Army Vehicle Stopped by Kolkata Police

একটুর জন্য রক্ষা পেল সিপির গাড়ি! মহাকরণের সামনে বিপজ্জনক ভাবে বাঁক নেওয়া সেনা ট্রাক আটকাল পুলিশ

মহাকরণের সামনে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাককে আটকে দিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের অভিযোগ, গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চালানো হচ্ছিল। ওই ট্রাকের পিছনেই ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার গাড়ি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২৯
(বাঁ দিকে) সেনাবাহিনীর ট্রাক, তার পাশেই সিপি মনোজ বর্মার গাড়ি। ওই রাস্তায় ‘নো রাইট টার্ন’ চিহ্ন দেওয়া বোর্ড (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সেনাবাহিনীর ট্রাক, তার পাশেই সিপি মনোজ বর্মার গাড়ি। ওই রাস্তায় ‘নো রাইট টার্ন’ চিহ্ন দেওয়া বোর্ড (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

মহাকরণের সামনে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাককে আটকে দিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের অভিযোগ, গাড়িটি বিপজ্জনক ভাবে বাঁক নিয়ে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে। ওই ট্রাকের পিছনেই ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মার গাড়ি। অল্পের জন্য বড় বিপদ এড়ায় সিপির গাড়ি। ট্রাকটিকে আটকায় ট্রাফিক পুলিশ। পরে খবর দেওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানায়। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ আধিকারিকেরা। পৌঁছোন সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের দফতর ফোর্ট উইলিয়ামের (বিজয় দুর্গ) কর্তারাও। ট্রাকটিকে ডেকার্স লেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হেয়ার স্ট্রিট থানায় বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে দুপুর ১টা নাগাদ সেখান থেকে বেরোন সেনার আধিকারিকেরা।

Advertisement

ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগের ভিত্তিতে সেনার ওই ট্রাকের চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানায়। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার সময় নিজের গাড়িতেই ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তিনি লালবাজার যাচ্ছিলেন।

লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পাসপোর্ট অফিসের দিকে যাওয়ার পথে ট্রাকটি বিপজ্জনক ভাবে ডান দিকে বাঁক নিয়েছিল। কিন্তু ওই রাস্তায় ডান দিকে বাঁক নেওয়া যায় না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার জন্য গাড়িটিকে দাঁড় করানো হয়। এই নিয়মভঙ্গের জন্য কী পদক্ষেপ করা হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। যদিও ওই ট্রাকে থাকা সেনাবাহিনীর এক কর্মী অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, সিগন্যাল খোলা থাকায় ট্রাক ডান দিকে বাঁক নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ওই সেনাকর্মী এ-ও জানিয়েছেন যে, পিছনে কলকাতার সিপি-র গাড়ি ছিল, তা জানতেন না তাঁরা।

কলকাতা পুলিশের তরফে সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেনার ট্রাকটি সোজা এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে। আর ট্রাকের পাশে সিপির গাড়ি সংঘর্ষ এড়াতে আরও ডান দিকে সরে যাচ্ছে। পুলিশের তরফে ওই রাস্তায় ‘নো রাইট টার্ন’-এর চিহ্ন সংবলিত একটি ছবি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ডান দিকে বাঁক নেওয়ার অনুমতি না-থাকলেও সেনার ট্রাকটি বিপজ্জনক ভাবে তা-ই করছিল।

প্রসঙ্গত, সোমবারই ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচির মঞ্চ খুলে দিয়েছিল সেনা। মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার খবর পেয়েই সোজা গান্ধীমূর্তির সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙা মঞ্চ থেকে তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তবে সরাসরি সেনাকে আক্রমণ করেননি মমতা। বরং সেনার কথা বলার সময় তাঁর ভাষা এবং সুর ছিল অনেকটাই সংযত। তিনি বলেন, ‘‘আমার আর্মির বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। কারণ, আমরা সেনাকে নিয়ে গর্বিত।’’ মমতার মতে, সেনার এই মঞ্চ খোলার নেপথ্যে রয়েছে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সেনাকে যখন বিজেপির কথায় চলতে হয়, তখন দেশটা কোথায় যায়, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে!” ঘটনাচক্রে, সেই ঘটনার পরের দিনই সেনার ট্রাককে আটকানো নিয়ে টানাপড়েন চলল লালবাজার এবং ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে।

বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার এবং বাংলা ভাষার অপমানের প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির সামনে নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। সেইমতো মঞ্চও বেঁধেছিল বাংলার শাসকদল। সোমবার দুপুরের পর তৃণমূলের সেই প্রতিবাদমঞ্চ খুলতে শুরু করেন জওয়ানেরা। সেনা দাবি করে, দু’দিনের অনুমতি থাকলেও ময়দান এলাকায় মঞ্চটি প্রায় এক মাস ধরে বাঁধা ছিল। অস্থায়ী ওই কাঠামো সরিয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজকদের বেশ কয়েক বার জানানো হয়। কিন্তু তার পরও তা সরানো হয়নি। কলকাতা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তার পরেই সেনা মঞ্চ সরানোর কাজ শুরু করেছে বলে জানানো হয়। তবে মমতা দাবি করেন, মঞ্চ সরানোর বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা হয়নি। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘‘এ সব বাজে কথা।’’

Advertisement
আরও পড়ুন