এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
‘আইআইএম ক্যালকাটা’-য় (আইআইএম জোকা নামে সমধিক পরিচিত) ধর্ষণ মামলায় সোমবার আলিপুর আদালতে অভিযোগকারী তরুণীর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আগামিকাল (মঙ্গলবার) ফের তরুণীর গোপন জবানবন্দির দিন ধার্য হয়েছে। অন্য দিকে পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার অভিযুক্তের ‘মেডিকো-লিগ্যাল’ (অপরাধমূলক কাজ শনাক্ত করতে শারীরিক পরীক্ষা) করানো হয়েছে। তবে তাঁর কাউন্সেলিং করানোর মতো কোনও সমস্যার কথা এখনও জানা যায়নি। তদন্ত সংক্রান্ত কাজের জন্য সোমবার ‘নির্যাতিতা’র সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে পুলিশ। তবে লালবাজার সূত্রে খবর, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তরুণীর ফোন বন্ধ ছিল।
যাবতীয় নিয়মবিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা এসওপি) মেনেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে আইআইএম জোকার হস্টেলের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে হস্টেলের ‘লগ বুক’। হস্টেলের ঘরের ফরেন্সিক পরীক্ষা এবং সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহও করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
আইআইএম জোকার বয়েজ় হস্টেলে নিয়ে গিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ‘নির্যাতিতা’র লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত শুক্রবারই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত যুবককে আগামী শনিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু তরুণীর বাবা সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, মেয়ের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি। কেউ খারাপ ব্যবহার করেননি।
‘নির্যাতিতা’র বাবার বক্তব্য ঘিরে বিভ্রান্তির বিষয়টি সোমবার আলিপুর আদালতের নজরে আনেন অভিযুক্তের আইনজীবী। ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে পুলিশ যাতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, আদালতে সেই আর্জি জানান তিনি। যদিও সরকারি আইনজীবী এতে আপত্তি জানান। পুলিশি তদন্তের বিষয় কেন প্রকাশ্যে আনা হবে, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন সরকারি আইনজীবী। বিচারকও মৌখিক ভাবে তাঁকে সমর্থন করেন।
পুলিশের কাছে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে ‘নির্যাতিতা’ জানিয়েছিলেন, শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি অভিযুক্তের কাউন্সেলিং করাতে আইআইএম জোকায় গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত তাঁকে বয়েজ় হস্টেলের ভিতর নিয়ে যান। বয়ান অনুসারে, সেখানে ওই তরুণীকে পিৎজ়া এবং জল খেতে দেওয়া হয়। খাবারে কিছু মেশানো ছিল বলে অভিযোগ। ‘নির্যাতিতা’ জানান, ওই খাবার খাওয়ার পরেই তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। এই সময় তাঁর বমি পেলে তাঁকে শৌচাগারেও যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের ব্যাখ্যা ছিল, বয়েজ় হস্টেলে এক জন মেয়ে এসেছে, এটা তাঁর বন্ধুরা জেনে যেতে পারেন, এমনটাই জানিয়েছেন তরুণী।
‘নির্যাতিতা’র লিখিত বয়ান অনুযায়ী, দু’জনের কথাবার্তা চলার সময়ে হঠাৎই অভিযুক্ত তাঁর চুল টেনে ধরেন। আত্মরক্ষায় চড় মারেন তরুণী। তার পরেই অভিযুক্ত তাঁর মাথা ঠুকে দেন। সংজ্ঞা হারান ‘নির্যাতিতা’। লিখিত বয়ানে ‘নির্যাতিতা’ জানিয়েছেন, অর্ধচেতন অবস্থায় তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। অনেক পরে জ্ঞান ফিরলে তরুণী দেখেন যে, তিনি বয়েজ় হস্টেলে রয়েছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। তরুণীর অভিযোগ, ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই অভিযুক্ত হস্টেলে ঢোকার আগে রেজিস্টার খাতায় তাঁকে নাম নথিভুক্ত করতে দেননি।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম আরজি কর এবং কসবার ঘটনার মতোই আইআইএম জোকার ক্ষেত্রেও ধর্ষণে অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)