Sahitya Akademi Award

৫২ বছর পরে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের তালিকায় কেউ নেই বাংলার! নেপথ্যে কি দিল্লি এবং বঙ্গ রাজনীতির টানাপড়েন?

সাহিত্য অকাদেমির তরফে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এ বার ২৩টি ভাষার সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দেশের সাহিত্য সম্মানের তালিকায় অকাদেমিকে উচ্চ গোত্রের বলেই মনে করে সাহিত্যমহল। সেই তালিকায় বাংলার কেউ নেই। ফলে এ নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৪:০৮
No Bengali writer received the 2024 Sahitya Akademi Award

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২০২৪ সালের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন না বাংলার কোনও সাহিত্যিক। দীর্ঘ ৫২ বছর পরে এমন ঘটনা ঘটল, যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে সাহিত্যমহলে। প্রশ্ন উঠছে, দিল্লি এবং বাংলার রাজনীতির ‘টানাপড়েনের’ কারণেই কি বাংলাকে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকতে হল?

Advertisement

কেন এ বার সাহিত্য অকাদেমি পেলেন না বাংলার কেউ? অকাদেমির সভাপতি মাধব কৌশিক বুধবার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘কিছু টেকনিক্যাল কারণে এ বার তা সম্ভব হয়নি।’’ কী ধরনের ‘টেকনিক্যাল কারণ’? এই প্রশ্নের জবাবে কৌশিক বলেন, ‘‘এ বিষয়ে বলতে পারবেন সংস্থার সচিব।’’ সাহিত্য অকাদেমির সচিব পদে রয়েছেন কে শ্রীনিবাস রাও। তাঁকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটস্‌অ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনও জবাব দেননি। তবে তাঁর এক ‘দূত’ ফোন করে জানতে চান, রাওয়ের কাছে কী জিজ্ঞাস্য রয়েছে? দূতের মাধ্যমেও রাওয়ের কাছে প্রশ্নটি জানানো হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি। জবাব এলে সেটি এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।

সাহিত্য অকাদেমির তরফে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এ বার মোট ২৩টি ভাষার সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দেশের সাহিত্য সম্মানের তালিকায় অকাদেমিকে উচ্চ গোত্রের বলেই মনে করে সাহিত্যমহল। ফলে সেই তালিকায় কেন বাংলার কেউ নেই, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। সাহিত্য অকাদেমিতে বাংলার যে কমিটি রয়েছে‌, তার আহ্বায়কপদে রয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এই প্রশ্নে ব্রাত্যেরও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দু’বছর আগে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ব্রাত্যও। উল্লেখ্য, গত বছরই বাংলা ‘ধ্রুপদী’ ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। সেই বাংলাই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার থেকে বাদ রইল।

এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক তথা সাহিত্য অকাদেমির পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন সচিব অংশুমান কর বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনে আমি স্তম্ভিত! যে বছর বাংলা ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেল, সেই বছরেই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বাংলা ভাষার মতো একটি শক্তিশালী এবং প্রাচীন ভাষার সাহিত্যকে দেওয়া হল না, এটাও বেদনার। বাংলা এর আগেও কেন্দ্রের দ্বারা নানা ভাবে বঞ্চিত হয়েছে।’’ অংশুমানের বক্তব্য, ‘‘বাংলা ভাষায় যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদের সকলের পক্ষ থেকে দাবি তুলছি, সাহিত্য অকাদেমি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক। টেকনিক্যাল যা ভুল হয়েছে তা সংশোধন করে নিয়ে ২০২৪ সালের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বাংলা ভাষায় দেওয়া হোক। সাহিত্য অকাদেমির কোনও একটি পুরস্কার নির্ধারিত সময়ের পরে দেওয়া হয়েছে, এমন উদাহরণ কিন্তু আছে।’’

গত দু’দিন ধরে দিল্লিতে সাহিত্য অকাদেমির উৎসব চলছে। সেখানেই গত বছরের সাহিত্যসৃষ্টির নিরিখে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, শেষ মুহূর্তে হলেও সিদ্ধান্ত বদল করবে সাহিত্য অকাদেমি। কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে নানা কারণ শোনা ষাচ্ছে সাহিত্যমহলে। কেউ বলছেন, এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল একটি মহল থেকে। কিন্তু দিল্লি তাতে সায় দেয়নি। আবার অনেকের বক্তব্য, বাংলা ভাষার প্রতি ‘অমর্যাদা’ করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আরও একটি মত রয়েছে। রাজ্যের যে বোর্ড রয়েছে তার এক সদস্যের কথায়, ‘‘সাহিত্য অকাদেমির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জুরি বোর্ড। সেখানে এক জন শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান। তাই স্থগিত করতে হয়।’’ তিনি আশাবাদী, পরে বাংলার কোনও সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে এর আগে ১৯৬০, ১৯৬৮ এবং ১৯৭৩ সালেও বাংলা থেকে কেউ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাননি৷ তার পরে প্রতি বছরেই বাংলার কারও না কারও নাম ওই পুরস্কারের তালিকায় থেকেছে। দীর্ঘ ৫২ বছর পর আবার বাংলার কেউ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন না।

Advertisement
আরও পড়ুন