লিয়োনেল মেসি স্টেডিয়াম থেকে চলে যাওয়ার পরে শনিবার তাণ্ডব চলে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। — ফাইল চিত্র।
যুবভারতীকাণ্ডে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। নাগেরবাজার থেকে ওই দু’জনকে পাকড়াও করেছে দক্ষিণ বিধাননগর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম গৌরব বসু এবং শুভ্রপ্রতিম দে। পুলিশ সূত্রে খবর, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভাঙচুরের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয় এই দু’জনকে। সেই সূত্র ধরেই নাগেরবাজার থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার আটটি নির্দিষ্ট ধারায় এফআইআর রুজু করেছে পুলিশ। সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া, ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারি কর্মীকে আহত করা, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে গুরুতর ভাবে জখম করা, গোলমাল পাকানোর মতো অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই ধারাগুলি যুক্ত করেছে পুলিশ। পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে এবং শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগেও নির্দিষ্ট আইনের ধারায় এফআইআর রুজু হয়েছে।
ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে শনিবার দৃশ্যত তাণ্ডব চলে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। মেসি, সুয়ারেজ়, ডি’পলেরা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু প্রায় ২০ মিনিট সেখানে থাকার পরেই স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা। যে সময়টুকু মেসিরা স্টেডিয়ামে ছিলেন, পুরো সময়টাই তাঁদের ঘিরে একটি জটলা হয়ে ছিল। সেই জটলার মধ্যে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
ওই জটলার কারণে গ্যালারি থেকে দর্শকেরা কেউই মেসিকে প্রায় দেখতেই পাননি। আর তার জেরেই মেসিরা স্টেডিয়াম ছাড়ার পরে জনতার রোষ আছড়ে পরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে গ্যালারিতে হোর্ডিং ছেঁড়া থেকে শুরু হয় ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। তার পরে শুরু হয় বোতলবৃষ্টি। গ্যালারি থেকে মাঠের দিকে একের পর এক বোতল উড়ে যেতে শুরু করে। ক্রমে সেই রোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। গ্যালারির চেয়ার ভেঙে চলে তাণ্ডব। তার পরে মাঠের ফেন্সিং ভেঙে চতুর্দিক থেকে ক্রুদ্ধ জনতার ভিড় দখল নেয় মাঠের।
শনিবারের ওই তাণ্ডবের বহু ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমের পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিয়োগুলি ইতিমধ্যে নজরে এসেছে পুলিশের। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা শুরু হয়। ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেই গৌরব এবং শুভ্রপ্রতিমকে চিহ্নিত করে বিধাননগর পুলিশ। সেই মতো সোমবার সকালে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
যুবভারতীতে তাণ্ডবের পরে শনিবারই দমদম বিমানবন্দর থেকে পাকড়াও করা হয় মেসির কলকাতা সফরের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তকে। হিংসায় উস্কানি দেওয়া, আঘাত করা, সম্পত্তির ক্ষতি, সরকারি কাজে বাধা, সরকারি কর্মীদের হেনস্থার মতো অভিযোগে মামলা রুজু বিধাননগর পুলিশের। তাঁকে ইতিমধ্যে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই ঘটনার পাশাপাশি যুবভারতীতে তাণ্ডবের ঘটনাতেও পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। এ বার ভাঙচুরের ঘটনাতেও দু’জনকে পাকড়াও করল পুলিশ। সব মিলিয়ে যুবভারতীকাণ্ডে এই নিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হল।