(বাঁ দিক) রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
যুবভারতী কেলেঙ্কারি নিয়ে সোমবার রাতেই নবান্নের কাছে জমা পড়েছে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট। সেই সঙ্গে প্রাথমিক সুপারিশও। তার পরের দিনই যুবভারতীকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা, অর্থাৎ ডিজিপি রাজীব কুমারকে শো কজ় করলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমারকেও শো কজ় করা হয়েছে। শনিবার ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তার জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে তাঁদের। সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুকেশ জানান, তিনি তখনও চিঠি পাননি। পেলে জবাব দেবেন।
অন্য দিকে, বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত যত দিন চলবে, তত দিন নিলম্বিত (সাসপেন্ড) থাকবেন তিনি। ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার সিংহকেও শো কজ় করা হয়েছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সিইও দেবকুমার নন্দনকেও অপসারণ করা হয়েছে পদ থেকে। মুখ্যসচিব মনোজের দফতরের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে এই নির্দেশ জানানো হয়েছে। কমিটির সুপারিশ মেনে তদন্তের জন্য সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল) গঠন করা হয়েছে।
মুখ্যসচিবের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার মেসির অনুষ্ঠানে কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, কেন ওই দিন অব্যবস্থা হয়েছিল, বেসরকারি আয়োজক সংস্থা-সহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কেন সমন্বয় সাধন করা হয়নি, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীবকে। যুবভারতীর ওই অনুষ্ঠানের পরিচালনায় বিধাননগর পুলিশের কী ভূমিকা ছিল, তা ওই একই সময়ের মধ্যে জানাতে হবে কমিশনার মুকেশকে। যুবভারতীকাণ্ডে গাফিলতির অভিযোগে বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। যত দিন অনুসন্ধান চলবে, তত দিন সাসপেন্ড থাকবেন ওই আইপিএস অফিসার।
ক্রীড়া এবং যুব বিষয়ক দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজেশকেও শো কজ় করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হল, তা জানাতে হবে তাঁকে। যুবভারতীর সিইও, অবসরপ্রাপ্ত ডব্লিউবিসিএস দেবকুমারকে অপসারণ করা হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ মেনে এই ঘটনার তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে সিট। সিট-এ রয়েছেন রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডে, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ব্যারাকপুর পুলিশের কমিশনার মুরলীধর।
এর আগে যুবভারতীকাণ্ডে অনুসন্ধান কমিটি গড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি সোমবার রাতে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করে। কমিটির সদস্যদের মতে, মেসির কলকাতা সফরের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল পুলিশ ও ক্রীড়া দফতর। তাঁরা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিটির তরফে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ঘটনার দিন পুলিশ বা ক্রীড়া দফতরের কারা দায়িত্বে ছিলেন, সফর নিয়ে আগে থেকে কী কী পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রিপোর্টে। গোটা ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান অসীম। সেই সুপারিশ মতোই গঠন করা হয়েছে সিট। তাতে রয়েছেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করেন অসীম। তিনি জানান, গোটা ঘটনায় নজরদারির অভাব ধরা পড়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রশ্ন উঠেছে, মাঠে খাবার, জলের বোতল ঢুকল কী ভাবে? আমি যত দূর জানি, মাঠের ভিতরে জলের বোতল ঢুকতে দেওয়া হয় না। অথচ মাঠে অসংখ্য ভাঙা চেয়ার, ভাঙা গেট, জল ও ঠান্ডা পানীয়ের বোতল পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রশ্ন করে জানতে পেরেছি, স্টেডিয়ামের ভিতরে স্টল হয়েছিল। তবে এখনও সবটা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছি, সে দিন যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, এটা তাঁদের দেখা উচিত ছিল। তাই আমরা সরকারের কাছে বলেছি, ওঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ মেনেই রাজ্য পুলিশের ডিজি, বিধাননগর পুলিশের কমিশনারকে শো কজ় করেছেন মুখ্যসচিব।