BGBS 2025

বিজিবিএসের দ্বিতীয় দিনে বিনিয়োগ-প্রস্তাব সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার, স্বাক্ষর ২১২টি মউ, ঘোষণা মমতার

বুধবারেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথমার্ধে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) বিষয়ক আলোচনা হবে। সকাল থেকে দুই ধাপে সেই আলোচনা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৯
BGBS 2025: CM Mamata Banerjee Announces Investment Proposal Figures

পর্যটন থেকে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প— সব ক্ষেত্রেই এল বিনিয়োগের প্রস্তাব। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) উদ্বোধনী মঞ্চে বুধবার বড় বড় অঙ্কের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুকেশ অম্বানি, সঞ্জীব গোয়েনকা, সজ্জন জিন্দল, সঞ্জীব পুরীরা। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের সমাপ্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বুধবার যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল, তা হিসাবে ধরা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে যে সমস্ত বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, সেটাই ‘অভূতপূর্ব’।

Advertisement

বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি সকলেই একটা কথা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন। তা হল, কত কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এল।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু আজকেই (বৃহস্পতিবার) ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে।’’ রাজ্য সরকারের সঙ্গে ২১২টি মউ (মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষরিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার। মমতা এ-ও জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে অম্বানি বা জিন্দল যা ঘোষণা করেছেন, তা তো রয়েছেই। তা ছাড়াও দুই শিল্পপতিই তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের দুই গোষ্ঠী আরও কিছু বিনিয়োগ করবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘শুধু মুকেশজিই বাংলায় এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন।’’

এ বছর ছিল অষ্টম বিজিবিএস। বুধবার উদ্বোধনের আগেই সরকারকে নিশানা করেছিল বিজেপি, সিপিএমের মতো রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। তাদের প্রশ্ন ছিল, এর আগেও বাণিজ্য সম্মেলনে বিনিয়োগ নিয়ে অনেক ‘গালভরা কথা’ শোনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বিজিবিএসের উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই বিরোধীদের জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘সকলেই মানছেন বাংলা বদলে গিয়েছে। সকলেই মানছেন প্রতি বছর কলেবরে বাড়ছে বিজিবিএস। তাই এখন শুধু দেশের শিল্পপতিরাই নন, ২০টি অন্য দেশ আমাদের সহযোগী হয়েছে।’’

বুধবারেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথমার্ধে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) বিষয়ক আলোচনা হবে। সকাল থেকে দুই ধাপে সেই আলোচনা হয়েছে। একটি ধাপে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির নিজেদের মধ্যে (বি-টু-বি), অন্যটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সরকারের (বি-টু-জি)। এমএসএমই ক্ষেত্র যে বাংলার অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা বারংবার উল্লেখ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘বাংলায় এমএসএমই সেক্টরে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ কর্মরত। এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।’’ এই বিজিবিএসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকেই পরের বিজিবিএসের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। উল্লেখ্য, নির্ধারিত নির্ঘণ্ট মেনে নির্বাচন হলে আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। অর্থাৎ, তার আগে একটি বাণিজ্য সম্মেলন হতে পারে। তেমন হলে সেই সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে বিধানসভা ভোটে যাওয়ার অবকাশ থাকবে মমতার কাছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এমএসএমই নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তার নির্যাস তুলে ধরেন শিল্পপতিরা। যাঁরা মূলত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের জন্য সরকারের দূত হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁদের বক্তব্য ক্রমানুযায়ী দেওয়া হল—

মেহুল মোহানকা

ন্যাপকিন, ডাস্টার, সুতি-সহ অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন মেহুল। তাঁর কথায়, ‘‘তিনটি শিল্পতালুক গড়ে উঠবে জলপাইগুড়িতে। যা উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ছাপ ফেলবে। এই ক্ষেত্রে মোট ১৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ হাজার।’’

হর্ষবর্ধন নেওটিয়া

শিল্প মানচিত্রে বাংলার গতিশীলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন হর্ষ। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা বদলাচ্ছে বলেই বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে। নতুন নতুন সংস্থা হোটেল শিল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ১০-১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যা উল্লেখযোগ্য।’’

উমেশ চৌধুরী

টিটাগড় ওয়াগন্‌সের কর্ণধার মমতা ক্ষমতায় আসার গোড়া থেকেই তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেন। মাঝারি শিল্পে তাঁকে গুরুত্বও দেয় নবান্ন। তিনি বলেন, ‘‘শিল্পবান্ধব পরিবেশ বাংলায় তৈরি হয়েছে বলেই এখন শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাও বাংলায় বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব এসেছে। তা বাস্তবায়িতও হবে।’’

রুদ্র চট্টোপাধ্যায়

চা-শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ নাম রুদ্র। তিনি পর্যটন বিষয়ক সেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন। একটি ভিডিয়ো ক্লিপ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পর্যটনে বিনিয়োগে বাংলায় চারিদিকে সুযোগ রয়েছে। পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে ৭১ জনের কর্মসংস্থান হতে পারে।’’ রুদ্র জানান, পর্যটন সংক্রান্ত বিনিয়োগের জন্য বিজিবিএসের দ্বিতীয় দিন ৫০টি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

রূপক বড়ুয়া

হাসপাতাল শিল্পে বিনিয়োগের সংক্রান্তক বিষয়ে বলতে গিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসক রূপক বলেন, ‘‘হাসপাতাল এমন একটি ক্ষেত্র, সেখানে বিনিয়োগের বিষয়ে চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যার উপর নির্ভর করতে হয়। এখন বাংলায় যে পরিমাণ মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে, তাতে চিকিৎসকের সংখ্যায় অপ্রতুলতা নেই। সেই কারণেই বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে।’’ পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগে বেসরকারি হাসপাতালে যে পরিমাণ নার্স প্রয়োজন হত, তার ৬৮ শতাংশ আসতেন বাইরের রাজ্য থেকে। এখন সেই ছবি পুরো বদলে গিয়েছে। বাংলার হাসপাতালগুলিতে কর্মরত ৭২ শতাংশ নার্সই এ রাজ্যের।’’

গৌতম ঘোষ

দেশ-বিদেশের বণিক মহলের সামনে বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় পাহাড়, সমুদ্র, সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক প্রাচুর্য রয়েছে। বিদেশের সিনেমাশিল্পকে এখানে আকর্ষিত করার কাজ আমরা চালিয়ে যাব।’’

মঞ্চে দেব-রুক্মিণী

বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব এবং তাঁর অভিনেত্রী-বান্ধবী রুক্মিণী মৈত্র। সিনেমা শিল্প সংক্রান্ত আলোচনাচক্রে বাংলার প্রাচুর্যের কথা তুলে ধরেন রুক্মিণী। বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও গোটা অনুষ্ঠানের পৌরোহিত্য করেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বুধবার উদ্বোধনী মঞ্চে মূলত ছিলেন বড় শিল্পপতি, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং তাঁর স্ত্রী এবং বিদেশি অতিথিরা। রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে উদ্বোধনী মঞ্চে দেখা যায়নি। শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাও নন। তবে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে শশী-সহ অনেক মন্ত্রীকেই মঞ্চে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাবুল সুপ্রিয়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ।

Advertisement
আরও পড়ুন