Lionel Messi

মেসি-মূর্তির জমির মালিক কে? লেকটাউন ঘুরে উত্তর মিলল না, মুখে মুখে ঘুরছে সুজিতের নাম, তবে দিনভর নীরব রইলেন মন্ত্রী

ভিআইপি রোড পারাপারের জন্য লেকটাউন এলাকায় যে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরি হয়েছে, তার উপরের অংশকে বহু দিনই তকতকে করে সাজিয়ে রেখেছেন সুজিত। সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে মেসির ৭০ ফুটের মূর্তি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৩
Who owns the land of Lionel Messi statue in Laketown

লেকটাউনে লিয়োনেল মেসির ৭০ ফুট দীর্ঘ মূর্তি কার জমিতে তৈরি সেই প্রশ্নে দিনভর চুপই থাকলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হায়াত রি়জেন্সি থেকে রিমোটের মাধ্যমে নিজের মূর্তি নিজে উন্মোচন করেছিলেন লিয়োনেল মেসি। ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টা নাগাদ যখন মেসি রিমোটের বোতাম টিপছেন, তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মূর্তি গড়ার প্রধান ‘কারিগর’ তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। যুবভারতীতে মেসি সফরের বিপর্যয় ঘিরে জনতার কাঠগড়ায় অনেক নেতা উঠলেও, সুজিতের নাম সেই অর্থে বিতর্কে জড়ায়নি। কিন্তু জনস্বার্থ মামলায় সোমবারই কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, যে জায়গায় মেসির মূর্তি তৈরি হয়েছে, সেটির মালিক কে? সরকারি জায়গা না কি ব্যক্তিগত? মঙ্গলবার সকাল থেকে লেকটাউনে ঘুরে, সংশ্লিষ্ট অনেককে ফোন করেও ‘মালিকের’ সন্ধান পাওয়া গেল না।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দোকানদার, পার্কে বেড়াতে আসা নাগরিক থেকে সুজিতের ক্লাব শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের লোকজন— কেউই প্রায় বলতে পারলেন না, জমির মালিক কে। তবে স্থানীয়েরা প্রায় সকলেই বলছেন, ‘‘এখানে যা হয়, সব সুজিতদা জানেন!’’ কিন্তু সুজিত? দিনভর নীরবই রইলেন তিনি। মঙ্গলবার হুগলির পোলবায় গিয়েছিলেন তিনি। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। আনন্দবাজার ডট কমের তরফে হোয়াটস্‌অ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনও জবাব দেননি।

ভিআইপি রোড পারাপারের জন্য লেকটাউন এলাকায় যে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরি হয়েছে, তার উপরের অংশকে বহু দিনই তকতকে করে সাজিয়ে রেখেছেন সুজিত। সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে মেসির ৭০ ফুটের মূর্তি। ভূগর্ভস্থ পথের উপরের অংশটি ছোটখাটো পার্কের আকার নিয়েছে। শীতের দুপুরে লোকের মেলা। মেসি কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার পরে ১১ দিন কেটে গেলেও মঙ্গলবার দেখা গেল মূর্তির সামনে ছবি তোলার হিড়িক কমেনি। স্থানীয়রা তো বলেই দিচ্ছেন, যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে লোকমুখে এই পার্কের নাম না মেসি পার্ক হয়ে যায়!

স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা স্নিগ্ধা সেন পার্কে বসেই বললেন, ‘‘এখানকার উন্নয়নের যা কাজ, সবই করেন সুজিতদা। বিবেকানন্দের মূর্তির জন্য এটাকে অনেকে বিবেকানন্দ পার্ক বলত। তবে এখন তো সবাই মেসি পার্কই বলছে!’’ মেসির স্ট্যাচুকে ঘিরে আপ্লুত স্থানীয় বাসিন্দা গুনগুন রায়ের কথায়, ‘‘কে দেখাশোনা করে জানি না। তবে মেসির স্ট্যাচু হওয়ায় এখানে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।’’

যুবভারতীতে মেসিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা হলেও হায়াতে তেমন কিছু হয়নি। তা নিয়ে সুজিত সংবাদমাধ্যমে যা বলেছেন, তাতে তাঁর শ্লাঘাই প্রকাশ পেয়েছে বলে অভিমত অনেকের। কিন্তু আদালত প্রশ্ন তুলে দিয়েছে জমির মালিকানা নিয়ে। সরকারের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। মঙ্গলবারও একই কথা বললেন কল্যাণ। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন, ‘‘সরকারি জায়গায় কি আর মূর্তি নেই? এই প্রথম কোনও মূর্তি হল না কি? রেড রোডে অম্বেডকর, মেয়ো রোডে মহাত্মা গান্ধী, হাজরা মোড়ে ইন্দিরা গান্ধী, শ্যামবাজারে নেতাজি, ধর্মতলায় লেনিনেরও মূর্তি আছে। কারও ক্ষমতা থাকলে কোর্টে গিয়ে বলুক যে, তারা মেসির মূর্তি ভাঙতে চায়।’’

ঘটনাচক্রে, মেসির মূর্তির অদূরেই রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের একটি আবক্ষ মূর্তি। সেটিরও উদ্বোধক সুজিত। তবে সেই মূর্তির গায়ে লেখা ‘সৌজন্যে লেকটাউন অ্যাসোসিয়েশন’। মেসির মূর্তির গায়ে অবশ্য মেসি আর সুজিতের নাম। আর নাম রয়েছে শিল্পী মন্টি পালের। তবে লেকটাউন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সাহাও জানিয়ে দিলেন, জমির মালিকানা কার, তাঁর জানা নেই। কে জানে? সুজিতের অফিসের কেউ বলতে পারলেন না। বলতে পারার মতো কোনও বড় কর্তা ছিলেন না তাঁর ক্লাব শ্রীভূমিতেও।

জমিটি পূর্ত দফতরের না কি পুরসভার? দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা দমদমের রাজনীতিতে সুজিত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নিতাই দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পুরপ্রধান কস্তুরী চৌধুরীও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জায়গাটি যত দূর জানি পূর্ত দফতরের। সম্ভবত।’’ রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় অবশ্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বললেন, ‘‘পূর্ত দফতরের জায়গা কি না এখনই বলতে পারছি না। পরে জেনে বলব।’’

তবে নাম প্রকাশে নারাজ এক তৃণমূল নেতা খোঁজখবর নিতে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘‘আহা! এ আবার কী প্রশ্ন? জমি কি ভগবান কাউকে লিখেপড়ে দেন না কি? জমি যখন যার দখলে, জমি তখন তার।’’

Advertisement
আরও পড়ুন