Rani Birla Girls’ College

মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূর নোটিসকে চ্যালেঞ্জ কলেজ অধ্যক্ষার, রায় ঘোষণার আগে বেঞ্চ বদলের আর্জি রাজ্যের! ক্ষুব্ধ বিচারপতি

অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূর মামলা থেকে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে সরে দাঁড়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ২০:৫৮
Kajari Banerjee, sister in law of CM Mamata Banerjee in controversy in Calcutta High Court over a show cause notice to principal of Rani Birla College

রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ তথা রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোকজ নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই কলেজেরই অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য। কিন্তু শুনানিপর্ব শেষের পরে মঙ্গলবার মামলার অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণার আগে ওই মামলা থেকে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে সরে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে জেদ করার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিচারপতি বসু। নির্দেশ ঘোষণা করতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। যা আদালতের মর্যাদাকে গভীর ভাবে আঘাত করেছে।’’ আদালত সূত্রের খবর, শুনানির সময় মামলাকারীর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী নির্দেশের আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মতো মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি বসু অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সে সময় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আপত্তি করেন। এজির দাবি, তাঁর সওয়াল এখনও শেষ হয়নি। তাঁর আবেদন, এই মামলাটি থেকে বিচারপতি বসু যেন অব্যাহতি নেন।

আদালত বক্তব্য জানানোর জন্য এজিকে সুযোগ দিতে রাজি হয়। বিচারপতি বসুর প্রস্তাব, রায়ের প্রতিলিপিতে এখনও স্বাক্ষর হয়নি। এজি চাইলে আরও সওয়াল করতে পারেন। কিন্তু তার পরেও এজি এই মামলা থেকে বিচারপতিকে সরে যাওয়ার জন্য জেদ করেন। বিচারপতির কথায়, ‘‘রাজ্যের এই অবস্থান দুঃখজনক। তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে গত ৬ অগস্ট শুনানি শুরু হয়েছিল। মামলাকারীর আইনজীবী সওয়াল শুরু করেছিলেন। রাজ্য শুনানি মুলতুবির আবেদন করলে আবার ৭ অগস্ট শুনানির জন্য রাখা হয়। সে দিনও মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়। এর পরে গত ১১ অগস্ট শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন রাজ্য-সহ সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আজ অন্তর্বতী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল!’’

এর পরে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘আজকের এই পরিস্থিতি এটি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। যা এই আদালতের মর্যাদাকে গভীর ভাবে আঘাত করেছে। তবুও, যখন কোনও পক্ষ এই আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন মামলাটি ছেড়ে দেওয়াই ভাল। কারণ, বিচার শুধু হতে হবে তা নয়, বিচার হচ্ছে তা দেখাতেও হবে।’’ বিচারপতি বসু জানান, মামলাটি থেকে তিনি অব্যাহতি নিচ্ছেন। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এই বিষয়ে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতি (গভর্নিং বডি)-র সদস্য হিসেবে আভেরি গুহকে মনোনীত করেছিল। ওই বছর ১২ অগস্ট উচ্চশিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি ওই কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাবে শ্রাবন্তীকে নিযুক্ত করেন। চলতি বছর গত জুন মাসে ওই কলেজের সভাপতি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর কাজরীকে মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া মানস কবি এবং সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হন।

গত ১১ জুন ওই কলেজের অধ্যক্ষা কলেজের পরিচালন সমিতির (জিবি) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের মনোনীত সভাপতি কাজরী সাক্ষাৎ করেন। পরের দিন বাকি সদস্যেরা নির্বাচন না করে মনোনয়নের ভিত্তিতে গভর্নিং বডি গঠন করার পরামর্শ ও নির্দেশ দেন। এর পরেই পরিচালনার সমিতির সভাপতির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন প্রিন্সিপাল। এর পরে গত ৩ জুলাই কলেজের অধ্যক্ষাকে শো-কজ করেন সভাপতি। ওই শো-কজকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী।

Advertisement
আরও পড়ুন