গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে পড়তে পারে প্রতিপক্ষ। তাই প্রকাশ্য পাঁচিলের পাশাপাশি ‘গোপন দেওয়াল’ তৈরি করার প্রস্তাব উঠল বিজেপির এসআইআর (ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন) কর্মশালায়। বিএলএ-২ হিসাবে প্রকাশ্যে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের পাশাপাশি ‘গোপন বিএলএ’ নিয়োগ করার সেই প্রস্তাব দলীয় নেতৃত্ব মেনেও নিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার নিউটাউনে দলের এসআইআর বিভাগ এবং বুথ সশক্তিকরণ বিভাগের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছিল বিজেপি। জেলাগুলির প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছিল। এসআইআরের দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছে কী কাজ এসআইআর বিভাগকে তথা বিএলএ-দের করতে হবে, তা বিশদে ব্যাখ্যা করেন মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। এনুমারেশন শেষের পরে এ বার জমা পড়া ফর্ম তথা তথ্য খতিয়ে দেখার পর্ব শুরু হবে। তাই রাজনৈতিক দলের বিএলএ-দের ভূমিকাও বদলে যাচ্ছে। বিএলও-দের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঘোরার কাজ আর নেই। কিন্তু কোথাও ভুয়ো তথ্য জমা হয়ে থাকলে সে বিষয়ে আসল তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানানোর কাজ এ বার শুরু হচ্ছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে সেই কাজে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই বিজেপির ওই কর্মশালা।
বিজেপির কর্মশালায় নেতৃত্বের বক্তব্য শেষের পর বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের কথা শোনা হচ্ছিল। তখনই এক প্রতিনিধি বিএলএ-দের ‘চিহ্নিত’ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিজেপি সূত্রের খবর, আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার গোঘাট থেকে আসা এক প্রতিনিধি বিষয়টি তোলেন। বিএলএ-২ হিসাবে এত দিন যাঁরা কাজ করেছেন, তৃণমূল এ বার তাঁদের নানা ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রায় ৬৫ হাজার বিএলএ-র নাম বিজেপির তরফে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলেও তাঁদের অধিকাংশকেই এনুমারেশন পর্বে মাঠে-ময়দানে ঘুরতে দেখা যায়নি বলে বিজেপির একাংশেরই দাবি। যাঁরা সক্রিয় ছিলেন বা বিএলও-র সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন, তাঁদের অনেককেই তৃণমূল নানা ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছে বলে বিজেপির অন্দরেই গুঞ্জন ছিল। সেই আশঙ্কার কথাই গোঘাটের ওই প্রতিনিধি তুলে ধরেন। তিনি বুথে বুথে ‘গোপন বিএলএ’ নিয়োগ করার প্রস্তাব দেন। এসআইআর-এর এই পর্বে অনিয়মের খবর এবং সেই সংক্রান্ত প্রামাণ্য তথ্য দলের নেতৃত্বের হাতে তুলে দিলে বা সরাসরি নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে জানিয়ে দিলেই চলবে। ফলে ঘোষিত বিএলএ-দের পাশাপাশি এই সমান্তরাল ‘টিম’ কাজ করলেও তাঁদের প্রকাশ্যে আসতে হবে না। কারণ, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রশ্ন নেই। ফলে চিহ্নিত হওয়ার সুযোগ কম। তাই ভয় বা প্রলোভন দেখানোর সুযোগও কম।
গোঘাটের প্রতিনিধির প্রস্তাব বিজেপি নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলাতেই এই ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে বলে নেতৃত্ব একমত।
এসআইআর-এর এই পর্বে যত বেশি সম্ভব কর্মীকে সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন মালবীয়, জগন্নাথেরা। যাঁরা বিএলএ-২ হিসাবে দায়িত্ব পাননি বা দলের অন্য কোনও দায়িত্বে নেই, তাঁদের দেওয়া তথ্যও নিতে হবে এবং যথাস্থানে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরেও কোথাও জেলা নেতৃত্ব বা স্থানীয় নেতৃত্ব কাউকে এসআইআর-এর কাজের বাইরে রাখতে চাইলে তিনি সরাসরি বিজেপির দলীয় অ্যাপে দেওয়া ‘গেটওয়ে’ ব্যবহার করে কমিশনের পোর্টালে তথ্য জমা করতে পারবেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, ওই কর্মশালায় রাজ্য বিজেপির এক প্রথম সারির নেতা বলেন, ‘‘যাঁরা পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছেন, তিনিও জেগে উঠে কাজ করতে চাইলে বা ঘরে বসে সাহায্য করতে চাইলে সেই সাহায্য নিতে হবে। শুধু বিজেপি করার ইতিহাস থাকলেই হবে। আর কিছু দেখার দরকার নেই।’’