Cab Drivers

ঝাপসা দৃষ্টি নিয়েই ক্যাবের স্টিয়ারিংয়ে! চালকের সুস্থতা নিশ্চিত করবে কে?

সম্প্রতি কলকাতার রাস্তায় অ্যাপ-ক্যাবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে এক চোখের চিকিৎসকের। চালকের গাড়ি চালানো দেখে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারেন, চালক চোখে ঠিক মতো দেখতে পান না।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫ ০৮:২২
গণপরিবহণের চালকরা যাতে চোখ পরীক্ষা করিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসেন, তা নিয়ে কড়াকড়ি করা যেতে পারে।

গণপরিবহণের চালকরা যাতে চোখ পরীক্ষা করিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসেন, তা নিয়ে কড়াকড়ি করা যেতে পারে। —প্রতীকী চিত্র।

পথ দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তায় গাড়িচালকদের দাঁড় করিয়ে নিঃশ্বাস পরীক্ষা করে পুলিশ দেখে, তাঁরা মত্ত অবস্থায় আছেন কিনা। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণেও যে গাড়িচালক দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন, তা মাথায় রাখা হয় কি? গাড়িতে চালকের লাইসেন্স এবং গাড়ির নথিপত্র রাখা বাধ্যতামূলক হলেও চালকের শারীরিক সক্ষমতার শংসাপত্র রাখা এখনও বাধ্যতামূলক নয়।

সম্প্রতি কলকাতার রাস্তায় অ্যাপ-ক্যাবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে এক চোখের চিকিৎসকের। চালকের গাড়ি চালানো দেখে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারেন, চালক চোখে ঠিক মতো দেখতে পান না। জ্যোতির্ময় দত্ত নামে সেই চিকিৎসক বলেন, ‘‘ক্যাবচালক গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝেমধ্যেই থেমে যাচ্ছিলেন। রাস্তার এক ধার দিয়ে ধীরে ধীরে চলছিলেন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তাঁর চোখে সমস্যা হচ্ছে। এর পরে তাঁকে পরীক্ষা করে দেখি, চোখে ছানি পড়েছে। এ ভাবে গাড়ি চালানো তো বিপজ্জনক। আমার মনে হয়, যাত্রী-সুরক্ষার প্রয়োজনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পাশাপাশি চোখের সুস্থতার শংসাপত্রও গাড়িতে রাখা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।’’

গত নভেম্বরে সল্টলেকে দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনায় এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গণপরিবহণে, বিশেষত, বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। যদিও তার মধ্যে গণপরিবহণের চালকদের শারীরিক সুস্থতার শংসাপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়নি।

পরিবহণ দফতরের আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স নবীকরণের সময়ে চিকিৎসকের শংসাপত্র প্রয়োজন। কিন্তু দফতর সূত্রেই খবর, বিভিন্ন মোটর ভেহিক্‌লস দফতরে লাইসেন্স সংক্রান্ত কাজকর্ম মূলত দালালেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে, বহু চালকই শারীরিক পরীক্ষা এড়িয়ে শংসাপত্র বার করে নেন বলে অভিযোগ। অথচ, গত বছরই শহরে দু’টি বাসের দুই চালক স্টিয়ারিংয়ে বসা অবস্থায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

রাজ্য সরকার যাত্রী-সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর মতো স্লোগান চালু করেছে। কিন্তু নিরাপদে গাড়ি চালাতে হলে যে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকা প্রয়োজন, তা নিয়ে চালকদের মধ্যে সে ভাবে সচেতনতা তৈরি করতে পারেনি। চোখের চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা থেকেই তা পরিষ্কার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যাঁর গাড়িতে চেপেছিলাম, তাঁর সেন্ট্রাল ক্যাটারাক্ট ছিল। চোখের মাঝামাঝি তাঁর ছানি ছিল। এটা বয়সের কারণে হয়ে থাকে। আমি তাঁকে পরামর্শ দিই, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে বিনামূল্যে ছানির অস্ত্রোপচার করানো যায়। অনেক ক্ষেত্রে রেটিনোপ্যাথি কিংবা গ্লকোমার মতো চোখের রোগেও মানুষ ভোগেন। কিন্তু তা শুরুতে তাঁরা বুঝতে পারেন না। তাই যাঁরা গাড়ি চালান, বিশেষত গণপরিবহণের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা নির্ধারিত একটি সময় অন্তর অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করান।’’

ক্যাবচালকদের সংগঠন ‘অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’ জানাচ্ছে, এমন সমস্যার খবর তারাও মাঝে মাঝে পায়। কিন্তু ক্যাব সংস্থাগুলি কলকাতার বাইরে থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে সংগঠনের তরফে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ থাকে না। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটলে তো শুধু যাত্রীদের নয়, চালকের জীবনও বিপন্ন হবে। কিন্তু বহু চালকই তা বোঝেন না, সচেতন হন না। ক্যাব সংস্থা ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই গাড়ি নথিভুক্ত করে নেয়। চালকের শারীরিক সুস্থতা খতিয়ে দেখে না। আমরা রাজ্য সরকার তথা পরিবহণ দফতরের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’’

পরিবহণ দফতরের দাবি, গণপরিবহণে অসংখ্য চালক জড়িত। শিবির করে সকলের চোখ পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়। তবে, তাঁরা যাতে চোখ পরীক্ষা করিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসেন, তা নিয়ে কড়াকড়ি করা যেতে পারে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে চাইলেই চালকেরা চোখ পরীক্ষা করাতে পারেন। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়ে পুরোপুরি উদাসীন। আমরা খতিয়ে দেখছি নির্দেশিকা জারি করে চালকদের চোখ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা যায় কি না।’’

আরও পড়ুন