Burra Bazar Fire Incident

হোটেলের দোতলায় রান্নার ব্যবস্থা থাকার ফলেই বিপত্তি! আগুনের উৎস খুঁজতে গিয়ে কী সূত্র পেলেন তদন্তকারীরা

কী ভাবে আগুন লাগল, আগুনের উৎস কোথায়, দমবন্ধ হয়ে এত জনের মৃত‍্যু কী ভাবে হল, সেগুলিই জানতে চান তদন্তকারীরা। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে ফরেন্সিক দলও বড়বাজারের ওই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১৩:০০
বড়বাজারের হোটেলে আগুন।

বড়বাজারের হোটেলে আগুন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

বড়বাজারের মেছুয়ার হোটেলে কী ভাবে লেগেছিল আগুন? কী ভাবে এতটা ছড়িয়ে পড়ল সেই আগুন, এখন সে সব বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, হোটেলে দোতলায় মজুত করা প্লাইউড, বিদ‍্যুতের তার, রং এবং সেই সঙ্গে থাকা আরও কিছু রাসায়নিক আগুন ছড়াতে সাহায‍্যে করেছিল। কিন্তু কী ভাবে আগুন লাগল, আগুনের উৎস কোথায়, দমবন্ধ হয়ে এত জনের মৃত‍্যু কী ভাবে হল, সেগুলিই জানতে চান তদন্তকারীরা। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে ফরেন্সিক দলও বড়বাজারের ওই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন।

Advertisement

সূত্রের খবর, হোটেলের দোতলা জুড়ে চলছিল পানশালা, ডান্স ফ্লোরের কাজ। সেখানেই মজুত ছিল কাঠের কাজের বিভিন্ন সামগ্রী। এ ছাড়াও কাজের জন্য ছোট কিছু যন্ত্র ছিল। ওই তলায় থাকা জিনিসপত্র দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ, হোটেলের রান্নাঘর ছাড়াও ওই জায়গায় রান্না করা হত। তাঁদের একটা অংশ মনে করছেন, যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁরাই ওখানে রান্না করতেন। সূত্রের খবর, ওই রান্নার জায়গা আগুনের উৎস হতে পারে। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীদের একাংশ। একটি পোড়া গ‍্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে। তার পরেই তদন্তকারীদের ধারণা জোরালো হচ্ছে বলে খবর। ওই হোটেলের উল্টোদিকে একটি দোকানের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, নির্মাণকর্মীরা হোটেলের ওই দোতলায় নিজেদের কাজের জায়গাতেই রান্না করতেন।

বৈদ্যুতিক কোনও যন্ত্র থেকে বড়বাজারের হোটেলে আগুন লেগে থাকতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দোতলায় নতুন নির্মাণের জন্য রাখা ছিল কিছু যন্ত্র। বিদ্যুতের কাজ, মেঝে ঘষার জন্য ব্যবহার করা হয়ে সে সব যন্ত্র। সেই যন্ত্রগুলি থেকে আগুন লেগেছিল কি না, তা-ও খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা।

নির্মাণের কারণে হোটেলের দোতলায় রাখা ছিল রঙ, প্লাইউড, রাসায়নিক। এগুলি সবই দাহ্য। আবার এগুলি পুড়লে প্রচুর কালো ধোঁয়া বার হয়। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, সেই ধোঁয়া সিঁড়ি দিয়ে উপরের তলায় উঠে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। হোটেলের বন্ধ ঘরও ভরে গিয়েছিল ধোঁয়ায়। তাতে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। তদন্তকারীদের একটি অংশ মনে করছেন, অ‍্যাডেসিভ বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় দাহ্য পদার্থ এই মারণ ধোঁয়ার উৎস হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ লিটার কেরোসিন বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ পুড়ে ১,০০০ বর্গফুটের ঘর কালো ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিতে পারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেলের দোতলায় আবাসিকদের জন্য কোনও ঘর নেই। ওই পুরো তলা জুড়ে কাজ চলছিল। ফল্‌স সিলিংও লাগানো হয়েছে এই তলায়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, দোতলায় আগুন লাগার পরে সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে বাকি হোটেলে। আর তাতেই ঘটেছে প্রাণহানি।

বড়বাজারের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। আরজি করে যে সমস্ত দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে, তার রিপোর্ট বলছে, অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়া। এনআরএস হাসপাতালের দেহগুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও পোড়া ক্ষতের উল্লেখ নেই। সেখানে যাঁদের ময়নাতদন্ত হয়েছে, মূলত শ্বাসরুদ্ধ হয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। যিনি ঝাঁপ দিয়েছিলেন, মেডিক্যাল কলেজের কাছে পুলিশ মর্গে তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর মৃত্যুর কারণ একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পতন। এই ঘটনায় বড়বাজারের হোটেলের মালিক এবং ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement
আরও পড়ুন