট হয়ে উঠছে। আইপিএল মানেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। ক্রিকেটারেরা যেমন কোটি কোটি টাকা পাচ্ছেন, তেমনই দলমালিকেরা বিনিয়োগ করছেন। সব ব্যবসায়ীই লাভ করতে চান। আর ক্রিকেটে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা চান জিততে। সেখানে কোনও দেশপ্রেম নেই, কোনও ব্যক্তিপুজো নেই। আছে শুধু জেতার লক্ষ্য। আর সেই কারণেই কখনও মাঠেই ভর্ৎসনা করা হয় অধিনায়ককে, আবার কখনও আউট না হলেও তুলে নেওয়া হয় মন্থর ব্যাটিং করা ব্যাটারকে। সবই জেতার কথা ভেবে।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচে দেখা গেল আউট না হওয়া সত্ত্বেও তিলক বর্মাকে তুলে নিল মুম্বই। ভারতীয় ক্রিকেটে উঠতি তারকাদের মধ্যে অন্যতম তিলক। দেশের জার্সিতে ইতিমধ্যেই ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। দু’টি আন্তর্জাতিক শতরানের মালিক। চারটি এক দিনের ম্যাচও খেলেছেন। এমন একজন ক্রিকেটারকে ২৩ বলে ২৫ রান করেছেন বলে তুলে নেওয়া হল আউট না হওয়া সত্ত্বেও।

আইপিএলে যদিও ‘রিটায়ার্ড আউট’ নতুন নয়। এর আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিন (রাজস্থান রয়্যালস, ২০২২), অথর্ব তাইডে (পঞ্জাব কিংস, ২০২৩) এবং সাই সুদর্শনকেও (গুজরাত টাইটান্স, ২০২৩) মন্থর ইনিংসের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় এ বার জুড়ল তিলকের নাম। চেন্নাই সুপার কিংস ডেভন কনওয়েকে মঙ্গলবারের ম্যাচে ‘রিটায়ার্ড আউট’ করে। তাঁর বদলে রবীন্দ্র জাডেজাকে নামানো হয়। যদিও শোনা গিয়েছে কনওয়ে নিজেই উঠে যেতে চেয়েছিলেন। সেই কারণ যদিও স্পষ্ট নয়।

Tilak Varma

হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়ছেন তিলক বর্মা। ছবি: পিটিআই।

কেন হঠাৎ তুলে নেওয়া হল তিলককে? অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য বলেছেন, “আমাদের সেই সময় বড় শট দরকার ছিল। তিলক সেটা পারছিল না। কখনও কখনও এমন দিন আসে, যখন কিছুতেই বল ব্যাটে লাগে না।”

অর্থাৎ, অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, রান পেলে দলে থাকো, না হলে জায়গা ছেড়ে দাও। যদিও অন্য একটি তথ্যও প্রকাশ্যে আসছে। ক্রিকবাজ় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিলক ওই ম্যাচ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। সেটা যদিও অধিনায়ক হার্দিক বা কোচ মাহেলা জয়বর্ধনে বলেননি। কোচ বলেন, “আমার মনে হয়েছিল শেষ দিকে তরতাজা কাউকে প্রয়োজন। তিলকের সমস্যা হচ্ছিল। অবশ্যই ওকে বার করে আনাটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু আমাকে করতেই হত।”

ম্যাচের আগের দিন হাতের তালুতে চোট পেয়েছিলেন তিলক। ম্যাচ খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। ম্যাচের দিন তিলক এবং রোহিত শর্মার শারীরিক পরীক্ষাও করানো হয়। রোহিতের হাঁটুতে চোট ছিল। সেই কারণে তাঁকে খেলানো হয়নি। তিলক খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে তাঁকে সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। হয়তো সেই কারণেই তিলককে তুলে নিয়েছিলেন কোচ। বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি।

ফুটবলে দেখা যায় কোনও খেলোয়াড় চোট পেলে তাঁর জায়গায় অন্য এক জনকে নামিয়ে দিচ্ছেন কোচ। ক্রিকেট মাঠে সেই দৃশ্য বিরল। কিন্তু জয়বর্ধনে সেই সিদ্ধান্ত নিলেন। যদিও বলা হচ্ছে, তিলককে যদি তুলে নেওয়াই হল তা হলে আরও আগে তোলা উচিত ছিল। যখন মুম্বইয়ের ১৮ বলে ৪০ রান বাকি ছিল, সেই সময় তুললে অন্তত নতুন ব্যাটার কিছুটা সময় পেতেন। প্রশ্ন উঠছে তিলকের বদলে নামানো মিচেল স্যান্টনারকে নিয়েও। ব্যাটার হিসাবে অবশ্যই স্যান্টনারের থেকে অনেক ভাল তিলক। তা হলে কেন এমন একজনকে ব্যাট করতে নামানো হল।

২০২২ সালে রাজস্থান রয়্যালস প্রথম বার আইপিএলে ‘রিটায়ার্ড আউট’ নিয়ম ব্যবহার করেছিল। সেখানে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জায়গায় নামানো হয়েছিল রিয়ান পরাগকে। তিনি নেমেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। রাজস্থান ম্যাচটা ৩ রানে জিতে গিয়েছিল। রিয়ানের ৪ বলে ৮ রানের ইনিংস কাজে লেগেছিল। কিন্তু মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

তিলক সেই ম্যাচে খেলতে না পারলেও পরের ম্যাচেই রানে ফিরেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ২৯ বলে ৫৬ রান করেছেন। চারটি চার এবং চারটি ছক্কা মেরেছেন। যা দেখে মনে হয়েছে, লখনউয়ের বিরুদ্ধে তাঁকে মাঠে রেখে দিলে হয়তো মুম্বই জিততেও পারত। কারণ সেই ম্যাচে মাত্র ১২ রানে হেরেছিল তারা।

কারণ যা-ই হোক, একটা কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে আইপিএল। ভারতের জার্সি পরে খেলতে নামলে যে ভাবে গোটা দেশ একজন ক্রিকেটারের জন্য গলা ফাটায়, আইপিএলে সেটা হবে না। এখানে টিকে থাকতে হলে প্রতি ম্যাচে রান করতে হবে, উইকেট নিতে হবে। না হলে বসে যেতে হবে। কোটিপতি লিগে কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ একজনকে সামলাতে না হলেও টিকে থাকার চাপটা অনেক বেশি।

Advertisement
আরও পড়ুন