—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যে মহিলাদের ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ সংক্রান্ত বকেয়া মামলায় শীর্ষে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। সামগ্রিক বকেয়া মামলার নিরিখে কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা এগিয়ে থাকলেও মহিলা নির্যাতন ও ধর্ষণের বকেয়া মামলায় মুর্শিদাবাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাকি জেলাগুলি।
সরকারি নথি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদে মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত বকেয়া মামলা ক্রমে বাড়ছে। কলকাতায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ লক্ষ ৭ হাজার মামলা বকেয়া রয়েছে। তবে মহিলা নির্যাতনের মামলা বকেয়া মাত্র ৫৫৩টি। সেখানে মুর্শিদাবাদে প্রতি মাসে বকেয়া মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ২,২৫,৩৫৫টি। মহিলাদের উপর নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা বকেয়া রয়েছে জেলায় ৩৮,৩৫৯টি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা বকেয়া ২৮,৮৬৫টি, উত্তর ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যাটা ১৩,২৮৩। পড়শি জেলা নদিয়ায় নারী নির্যাতন সংক্রান্ত বকেয়া মামলা ১৪,৭২৪টি। বীরভূমে বকেয়া রয়েছে ৪,২৩০টি এ ধরনের মামলা।
সরকারি আইনজীবী সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহকুমা শহর হলেও ডোমকলে এখনও ফৌজদারি আদালত চালু হয়নি। বহু আদালতেই কর্মদিবসের সংখ্যা কমেছে। পাশাপাশি অভিযোগ ওঠে, থানাগুলিতেও আগে মামলা না নেওয়ার প্রবণতা ছিল। এখন তা কমেছে। মাসে গড়ে অন্তত ১০০টি করে মামলা হচ্ছে ধর্ষণ বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে। তাই এই জেলায় নারী নির্যাতনের বকেয়া মামলার সংখ্যা বাড়ছে।’’ ফৌজদারি মামলা জেলায় বকেয়া রয়েছে ১৮১,৭১৪টি। প্রতি মাসে জেলার আদালতগুলিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মামলার সংখ্যা। জুন মাসে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৮৫৮টি। নতুন মামলা রুজু হয়েছে ৪,৭১১টি। অর্থাৎ প্রতি মাসে এক হাজার করে মামলা বাড়ছে।
সুতির বাসিন্দা, আইনজীবী মলয় গুপ্ত বলেন, ‘‘বহু মামলা বকেয়া থাকছে পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারছে না বলে। মহিলা নির্যাতন মামলায় বিচারকের সংখ্যাও বাড়াতে হবে জেলায়।’’
মুর্শিদাবাদে অপরাধের হার তুলনামূলক বেশি। তার উপরে জাল টাকা, পাচার, মাদক কারবারের রমরমা। বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশও পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে মুর্শিদাবাদে। সুতি সীমান্তের বাসিন্দা অধ্যাপক সাধন দাস বলেন, ‘‘আগে ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটি হলে পাড়ার বয়স্করাই তা মিটিয়ে দিতেন। এখন সবেতেই রাজনৈতিক প্ররোচনা বেড়েছে। বেড়েছে মামলা করার প্রবণতাও।’’ সাগরদিঘির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের মতে, ‘‘মহিলা নির্যাতন, বিয়ে নিয়ে সমস্যা, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বেড়েছে জেলায়। তবে প্রথমে মামলা করা হলেও অনেক সময় পরে তা আপসে মিটিয়েও নেওয়া হচ্ছে।’’