সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসিকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে পশ্চিমবঙ্গের গর্বের স্টেডিয়াম যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। ঘটনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। কিন্তু তাতেও আমজনতার ক্ষোভ কমেনি। ঘটনার জেরে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে আমজনতার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই ঘটনা সংক্রান্ত এক বিস্তারিত খামবন্দি রিপোর্ট নিয়ে দিল্লি গেলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সোমবার দুপুরের বিমানে দিল্লি গিয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের এ হেন আচমকা দিল্লি সফর নিয়ে কৌতূহল প্রশাসনিক মহলে। লোকভবনের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার মেসিকে দেখতে না পেয়ে উত্তেজিত জনতা যে ভাবে স্টেডিয়াম জুড়ে ভাঙচুর চালিয়েছিল তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল। সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে দিতেই দিল্লি গিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্যপাল বোসের দিল্লিতে সাক্ষাৎ হতে পারে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যপালের গতিবিধি সংক্রান্ত বিষয় নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা যায় না। তাই দিল্লিতে তিনি কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এ প্রসঙ্গে কিছু জানানো সম্ভব নয়। তবে যুবভারতীর ঘটনা যে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তার উল্লেখ থাকছে রাজ্যপালের রিপোর্টে, এমনটাই লোকভবন সূত্রে খবর। এ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যাপক ত্রুটি ছিল বলেই ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কলকাতা ছাড়াও মেসি এবং লুই সুয়ারেজরা হায়দরাবাদ, মুম্বই এবং দিল্লিতে ভিড়ে ঠাসা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। কোনও ক্ষেত্রেই কলকাতার মতো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রীয় সরকার জানতে চাইছে, আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়কের নিরাপত্তায় কি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল? আর রাজ্যপাল বোসের রিপোর্টে সেই সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বলেই লোকভবনের একটি সূত্র দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার স্টেডিয়ামে চরম বিশৃঙ্খলা তথা ভাঙচুরের ঘটনার পর অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল রাজ্যের দুই মন্ত্রীর দিকে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়াবাড়ির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ক্রীড়াপ্রেমীদের। অরূপ-সুজিত নিজেদের প্রভাব জাহির করতে যে ভাবে মেসিকে ঘিরে রেখেছিলেন, তাতেই জনতার নজরে আসেননি মেসি। ফলে স্টেডিয়ামে থাকার জনতার ক্ষোভের সুর সপ্তমে ওঠে। সেই ঘটনার পর শনিবার সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেই সময় তাঁকে প্রশাসনের তরফে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরদিন রবিবার আবার তিনি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শন করতে যান। এ বার অবশ্য তাঁকে আর কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। যুবভারতীর হতশ্রী অবস্থা পরিদর্শন করে নিজের মতামত সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন বোস। রাজভবনে ফিরে ওই দিনের আইন-শৃঙ্খলা জনিত বিষয় বিস্তারিত রিপোর্ট নেন রাজ্যপাল।
তার পরেই সে সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে নির্দেশ দেন লোকভবনে থাকা তাঁর দফতরকে। আর এ বার সরাসরি সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দিতে রাজধানীতে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এমনিতেই লোকভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নীতিগত বিরোধিতা করে ব্রিগেডে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ডাকা পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বোস। আর সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আনতে যে বিল দু’টি পাশ করা হয়েছিল, তা ফিরিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। এই খবর লোকভবনে পৌঁছোনোর পরেই বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আটকাতে সফল হয়েছেন রাজ্যপাল। যা একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি নবান্ন। আর এ বার মেসি-কাণ্ড নিয়ে চাপে থাকা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চাপ আরও বাড়াতে সেই সংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দেবেন বোস। তাতে নবান্নের সঙ্গে লোকভবনের দূরত্ব আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।