তৃণমূলের নিলম্বিত দুই বিধায়ক (বাঁ দিকে) হুমায়ুন কবীর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভরতপুরের নিলম্বিত (সাসপেন্ডেড) তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের আসন বদল হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। সদ্য তৃণমূল থেকে তাঁকে ছয় বছরের জন্য নিলম্বিত করা হয়েছে। তার পরেই সদর্পে হুমায়ুন ঘোষণা করেছিলেন বিধায়কপদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। কিন্তু শনিবার বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের শিলান্যাসের পর রবিবার জানিয়ে দিয়েছেন বিধায়কপদ ছাড়বেন না তিনি। আর তার পরেই তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, বিধানসভার অধিবেশনে তাঁর আসন বদল করে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁর স্থান হতে পারে আরও এক বিলম্বিত বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে।
২০১৪ সালে রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করে রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রাণী সম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন হুমায়ুন। কিন্তু ২০১৫ সালে রেজিনগরের উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হওয়ায় মন্ত্রিপদ ছাড়তে হয় তাঁকে। যেহেতু পদমর্যাদায় রাজ্যের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি, তাই ২০২১ সালে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় ফিরলে তাঁকে সম্মানজনক আসন দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে। এ ক্ষেত্রে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ট্রেজ়ারি বেঞ্চের পাশের আসনগুলির মধ্যে একটিতে বসার বন্দোবস্ত হয় হুমায়ুনের।
বর্তমান গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, হুমায়ুনের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রথমে তিনি বিধায়কপদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও পরে মত বদল করে বিধায়কপদে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। ফলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব হুমায়ুনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন গোটা দলকে। তাই বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে হুমায়ুনের দূরত্ব বজায় রাখতে তাঁকে বিজেপি পরিষদীয় দলের আসনের কাছের কোনও একটি আসনে বসানোর বিষয় মনস্থির করেছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা বেহালা পশ্চিমের পাঁচ বারের বিধায়ক ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর দল থেকে নিলম্বিত হন। সম্প্রতি তিনিও জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বিধানসভার অধিবেশনে যোগদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকেও বিজেপি পরিষদীয় দলের পাশের কোন আসনে বসতে দেওয়া হবে বলে ঠিক করে রেখেছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। এ ক্ষেত্রে বিধানসভার অধিবেশনে দুই নিলম্বিত বিধায়ককে অধিবেশনে পাশাপাশি দেখা যেতেই পারে। যদিও পার্থ অধিবেশনে যোগ দেবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।
হুমায়ুনের আসনবদল নিয়ে তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টির উপর আমাদের নজর রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নিলম্বিত বিধায়কদের অধিবেশনে বসার জায়গা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, এখনও বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে কয়েক মাস বাকি রয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনের পাশাপাশি একটি অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট অধিবেশনও হবে। তৃণমূল পরিষদীয় দলের ধারণা, হুমায়ুন এই দু’টি অধিবেশনে যোগদান করে দলকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা করতে পারেন। তাই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে আগেভাগেই তাঁর সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব তৈরি করে নিতে চাইছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।