SAFF Championship

এএফসিতে ব্যর্থতার দিনেই সাফ জয়ের শপথ অ্যান্টনির

২৩ নভেম্বর মেয়েদের এএফসি চ‌্যাম্পিয়ন্স লিগে ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হয়েছিল পিএফসি নাসাফের। ইস্টবেঙ্গল ম‌্যাচটি ০-৩ ফলে হেরে যায়। তার থেকেও বেশি কষ্ট দিয়েছিল, ম‌্যাচের একেবারে শেষ সময়ে (৯০+৮ মিনিটে) তৃতীয় গোল হজম করে গোলপার্থক‌্যের বিচারে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া।

সুতীর্থ দাস
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৯
নজরে: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নিয়ে অ্যান্টনি। সোমবার।

নজরে: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নিয়ে অ্যান্টনি। সোমবার। ছবি: ইস্টবেঙ্গল।

রবিবার বিমানবন্দরের পরে সোমবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবু। আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেও ইস্টবেঙ্গলের মেয়েদের আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের রেশ অব‌্যাহত। এ দিন দুপুরে ট্রফি নিয়ে ক্লাবে আসেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ অ‌্যান্টনি অ‌্যান্ড্রুজ়। সদাহাস‌্যময়, প্রাণখোলা, সদালাপী মানুষটি খুশিতে ডগমগ। দেখলে মনে হওয়ার উপায়ই নেই যে একমাস আগেও সেই মুখে লেগেছিল স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা।

২৩ নভেম্বর মেয়েদের এএফসি চ‌্যাম্পিয়ন্স লিগে ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হয়েছিল পিএফসি নাসাফের। ইস্টবেঙ্গল ম‌্যাচটি ০-৩ ফলে হেরে যায়। তার থেকেও বেশি কষ্ট দিয়েছিল, ম‌্যাচের একেবারে শেষ সময়ে (৯০+৮ মিনিটে) তৃতীয় গোল হজম করে গোলপার্থক‌্যের বিচারে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই বাস্তব যে, সাফ চ‌্যাম্পিয়নশিপ জয়ের নীল নকশা শুরু হয়ে গিয়েছিল ব‌্যর্থতার চোখের জলকে সাক্ষী রেখে।

উৎসব শেষে বিকেলে তাঁবুতে আনন্দবাজারকে সেই কথাই বলছিলেন অ‌্যান্টনি। তাঁর কথায়, “সেই রাতের কথা এখনও আমাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়। তৃতীয় গোল না হজম করলে আমরা শেষ আটে পৌঁছে যেতাম। মনে আছে, মেয়েরা মনমরা হয়ে ড্রেসিংরুমে বসেছিল। অনেকের চোখের জলও আমার নজর এড়ায়নি। আমি ওদেরকে বলি, অতীতকে আঁকড়ে থেকে লাভ নেই। এত লক্ষ লক্ষ সমর্থক আমাদের সমর্থন করছেন। আগামী প্রতিযোগিতা সাফ ক্লাব চ‌্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে ট্রফি জিতে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। শুধু তোমাদের জন‌্য নয়, সমর্থকদের ট্রফি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা কর।”

কথা রেখেছেন ফাজ়িলা ইকওয়াপুটরা। সে দিন চোখের জলে নেওয়া প্রতিজ্ঞার দাম তারা রেখেছেন। তাই বোধ হয়, আর পাঁচটা ট্রফির থেকে এই ট্রফির মূল‌্য তাদের কাছে অনেকটাই বেশি। দুপুরে তিনি যখন পতাকা উত্তোলনের জন‌্য এগিয়ে যাচ্ছেন, দু’ধারে দাঁড়িয়ে খুদে ফুটবলশিক্ষার্থীরা। করতালি, ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’ ধ্বনি সবই ছিল— কিন্তু নীচু সুরে বাঁধা, সেই দিলখোলা সমর্থন চোখে পড়ল না।

বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে আইডব্লিউএল (মেয়েদের আই লিগ)। পতাকা তোলার সময়ই আবদার এল— এ বারেও আইডব্লিউএল খেতাব ধরে রাখতে হবে। যথারীতি সেই আবেদন গ্রহণ করলেন অ‌্যান্টনি। নিজেও জানেন মশালবাহিনীর মেয়েদের প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতানোর পরে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই স্বপ্নের মর্যাদা রাখতে তাঁর দলকে এ বারে দ্বিগুন পরিশ্রম করতে হবে। কারণ সমর্থকদের সমর্থনের সঙ্গে জুড়েছে প্রত‌্যাশাও। সেই প্রসঙ্গে ২৯ বছরের কোচ বলেছেন, “খেতাব ধরে রাখা আর কঠিন। আমরা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। জানি সমর্থকদের উন্মাদনা আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। সেই সমর্থনের দাম রাখতে চাই।”

উন্মাদনার জন‌্য কি চাপও আগের থেকে বেড়েছে? লাল-হলুদ কোচ সেই চাপকেই আগামী প্রতিযোগিতার সাফল‌্যের অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেছেন, “সকলে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহ‌্য সম্পর্কে জানে। আমরা জানি, কোন ক্লাবের জার্সিতে খেলছি। আমি কোনও রকম চাপ নিতে চাই না। বরং এই চাপ তাগিদের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। চাপেই দল সেরাটা দেবে।”

কেরল এফসিকে দু’বার ডব্লিউপিএল জেতানোর পরেও সেখানে থাকেননি। ইস্টবেঙ্গলে চলে আসেন। জানিয়েছিলেন, একই জায়গায় বেশি দিন থাকলে আরামপ্রিয়তা তৈরি হয়ে যায়। তাই নিজেকে সমৃদ্ধ করতে কলকাতার ক্লাবে এসেছেন। পেশাদার কোচ নয়, নিজেকে তৈরি করেছেন বড় দাদার মতো। যে কেউ যে কোনও সময়ে তাঁর কাছে সাহায‌্য চাইতে পারে। সবচেয়ে বড় গুণ বিশ্বাসযোগ‌্যতা। তাই তো অ‌্যান্টনির এক ডাকেই ইস্টবেঙ্গলে খেলার কথা দ্বিতীয়বার ভাবেননি ফাজ়িলা, সৌম‌্যা গুগুলথ,সুইটি দেবীরা।

প্রতিযোগিতায় বিধ্বংসী ছন্দে ছিলেন উগান্ডার স্ট্রাইকার ফাজ়িলা ইকওয়াপুট। ইস্টবেঙ্গল যেখানে ষোলো গোল করেছে, ফাজ়িলার একারই অবদান নয় গোল। বাংলাদেশের নাসরিন স্পোর্টস অ‌্যাকাডেমির বিরুদ্ধে করেছিলেন পাঁচ গোল। কিন্তু গ্রুপ পর্বে নেপালের এপিএফের বিরুদ্ধে গোলশূন‌্য ড্র হয়। সেই ম‌্যাচ নিয়ে মজার কাহিনি ফাঁস করলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ। তাঁর কথায়, “ফাজ়িলা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। অনেক সুযোগ নষ্ট করেছে। ওর সঙ্গে ফাইনালের আগে আমাকে আলাদা করে কাটাতে হয়েছে। ও কিন্তু তার পরে আমার ভরসার দাম দিয়েছে। ফাইনালে জোড়া গোল করে দলকে সাফ ক্লাব চ‌্যাম্পিয়নশিপ জিতিয়েছে।”

বৃহস্পতিবার বড়দিন। সেজে উঠবে ইস্টবেঙ্গল তাঁবু। লাল-হলুদের এক কর্তা জানিয়েছেন, সে দিন সাফ জয়ী মেয়েদের নিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করা হবে। সে দিনই তাঁদের জন‌্য ক্লাবের তরফে পুরস্কারমূল‌্য ঘোষণা করা হবে। মেয়েদের এই অবদানকে সম্মান জানানো হবে।

মশাল হাতে এখন তো দৌড়চ্ছে মেয়েরাই!

আরও পড়ুন