SSC Recruitment Case Verdict

সকলের জন্য করেন, আমাদের জন‍্যও করে দেখান মুখ্যমন্ত্রী! বলছেন চাকরিহারারা, বিশেষ বার্তা সব রাজনৈতিক দলকেও

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মুহূর্তে সরে গিয়েছে পায়ের তলার মাটি। চাকরির যে নিশ্চিত আশ্রয় এত দিন ছিল, আর তা নেই। চাকরিহারাদের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে দেখা করবেন, জানিয়েছেন মমতা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫৪
People who lost jobs want CM Mamata Banerjee to do something for their jobs

আগামী সোমবার চাকরিহারাদের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে ইডি বা সিবিআইয়ের হানা হোক কিংবা আরজি করে ধর্ষণ-খুন, বার বার পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও বিচার চেয়ে, কখনও কেন্দ্রীয় সংস্থার অতি সক্রিয়তার বিরোধিতা করে। এমনকি দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসার কথাও বার বার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে। তাহলে নিজের রাজ্যে ২৬ হাজার মানুষ চাকরি হারানোর পর তিনি কি পথে নামবেন না? ঝাঁপিয়ে পড়বেন না? নেতাজি ইন্ডোরে মমতার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সেই বার্তাই দিতে চাইলেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে থাকবেন বলেই ভাবছেন সকলে। শুক্রবার থেকে জেলায় জেলায় তাঁদের বৈঠক শুরু হয়েছে। সার্বিক আলোচনার মাধ্যমে স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। রবিবার সন্ধ্যায় শহিদ মিনারে জমায়েত করে নিজেদের অবস্থান জানাবে চাকরিহারা শিক্ষকদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। সেখান থেকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হতে পারে রাজ্যের অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মুহূর্তে সরে গিয়েছে পায়ের তলার মাটি। সরকার পোষিত স্কুলে চাকরির যে নিশ্চিত আশ্রয় এত দিন ছিল, আর তা নেই। দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল। চাকরি বাতিল ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। এঁদের একাংশের সঙ্গেই সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। নবান্ন থেকে তিনি পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন, তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, আমি যাতে তাঁদের কাছে যাই। কথা শুনতে তো কোনও দোষ নেই। আমি তাঁদের কথা শুনতে যাব এবং বলতে যাব, ধৈর্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না।’’ মমতার এই বার্তায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না চাকরিহারারা। বরং তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চাইছেন। বলছেন, ‘‘যা করার করুন, আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিন।’’

চাকরিহারা শিক্ষকদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র কনভেনর মেহেবুব মণ্ডল শনিবার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় শহিদ মিনারে জমায়েত করে সাংবাদিক বৈঠক করব। এখনও কয়েকটি জেলায় আমাদের বৈঠক চলছে। কী ঠিক হল, রবিবার জানাব। তবে আমরা নেতাজি ইন্ডোরে যাব বলেই ভাবছি।’’

মুখ্যমন্ত্রীকে কী বলতে চান? মেহেবুব বলেন, ‘‘কোনও নেতা-মন্ত্রীকে যখন আক্রমণ করা হয়, ইডি বা সিবিআই যদি কারও বাড়িতে হানা দেয়, রাজ্যে যে কোনও ঘটনা ঘটলেই মুখ্যমন্ত্রী ঝাঁপিয়ে পড়েন। ধর্না, অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে দেন। আমাদের জন্যেও উনি ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আমরা এটাই বলতে চাই, রাজ্য সরকার যা করার করুক, সুপ্রিম কোর্টে তারা কী বলবে, কী রিভিউ পিটিশন জমা দেবে, কত আইনজীবী লাগাবে, আমাদের সে সব দেখার দরকার নেই। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে যে করেই হোক। তার জন্য যা দরকার করুন মুখ্যমন্ত্রী।’’

শুধু শাসক তৃণমূল নয়, অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও বার্তা দিতে চান চাকরিহারারা। মেহেবুবের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দলের মধ্যেই তো রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে অবিচারের প্রশ্নে তাঁরা সকলে একমত হয়েছেন। আমরা চাই, আমাদের জন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতা এক জায়গায় বসুন। তবেই তাঁদের উদারতা বোঝা যাবে। আমরা বিচার পাইনি। বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে আমাদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা সকলে মিলে করুন।’’

এসএসসির নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টে প্রমাণিত। কিন্তু কারা যোগ্য প্রার্থী আর কারা অযোগ্য প্রার্থী, তা বাছাই করা যায়নি। সেই কারণেই আদালত গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু চাকরিপ্রার্থীকে ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তদন্তে নেমে প্রচুর সাদা খাতা উদ্ধার করেছিল সিবিআই। এ ছাড়া, অনেকে প্যানেলের বাইরে থেকে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। সেই ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকিদের চাকরি গেলেও বেতন ফেরত দিতে হবে না। নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন বিজেপি এবং সিপিএমকে। বিরোধীরা আবার দুর্নীতির জন্য শাসকদলকে দুষছেন। যাঁরা চাকরি হারালেন, মমতার পাশে থাকার বার্তাকে তাঁদের অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী আরও আগে সক্রিয় হলে হয়তো এই পরিস্থিতি আটকানো যেত। মমতার সঙ্গে বৈঠকে এই চাকরিহারারা কী অবস্থান নেন, মুখ্যমন্ত্রীই বা তাঁদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, আপাতত সে দিকেই চোখ সকলের।

Advertisement
আরও পড়ুন