Kasba Gangrape

গণধর্ষণ কাণ্ডে কলেজে থেকে বহিষ্কার দুই ছাত্রকে, চাকরি গেল মূল অভিযুক্ত ‘এম’-এর, সিদ্ধান্ত কলেজ পরিচালন সমিতির

মঙ্গলবার বৈঠকে বসে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের পরিচালন সমিতি। বৈঠকে হাজির পরিচালন সমিতির সদস্যেরা একমত হয়ে ওই ছাত্রদের বহিষ্কার এবং মূল অভিযুক্তকে শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে সরানোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৭
Two students expelled from college in Kasba gang rape case, main accused loses job

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করল কলেজের পরিচালন সমিতি। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত দু’জন ছাত্রকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি, কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে ছেঁটে ফেলা হল মূল অভিযুক্ত ‘এম’কে। সঙ্গে অন্য দুই অভিযুক্ত ছাত্র যাতে অন্য কোনও কলেজে ভর্তি না হতে পারেন, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর মঙ্গলবার প্রথম বার বৈঠকে বসে কলেজের পরিচালনা সমিতি। কলেজ সূত্রে খবর, বৈঠকে হাজির পরিচালনার সমিতির সদস্যেরা একমত হয়ে ওই ছাত্রদের বহিষ্কার এবং মূল অভিযুক্তকে শিক্ষাকর্মীর চাকরি থেকে সরানোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বজবজের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব এবং কলেজের অধ্যক্ষা নয়না চট্টোপাধ্যায় পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

অভিযুক্ত ছাত্রদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালে কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন মূল অভিযুক্ত। দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছিল। কলেজ পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাবদ যে পরিমাণ অর্থ মূল অভিযুক্ত নিয়েছেন, তা কলেজকে ফিরিয়ে দিতে হবে। পুলিশি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে কী ভাবে অস্থায়ী কর্মী পদে নিয়োগ করেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জবাবে পরিচালন সমিতির সদস্য হরিপদ বণিক বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিলই, তা জানানো হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর তিনি কী ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, তা বলতে পারব না। চাকরিতে যোগদান করার পর থেকেই অভিযোগ উঠছিল কলেজের অন্দর থেকে, কলেজে থ্রেট কালচার শুরু করেছিলেন তিনি।’’

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরিবার চাইলে ওই ছাত্রীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সম্প্রতি টেন্ডার ডাকা হয়েছিল সারা কলেজে সিসিটিভি লাগানোর জন্য। সেই প্রক্রিয়াকে নতুন করে পর্যবেক্ষণ করে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। যদিও, আগে থেকেই কলেজে বেশ কিছু সিসিটিভি লাগানো ছিল। কিন্তু ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, সেই সব সিসিটিভির কার্যকারিতা নিয়েও। যে সংস্থা সিসিটিভির দায়িত্বে ছিল, তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করায় তাদের কলেজের তরফে শো কজ় করা হয়েছে। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের তরফে কলেজের বাইরে বেশ কিছু সিসিটিভি লাগানো হয়েছে।

পাশাপাশি, এ বার থেকে পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীও রাখা হবে। যে নিরাপত্তা এজেন্সি কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল, পরিচালন সমিতির বৈঠকে তাদের শো কজ় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালন সমিতি। উচ্চশিক্ষা দফতর এবং কলকাতা পুলিশের সবুজ সঙ্কেত পেলেই পঠনপাঠন শুরু হবে। তবে কলেজ খোলা হলে তার সময় বদল করা হবে। সকাল সাতটা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত কলেজ খোলা থাকবে। কলেজের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়েই কলেজে ঢুকতে হবে। আপাতত কলেজের কাজকর্মের জন্য অফিস খোলা থাকবে। কলেজ পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ বার থেকে কলেজ বন্ধ হওয়ার পর কোনও ছাত্রছাত্রীই আর কলেজের ভিতরে থাকতে পারবেন না।

এত দিন কলেজের ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি’ থাকলেও, তা কার্যকর ছিল না। পরিচালন সমিতির বৈঠকে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। অন্য দিকে, এই ঘটনায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, “অনেক প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করেছি। সমস্ত কিছু আমরা বিশ্লেষণ করছি। তদন্তের বাকি প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। আমাদের কাছে প্রচুর তথ্য এসেছে, যা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে । যা যা পদক্ষেপ করার দরকার সব করা হচ্ছে।”

মঙ্গলবার আদালত গণধর্ষণে অভিযুক্ত তিন জনকে আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। কসবার আইন কলেজের সেই রক্ষীকে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজত দেওয়া হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন