বছর শেষের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় আগুন পোহানোর প্রবণতা চোখে পড়ছে শহরজুড়ে। —ফাইল চিত্র।
শীত পড়তেই কলকাতা শহরের অলিগলি, ফুটপাথ ও বস্তি এলাকায় শুকনো পাতা, কাঠ ও আবর্জনা পুড়িয়ে আগুন পোহানোর প্রবণতা আবার চোখে পড়ছে। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এই অস্থায়ী উপায়ই এখন শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, শীতের শুরুতেই শহরের বায়ুতে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞমহলে এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে পুলিশি নজরদারি চায় কলকাতা পুরসভা।
কলকাতা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত কলকাতা পুরসভার উপর বর্তায়। তবে পুরসভার একাধিক আধিকারিকের মতে, শহরের সর্বত্র একযোগে নজরদারি চালানো ও অবৈধ ভাবে আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করা কার্যত কঠিন হয়ে উঠছে। পুরসভা নিয়মিত ভাবে সচেতনতা প্রচার, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ এবং কিছু ক্ষেত্রে জরিমানার ব্যবস্থাও চালু করেছে। তবুও মানুষের অভ্যাস বদলাতে না পারলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেই মত তাঁদের। ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে শীতকালে কলকাতা শহরে যত্রতত্র আগুনের তাপ পোহানোয় বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে প্রশ্নও উঠেছিল। মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে রাশ টানতে কলকাতা পুলিশের অধীন সব থানাকে চিঠি দেওয়া হবে। তবে শীতের দাপট বাড়তে রাস্তায় সকাল-বিকেল আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে আবহাওয়ার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই দূষণ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা কম থাকায় এবং বাতাসের গতিবেগ হ্রাস পাওয়ায় ধোঁয়া ও দূষিত কণা সহজে উপরের দিকে উঠতে পারে না। তার উপর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা জায়গায় পাতা ও কাঠ পোড়ানোর ফলে তৈরি হওয়া ধোঁয়া বাতাসে মিশে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখে জ্বালা, শিশু ও প্রবীণদের নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
পরিবেশবিদদের মতে, শীতকালে কলকাতার বায়ুদূষণ বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ নাগরিকদের মধ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতার অভাব। অনেকেই জানেন না যে, শুকনো পাতা বা কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া সরাসরি বায়ুর গুণমানকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার অনেকে জেনেও বিকল্পের অভাবে বা উদাসীনতার কারণে এই কাজ চালিয়ে যান। পরিবেশবিদেরা তাই পুরসভা ও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর জোর দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ স্বপন বলেন, “শীতে আগুন পোহানোর জন্য তো কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। বড়জোর আমরা অনুরোধ করতে পারি। সেই অনুরোধ যদি কোনও পুলিশ- প্রশাসনের দিক থেকে আসে, তা হলে তা অনেক বেশি কার্যকর হয় বলেই আমরা দেখেছি। এ ক্ষেত্রে পুরসভার সচেতনতামূলক প্রচারের পাশাপাশি পুলিশ- প্রশাসনকেও আমরা এ বিষয়ে নজরদারি করতে অনুরোধ করব।”
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুযায়ী, খোলা জায়গায় কিছু পুড়িয়ে আগুন পোহানোর পরিবর্তে কমিউনিটি ওয়ার্মিং শেল্টার, কম্বল বিতরণ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও পাড়ার স্তরে নিয়মিত পরিবেশ সচেতনতা শিবির হলে মানুষের মনোভাব বদলাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদদের স্পষ্ট বক্তব্য, শুধু প্রশাসনের প্রচেষ্টা নয়, নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণই পারে শীতের কলকাতাকে দূষণের কবল থেকে রক্ষা করতে।