SIR in West Bengal

ছেড়ে চলে যাওয়া জন্মদাতার মৃত্যুর নথি কোথায় পাব? বিশ বছর পরে রাষ্ট্রের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভাসলেন যুবতী

রানাঘাটের বাসিন্দা মানু মিত্রের জন্ম ১৯৯৭ সালে। তাঁর জন্ম শংসাপত্র এবং স্কুলের নথিতে বাবার নাম হিসাবে নথিভুক্ত রয়েছে প্রবীর দাসের নাম। কিন্তু মানু যখন স্কুলে যাচ্ছেন, তখনই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার পর মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০১
প্রশাসনিক ভবনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মানু মিত্র।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মানু মিত্র। —নিজস্ব ছবি।

রক্তের সম্পর্ক না কাগজের নথি, বড় কোনটা? জন্মদাতা বড় না যিনি বড় করেছেন তিনি? এসআইআরের শুনানিতে গিয়ে এমনই জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন এক যুবতী। নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে অঝোরে তাঁকে কাঁদতে দেখে জড়ো হলেন শুনানিতে ডাক পাওয়া আরও পাঁচ জন। অদ্ভুত জটিলতায় মানু মিত্র।

Advertisement

রানাঘাটের বাসিন্দা মানুর জন্ম ১৯৯৭ সালে। সেই সময় তাঁর জন্ম শংসাপত্র এবং স্কুলের নথিতে বাবার নাম হিসাবে নথিভুক্ত রয়েছে প্রবীর দাসের নাম। কিন্তু মানু যখন স্কুলে যাচ্ছেন, তখনই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার পর মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি। পরে রানাঘাটের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা তিমির ঘোষকে বিয়ে করেন মানুর মা। স্কুলবেলা থেকে তাঁকেই বাবা বলে ডেকে এসেছেন মানু। তাঁর পরিচয়েই বড় হয়েছেন। আধার থেকে ভোটার কার্ড— সমস্ত নথিতে তিমিরই মানুর বাবা। বর্তমানে মানু বিবাহিত। শ্বশুরবাড়ির ঠিকানাতেও বাবা হিসাবে তিমিরের নামই নথিভুক্ত।

কিন্তু, সমস্যার সূত্রপাত ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। সেখানে মানুর মায়ের নাম নেই। নিয়ম অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে নিজের জন্ম শংসাপত্র পেশ করতে হয়। কিন্তু সেখানে তো রয়েছে জন্মদাতা প্রবীরের নাম।

শনিবার শুনানিতে আধিকারিকেরা মানুর কাছে তাঁর জন্মদাতার মৃত্যু শংসাপত্র দাবি করেছেন। তাই শুনে চোখের জল, নাকের জল দশা যুবতীর। তিনি জানান, প্রায় দুই দশক হল বাবা-মায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। তার পর থেকে বাবার সঙ্গে তিনিও যোগাযোগ রাখেননি। শুনেছেন, কয়েক বছর আগে তিনি মারা গিয়েছেন। এখন তাঁর মৃত্যুর নথি কোথায় পাবেন!

প্রশাসনিক ভবনের সামনে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল যুবতী বলতে থাকেন, ‘‘যাঁর আঙুল ধরে বড় হলাম, যাঁকে বাবা হিসাবে জানি, তাঁর নামই আমার সব নথিতে আছে। এখন জন্ম শংসাপত্রের নথির প্রমাণ হিসাবে প্রবীরবাবুর ডেথ সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। কোথায় পাব? যদি নাম কেটে যায়, কোথায় গিয়ে দাঁড়াব আমি?’’

রানাঘাট এসডিও অফিসে শুনানি শেষে বেরিয়ে আসছিলেন হাজিরা দিতে আসা লোকজন। যুবতীকে কাঁদতে দেখে ভিড় করেন তাঁরা। নথির ফেরে এমন অনিশ্চয়তার মুখে পড়া যুবতীকে কে কী সান্ত্বনা দেবেন, বুঝতে পারেননি।

তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কিন্তু কাগজ আর আবেগের লড়াইয়ে মানুর চোখের জল আপাতত নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছে না।

Advertisement
আরও পড়ুন