Mamata Banerjee

‘পরিকল্পনাহীন, প্রশিক্ষণের অভাব’! বিএলও-দের মৃত্যুতে কমিশনকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, এসআইআর স্থগিতের অনুরোধ

মমতার এই দাবি নতুন নয়। দিন কয়েক আগেও শিলিগুড়ির সরকারি মঞ্চ থেকে এসআইআর প্রক্রিয়াকে অবাস্তব পরিকল্পনা বলে দাবি করেন মমতা। সেই একই বক্তব্য তুলে ধরে এ বার কমিশনকে চিঠি দিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৩
Mamata Banerjee wrote letter to Chief election commissioner on SIR

(বাঁ দিকে) মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে আবার সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের অনুরোধ জানালেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এটা বিপজ্জনকও বটে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের দুই বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) মৃত্যু এবং অসুস্থতার খবর মিলেছে। অভিযোগ, এসআইআরের কাজের চাপেই এ হেন ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বিএলও-দের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের কথা বলেন।

Advertisement

মমতার এই দাবি নতুন নয়। দিনকয়েক আগেও শিলিগুড়ির সরকারি মঞ্চ থেকে এসআইআর প্রক্রিয়াকে অবাস্তব পরিকল্পনা বলে দাবি করেন তিনি। সেই একই বক্তব্য তুলে ধরে কমিশনকে চিঠি দিলেন এ বার। চিঠিতে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রক্রিয়া শুধু পরিকল্পনাহীন বা বিশৃঙ্খল নয়, বরং বিপজ্জনকও। এসআইআর প্রক্রিয়াকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে জানিয়েছেন, এসআইআর প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে যথেষ্ট। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় নথি সম্পর্কেও অস্পষ্টতা থেকে গিয়েছে। এই প্রক্রিয়া কাঠামাগত ভাবে ত্রুটিপূর্ণ। মমতা মনে করেন, ‘‘বিএলও-দের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের সময়। কৃষিক্ষেত্রের এই ব্যস্ততম সময়ে এসআইআর প্রক্রিয়া চালানো অযৌক্তিক। সাধারণ মানুষের উপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’’ এই প্রক্রিয়া বিএলও-দের উপর তো বটেই, সাধারণ মানুষদেরও মানসিক ভাবে চাপে ফেলছে। সেই কারণে কিছু আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

চিঠির শেষে মমতার অনুরোধ, অবিলম্বে যেন এই এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর আরও অনুরোধ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা হোক। একই সঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়ার সময়সীমা পুনর্বিবেচনারও অনুরোধ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রক্রিয়া যদি অবিলম্বে সংশোধন করা না-হয়, তবে তা সকলের কাছেই ক্ষতির।’’

অতীতে মমতা দাবি করেছিলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে মানুষকে এসআইআর বন্দি করা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকার যাতে কোনও কাজ করতে না পারে তা-ই এসআইআর-এর নামে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ জারি করা হয়েছে।’’ নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপিকে নিশানা করে এসআইআর নিয়ে তোপ দেগেছেন মমতা। এসআইআর-এর পরিকল্পনার বাস্তবতা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। দলনেত্রী মমতাও একই দাবি তুলে বার বার বলেছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন ঘোষণা হবে। বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। আগে দু’মাসে এই কাজ সম্পূর্ণ করা অসম্ভব।’’

বুধবার ডুয়ার্সের মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা-বাগান এলাকায় বাসিন্দা শান্তিমুনি ওঁরাও-এর আত্মহত্যার খবর মেলে। তিনি একজন বিএলও ছিলেন। অভিযোগ, কাজের চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তাঁর অকালমৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনকে দুষেছিলেন মমতা। এ প্রসঙ্গে বিজেপির সাংসদ তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তা তারাই নেবে। কমিশন যদি মনে করে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন, সেটা বিবেচনা করবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন