যশস্বী জয়সওয়াল। —ফাইল চিত্র।
রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির অবসরের পর বেন স্টোকসদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সিরিজ় ভারতের। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার এ বার তুলনায় তরুণ এবং অনভিজ্ঞ। এই পরিস্থিতিতে যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল এবং লোকেশ রাহুলকে বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর। ছাত্রের উপর আস্থা রাখছেন যশস্বীর ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিংহও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ২১ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকেই ওপেন করেছিলেন যশস্বী। খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না তরুণ ব্যাটার। তবু তৎকালীন কোচ রোহিতের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠান তাঁকে। অভিজ্ঞ রোহিতের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে অভিষেক টেস্টে ১৭১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কোচের আস্থার মর্যাদা দিয়েছিলেন যশস্বী। দু’বছরের মাথায় যশস্বীই এখন ভারতীয় দলের সিনিয়র ওপেনার।
দলের আস্থার মর্যাদা দিতে পারবেন কি ২৩ বছরের ব্যাটার? আশাবাদী জ্বালা। কারণ গত দু’বছরে রোহিত-বিরাটের সঙ্গে এক সাজঘরে কাটিয়ে এখন অনেক পরিণত তাঁর ছাত্র। জ্বালা বলেছেন, ‘‘রোহিতের সঙ্গে ব্যাট করার সময় যশস্বী সব সময় ওর পরামর্শ পেত। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর কোহলিও প্রচুর পরামর্শ দিয়েছে বিভিন্ন সময়। ওদের পরামর্শ যশস্বীকে দ্রুত পরিণত করে তুলেছে। এখন অধিনায়ক শুভমন। এ বার দলে রোহিত-কোহলি নেই। প্রায় নতুন দল। পিচে পরামর্শ দেওয়ার মতো তেমন কেউ নেই। এটা মাথায় রেখে খেলতে হবে।’’ ছাত্রের আগ্রাসী শট খেলার প্রবণতা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত জ্বালা। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আগ্রাসী শট খেলার জন্য ঋষভ পন্থের মতো ক্রিকেটারকে সমালোচিত হতে হয়েছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের ব্যাটারেরা এ বার নিজেদের কতটা সংযত রাখতে পারবে, সে দিকে নজর থাকবে। নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে হবে। নতুন ব্যাটারেরা কী ভাবে চ্যালেঞ্জ সামলায়, সেটা নিয়ে আমার আগ্রহ রয়েছে।’’
স্টোকসের দলের বিরুদ্ধে ছাত্রের সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী জ্বালা। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের ব্যাটিং ঐতিহ্যের চাপ সামলাতে হবে যশস্বীকে। সচিন তেন্ডুলকর, দ্রাবিড়ের মতো ব্যাটারেরা খেলেছে। ওদের পর এসেছে রোহিত-কোহলিরা। যশস্বীর কাছে একই রকম দায়িত্ববোধ আশা করি। বড় ইনিংস খেলতে হবে। দলকে টানতে হবে। এক বার থিতু হয়ে গেলে শট খেলতে শুরু করে যশস্বী। কী ভাবে খেলবে, আগে থেকে ঠিক করে নেয়। এ বার একটু অন্য রকম ভাবতে হবে। ও এখন দলের অন্যতম সিনিয়র ব্যাটার। আমার বিশ্বাস, ভাল রান করবে। এই দলে যশস্বীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।’’
যশস্বীর সঙ্গে ওপেনার হিসাবে কে খেলবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তিন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। রাহুল ছাড়াও সাই সুদর্শন এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণ রয়েছেন। ছাত্রের ওপেনিং জুটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জ্বালা। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বারে দলটা খুব তরুণ। অতীতে আমাদের ব্যাটারেরা ইংল্যান্ডে সমস্যায় পড়েছে। অভিজ্ঞ ব্যাটারেরাও সমস্যায় পড়েছে। তাই একটু উদ্বিগ্ন লাগছে। রোহিত-কোহলী দলে না থাকলে একটা শূন্যতা থাকবেই। অধিনায়ক শুভমন অভিজ্ঞ। কিন্তু শেষ কয়েকটা টেস্টে ভাল ফর্মে ছিল না। এ বার নেতৃত্বের চাপও থাকবে। তরুণদেরই এ বার সিনিয়র ব্যাটারের ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজটা সহজ নয়। রোহিত-কোহলির জায়গায় খেলা চাপের এবং কঠিন। সিরিজ় শেষ হলে বোঝা যাবে, ওরা কতটা পারল।’’
ইংল্যান্ড দলের শক্তি নিয়ে ভাবছেন না জ্বালা। তাঁর মতে, ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সব সময় অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বারের সফরটা বেশ চ্যালেঞ্জের। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, ওরা কতটা শক্তিশালী। ভারতীয় শিবির নিশ্চই পরিকল্পনা তৈরি করেছে। ভারত ‘এ’ দল কয়েকটা ম্যাচ খেলল আগে গিয়ে। ভালই খেলেছে। ওদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। ইংল্যান্ডে আসল হচ্ছে পিচ এবং আবহাওয়া বুঝে খেলা। প্রায় প্রতি বছর ইংল্যান্ড যাই। ওখানকার আবহাওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। বৃষ্টি পড়ে যখন তখন। নিঃসন্দেহে কঠিন সফর। তবু আশা করব ভারত এবং যশস্বী পাঁচটা টেস্টেই ভাল পারফর্ম করবে।’’ উল্লেখ্য, আগামী ২০ জুন থেকে শুরু হবে ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট।